রুনি-রাউলও তাঁর মতো কীর্তি গড়তে পারেননি
পরিস্থিতিটা একটা চিন্তা করে দেখুন।
ধরে নিন আপনার বয়স মাত্র উনিশ। খেলেন মোটামুটি অখ্যাত এক ক্লাবে। জীবনে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে নেমেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই, অভিষেক ম্যাচে এমন একটা কিছু করতে চাইবেন, যা দেখে ফুটবলপ্রেমীরা আপনাকে অনেক দিন মনে রাখে, তাই তো?
রেড বুল সালজবুর্গের তরুণ নরওয়ের স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রট হালান্ডের চোখেও সেসব স্বপ্নের মায়াঞ্জন থাকাই স্বাভাবিক। তবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হালান্ড যা ঘটিয়েছেন, গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া তা আর কেউ করতে পারেনি।
ঠিকঠাক হিসেব করলে মাত্র দুজন। তাও আবার বাঘা বাঘা দুজন কিংবদন্তি। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার রাউল গঞ্জালেস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক স্ট্রাইকার ওয়েন রুনি। এ দুজনের পর হালান্ডই চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে কম বয়সী তারকা হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন। হ্যাটট্রিকের সময় হালান্ডের বয়স ছিল ১৯ বছর ৫৮ দিন। রাউল আর রুনির বয়স ছিল যথাক্রমে ১৮ বছর ১১৩ দিন ও ১৮ বছর ৩৪০ দিন।
হালান্ডের এ হ্যাটট্রিকটা আরেকটু মহিমান্বিত হয়েছে আরও কিছু রেকর্ডের কারণে। তৃতীয় ‘কিশোর’ (টিনএজার) হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড গড়েছেন তিনি—রুনি ও নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ইয়াকুবু আয়েগবানির পর। তবে হালান্ড আবার তাঁর হ্যাটট্রিকটা করেছেন প্রথমার্ধেই। এই কীর্তি রুনি-রাউলেরও নেই!
হালান্ডের প্রতিভার বিচ্ছুরণ কিন্তু নতুন না। এবারের অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে হালান্ড কিছুদিন আগে একাই এক ম্যাচে করেছিলেন ৯ গোল। অর্থাৎ হ্যাটট্রিকেরও হ্যাটট্রিক! হন্ডুরাসের বিপক্ষে নরওয়েও জিতেছিল ১২-০ গোলে। এ মৌসুমেও রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে। গত জানুয়ারিতে যোগ দিয়েছেন বর্তমান ক্লাবে, এ পর্যন্ত এই মৌসুমে নয় ম্যাচ খেলে হালান্ড করেছেন ১৭ গোল। বানিয়ে দিয়েছেন আরও চার গোল। এর মধ্যেই চারটি হ্যাটট্রিক করে ফেলেছেন এ মৌসুমে। রোনালদো, মেসি, কেন, সালাহ, মানে, হ্যাজার্ড, এমবাপ্পে, নেইমাররাও যা করতে পারেননি। হালান্ডের দুরন্ত ফর্মে চড়ে লিগে এবার উড়ন্ত সূচনা করেছে সালজবুর্গ। তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য এর মধ্যেই বড় বড় দলগুলো ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিয়েছে।
>চ্যাম্পিয়নস লিগে মঙ্গলবার রাতে বেলজিয়ান লিগের চ্যাম্পিয়ন দল গেঙ্কের বিপক্ষে ৬-২ গোলে জিতেছে অস্ট্রিয়ার ক্লাব রেড বুল সালজবুর্গ। হ্যাটট্রিক করেছেন সালজবুর্গের তরুণ নরওয়ের স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রট হালান্ড। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার রাউল গঞ্জালেস আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক স্ট্রাইকার ওয়েন রুনির পর এত কম বয়সে চ্যাম্পিয়নস লিগে আর কেউ হ্যাটট্রিক করেননি
অনেক ফুটবল-পণ্ডিত এর মধ্যে হালান্ডের মধ্যে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোর ছায়া দেখতে শুরু করেছেন। আগুয়েরো গোল করার আগে বল যেভাবে নিয়ন্ত্রণে নেন, যেভাবে রক্ষণভাগকে পরাস্ত করে নিপুণ কৌশলে বলটা জালে জড়ান, হালান্ডের খেলার ধরনও ঠিক তেমন। নরওয়ের ফুটবল সাংবাদিক লার্স সিভার্টসনের মতে, আরও বড় লিগে খেলার যোগ্যতা রাখেন হালান্ড, ‘ও এখনো কেন অস্ট্রিয়ার লিগে পড়ে আছে আমি জানি না। মাত্র উনিশ বছর বয়সেই ছয় ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতা ওর। ওকে দেখলে মনে হয় বিরাট একজন সেন্টারব্যাক। কিন্তু আসলে ও একজন স্ট্রাইকার। আর যেমন-তেমন কোনো স্ট্রাইকার নয়, বেশ ভালো স্ট্রাইকার। শরীরের তুলনায় ওর গতি অনেক। একদম আদর্শ স্ট্রাইকারের মতো। শারীরিক গঠনে লম্বা চওড়া, কিন্তু তাও আদর্শ স্ট্রাইকারের মতো গতিশীল ও মুভমেন্ট অসাধারণ, এসব আপনি কাউকে শেখাতে পারবেন না। এগুলো ঈশ্বরপ্রদত্ত।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান ম্যানেজার ওলে গুনার সুলশার যখন নরওয়ের ক্লাব মল্ডের ম্যানেজার ছিলেন, হালান্ড তখন সে ক্লাবে খেলতেন। সাবেক শিষ্যকে নিজের নতুন ক্লাবে আবারও নতুন করে চাইতে পারেন নরওয়ের কিংবদন্তি। এ বার সালজবুর্গ লিভারপুলের গ্রুপে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলছে বলে হালান্ডকে ভালো করে দেখার সুযোগ পাবেন লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। এ ছাড়াও জুভেন্টাস, ডর্টমুন্ডের মতো ক্লাবগুলো তো আছেই।
তবে হালান্ড নিজে কিন্তু লিডস ইউনাইটেডের পাঁড় সমর্থক। ইংলিশ লিগের প্রথম বিভাগে এখন লিডস না খেললেও এককালে লিগের পরাশক্তি ছিল তারা। আর এর পেছনে কারণও আছে। হালান্ডের বাবা আলফ ইঙ্গ হালান্ড এককালে লিডসে খেলতেন, আর্লিং হালান্ডের জন্মও লিডসেই। লিডস ছাড়াও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলে গেছেন এ ডিফেন্ডার। খেলোয়াড়ি জীবনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে সহ্য করতে পারতেন না আলফ ইঙ্গ, ইউনাইটেডের অধিনায়ক রয় কিনের সঙ্গে তাঁর শত্রুতা ফুটবলীয় রূপকথাতে জায়গা করে নিয়েছে।
প্রতিভাধর খেলোয়াড়কে নিয়ে বড় ক্লাবগুলোর টানাটানির সংস্কৃতি তো আজকের নয়। দেখা যাক, সামনের মৌসুম থেকে এই রত্নকে কোথায় দেখা যায়!