শনির দশা লেগেছে আর্জেন্টিনার!
সার্জিও রোমেরো ও ম্যানুয়েল লানজিনি। চোটের কারণে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। সঙ্গে যোগ হয়েছে এভার বানেগার ছিটকে পড়ার শঙ্কা। চোট পেয়েছেন এই মিডফিল্ডার। এ ছাড়া ইসরায়েলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটাও খেলেনি আর্জেন্টিনা। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের আগের সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না মেসিদের
বাছাইপর্বের কথা মনে আছে? খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে দলকে রাশিয়ার টিকিট পাইয়ে দেন লিওনেল মেসি। তাঁর সৌজন্যে বাছাইপর্বের ফাড়া কাটলেও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব শুরুর আগেই আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে যেন শনি ভর করেছে!
বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতিতে ঘাটতি রাখতে চায় না কোনো দলই। আর্জেন্টিনাও চায়নি, তাই হাইতি ও ইসরায়েলের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ রেখেছিল দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)। কথা ছিল, এ দুটি ম্যাচে প্রস্তুতি সেরে রাশিয়ায় পা রাখবেন মেসিরা। কিন্তু সেই প্রস্তুতিটা হয়েছে অর্ধেক—হাইতির বিপক্ষে মাঠে নেমেছে আর্জেন্টিনা দল কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ইসরায়েলের মুখোমুখি হওয়া সম্ভব হয়নি। আর তাই মেসিদের প্রস্তুতিটাও ঠিকমতো হয়নি।
এ তো গেল ম্যাচ-প্রস্তুতির ঘাটতি। আর্জেন্টিনার এই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হিসেবে যোগ হয়েছে স্কোয়াডে চোটের থাবা। প্রথমে ছিটকে পড়লেন সার্জিও রোমেরো, তারপর ম্যানুয়েল লানজিনি। সন্দেহ আছে এভার বানেগার খেলা নিয়েও। অর্থাৎ আর্জেন্টিনা তাঁদের গোলপোস্টে অতন্দ্র প্রহরী আর মাঝমাঠের এক ভরসাকে হারিয়েছে বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগেই। আসুন, দেখে নেই আর্জেন্টিনার ভুল কারণে শিরোনাম হওয়া খবরগুলো।
রোমেরোর পতন
রোমেরোর বিশ্বকাপ অভিষেক দক্ষিণ আফ্রিকা টুর্নামেন্টে (২০১০)। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের আগ পর্যন্ত সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন গোলপোস্টে নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন রোমেরো। পরের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তো টাইব্রেকার ঠেকিয়ে হলেন ম্যাচসেরা। ৩১ বছর বয়সী এই গোলরক্ষকের ওপর এবারও ভরসা রেখেছিলেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। কিন্তু রোমেরোর কপাল খারাপ। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা করে নেওয়ার পরদিন হাঁটুতে চোট পেলেন। এই চোটই তাঁকে ছিটকে ফেলল রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে।
ইসরায়েল ম্যাচ নিয়ে বিতর্ক
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে বেশির ভাগ দলই গা গরমের ম্যাচ খেলে থাকে। তবে এসব শুধু নামেই প্রস্তুতি কিংবা গা গরমের ম্যাচ। কোচদের কাছে এসব ম্যাচ তো আসলে খেলোয়াড়দের শেষবারের মতো ঝালাই করে নেওয়ার সুযোগ। হোর্হে সাম্পাওলি সেই সুযোগ পুরোপুরি পাননি। হাইতির বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটা ৪-০ গোলের জয়ে ভালোই আত্মবিশ্বাস কুড়িয়েছিলেন মেসি-হিগুয়েইনরা। পরের প্রস্তুতি ম্যাচটা ছিল ৯ জুন ইসরায়েলের বিপক্ষে।
ইসরায়েলের বিপক্ষে এই ম্যাচ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সহিংসতার প্রতিবাদে মেসিদের এই ম্যাচ না খেলার অনুরোধ জানিয়েছিলেন অনেকেই। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে বিশ্বকাপের আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটা বাতিল করতে বাধ্য হয় আর্জেন্টিনা। দলের খেলোয়াড়েরাই এই ম্যাচটা খেলতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। তাতে আর্জেন্টিনার প্রস্তুতিটা ঠিকমতো নেওয়া হলো না। এই ঘাটতি কি বিশ্বকাপে মেসিদের পারফরম্যান্সে ছাপ ফেলবে? সময় হলেই এ প্রশ্নের জবাব মিলবে। তবে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের আগে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ হাতছাড়া হলে মনের মধ্যে খচখচানিটা কিন্তু থেকেই যায়। তা ছাড়া এই রাজনৈতিক বিতর্কের প্রভাব দলে পড়াই স্বাভাবিক।
লানজিনি-ধাক্কা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় ধাক্কা। বিশ্বকাপে ম্যানুয়েল লানজিনিকে মাঝমাঠে রেখেই একাদশ সাজানোর পরিকল্পনা ছিল কোচ হোর্হে সাম্পাওলির। হাইতির বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের একাদশ দেখে অন্তত সেটাই মনে হয়েছে। লানজিনিকে শুরুতে মাঠে নামিয়েছিলেন সাম্পাওলি। সেদিন বেশ ভালো খেলেছিলেন ওয়েস্টহাম ইউনাইটেডের এই তরুণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। অর্থাৎ লানজিনিকে নিয়ে সাম্পাওলির ছক ঠিকপথেই এগোচ্ছিল।
কিন্তু গতকাল আবারও শনি ভর করে আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে। আর্জেন্টিনার অনুশীলনে ডান হাঁটুতে চোট পান লানজিনি। তাঁর হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপ তো বটেই এ বছর লানজিনির আর মাঠে নামার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাঁর ছিটকে পড়াটা মেসি-আগুয়েরোদের বুকে শেল হয়ে বিঁধেছে। লানজিনির ছিটকে পড়া নিশ্চিত হওয়ার পর বিমর্ষ সময় কেটেছে মেসিদের।
এবার বানেগাও?
চোটের কারণে এভার বানেগাও ছিটকে পড়লে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠে আর কে থাকে! শঙ্কাটা একেবারে অমূলক কিছু নয়। আর্জেন্টিনার অনুশীলনে পায়ের পেশিতে চোট পেয়েছেন বানেগা। পরপর দুটো অনুশীলন সেশনে অংশ নিতে পারেননি। আর্জেন্টিনা দল থেকে এখনো কোনো কিছু নিশ্চিত করা না হলেও শঙ্কাটা তাই থেকেই যাচ্ছে। লানজিনির পর সেভিয়ার এই মিডফিল্ডারও যদি ছিটকে পড়েন আর্জেন্টিনার মাঝমাঠে খেলা তৈরি করার মতো আর কে থাকে!