রোনালদো নাকি নেইমার - কোন কারণে রিয়াল ছাড়লেন জিদান?
>জিদান কেন রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়লেন? শুধুই কি ক্লান্তির কারণে; নাকি রোনালদোর ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনা, নেইমারের ক্লাবে আসার সম্ভাবনাও এতে প্রভাব রেখেছে!
হঠাৎ করেই ডাকা হলো জরুরি সংবাদ সম্মেলন। এরপরই সবাইকে থমকে দেওয়া সিদ্ধান্ত। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ পদে আর থাকবেন না জিনেদিন জিদান! খবরটার গুরুত্ব কত বেশি ছিল, সেটা বোঝাতে একটি তথ্য দেওয়া যাক। ঘোষণা আসার পর এ নিয়ে পরের দুই ঘণ্টা জিদানকে নিয়ে প্রায় ৮ লাখ টুইট করা হয়েছিল, সেটা শুধু ইউরোপিয়ান অঞ্চলেই!
টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। মাত্র আড়াই বছরে ৯টি শিরোপা এনে দিয়ে রিয়াল ছেড়ে গেছেন জিদান। কাল সংবাদ সম্মেলনে নিজের চলে যাওয়ার পক্ষে কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই কিংবদন্তি। তবে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের ধারণা, প্রায় সবাই জানেন এমন কিছু কারণেই রিয়াল ছাড়ছেন জিদান। চলুন দেখে নেওয়া যাক কারণগুলো—
কিংবদন্তি হিসেবে বিদায়ের সুযোগ
‘খেলোয়াড় হিসেবে এখানে আমার শেষটা ভালো হয়েছে এবং কোচ হিসেবেও সেটাই হয়েছে’—কাল সংবাদ সম্মেলনে ঠিক এ কথাটাই বলেছেন জিদান। কোচ হিসেবে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে। কোনো কোচের জন্য এর চেয়ে ভালো অবস্থায় বিদায় নেওয়ার উপলক্ষ আর কী হতে পারে! রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের আমলে এভাবে হাসিমুখে, সবাইকে চমকে নিয়ে বিদায় নেওয়ার সুযোগ পাননি কেউ। জিদান সেই সুযোগটা দুহাত ভরে নিলেন।
কারণ এটা রিয়াল মাদ্রিদ
চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতলে পেরেজই হয়তো জিদানকে বিদায় করে দিতেন। এটা গত তিন মাস ধরেই জানেন কোচ। ঘরোয়া ফুটবলে ব্যর্থতা সহজে মেনে নিতে পারে না এ ক্লাব। এত চাপ নিয়ে কাজ করতে করতে ক্লান্ত জিদান, ‘আমি যদিও আগামী মৌসুমে এখানে ম্যানেজার থাকতাম, তাহলে আমাদের জন্য খুব কঠিন হতো কোনো শিরোপা জেতা। এ মৌসুমে কোপাতেই দেখেছেন এটা । ঘরোয়া টুর্নামেন্টের কথা ভুলে যেতে পারেন না আপনি।’
আর খেলোয়াড়দের কাছ থেকে বাড়তি কিছু দাবি করতেও রাজি ছিলেন না জিদান। কারণ মাঠে এর চেয়েও বেশি চাপ নিয়ে খেলেন তারা, ‘আমি কীভাবে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও বেশি চাই? বড় খেলোয়াড়দেরও পরিবর্তন দরকার।’ জিদান আশা করছেন, নতুন কোচ এসে হয়তো বাড়তি কিছু আদায় করবেন রামোস-মার্সেলোদের কাছ থেকে।
রোনালদোর সঙ্গে ক্লাবের আচরণ
স্প্যানিশ কর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলা চলছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। ১৪.৮ মিলিয়ন ইউরো কর ফাঁকির জন্য রোনালদোর বিপক্ষে মামলা করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অথবা ২৮ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। রোনালদো চাইছেন এ অর্থ ক্লাবই দিক। কিন্তু পেরেজ তাঁর এ প্রস্তাবে রাজি হননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন রোনালদো। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল শেষে তাই রোনালদোর অমন ক্লাব ছাড়ার ইঙ্গিত। এ ছাড়া রোনালদোর সঙ্গে ক্লাব যেন নতুন চুক্তি করে, তা নিয়েও সব সময় সরব ছিলেন জিদান। রোনালদোর ক্যারিয়ার যেন রিয়ালে শেষ হয় সে চেষ্টাও করেছেন তিনি। কিন্তু বাজারে গুঞ্জন পেরেজ রোনালদোকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জিদানের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে এটা ভূমিকা রেখেছে।
নেইমারকে রিয়ালে আনার চেষ্টা
নেইমারে মজে আছেন পেরেজ। সেই ২০১১ সাল থেকেই ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দলে টানার চেষ্টা করছেন পেরেজ। পিএসজিতে যাওয়ার পর ছয় মাস পেরোনোর আগেই নেইমার ও রিয়াল নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গটা জিদান সব সময় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। নেইমার ভালো খেলোয়াড়, যেকোনো দলেই ভালো খেলবেন—এমন কথা বলেছেন । তবে এটাও বলেছেন, ‘আমি নেইমারকে চাইনি। নিজের খেলোয়াড়দের প্রতি বিশ্বস্ত জিদান পেরেজের নেইমার-নাটকের অংশ হতে চান না।’
দল বদলে পেরেজের সঙ্গে দ্বিমত
‘আমরা স্কোয়াডের শক্তি বাড়ানো নিয়ে কথা বলেছি এবং নতুন খেলোয়াড় আনা নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু এ কারণে আমি যাচ্ছি না কিন্তু কোচিং করতে চাইলে, এটাও তো কাজের অংশ। পরিবর্তন দরকার। কিন্তু আমি এর মধ্যে জড়াব না। আমি এ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে আসিনি।’
রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে জিদানের মতো কোচ আর হয়তো কখনো আসবে না। যে যুগে সবাই প্রতি মৌসুমেই প্রায় স্কোয়াডে তিন–চারজন তারকা এনে হাজির করে, সেখানে আড়াই বছরে জিদান বলতে গেলে নতুন কাউকেই আনেননি। তাঁর সময়ে সবচেয়ে দামি দলবদল ছিল আলভারো মোরাতাকে ক্লাবে ফিরিয়ে আনা। ব্রাজিলের বিস্ময়বালক ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোতে কেনা হলেও এখনো দলের সঙ্গে যুক্ত হননি তিনি। জিদান নিজের স্কোয়াড নিয়েই তৃপ্ত ছিলেন।
টানা দুই চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে একই একাদশ নামানোর রেকর্ডও তাঁর হয়েছে এ কারণেই। এই জানুয়ারিতে গোলরক্ষক কেপাকে দলে নিয়েই ফেলেছিলেন পেরেজ। কিন্তু নাভাসের জন্য জিদান সে দলবদলে রাজি হননি। বেনজেমার জন্য রবার্ট লেভানডফস্কির ব্যাপারেও আপত্তি জানিয়েছেন জিদান। তবে নতুন মৌসুমে রিয়াল স্কোয়াডে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতেন পেরেজ। রোনালদো-বেল-নাভাসের পরিবর্তে নতুন খেলোয়াড় আনতেনই সভাপতি। জিদান এটা মেনে নিতে রাজি নন বলেই সরে দাঁড়িয়েছেন!