যে লড়াইয়ে এক সঙ্গে লড়তে পারেন মেসি–রোনালদো
ইশ্, লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে যদি এক দলে খেলতে দেখতে পারতাম! এমন একটা ইচ্ছার কথা মাঝেমধ্যেই ফুটবলপ্রেমীদের বলতে শোনা যায়। মেসি যখন বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, একটা গুঞ্জন উঠেছিল আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে নিতে পারে জুভেন্টাস। বিশ্বজোড়া ফুটবলপ্রেমীরা তখন ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। মেসি-রোনালদোকে একই দলে খেলতে দেখার স্বপ্ন কি কখনো পূরণ হবে!
যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দলের তারকা মেগান র্যাপিনোও একটি স্বপ্ন দেখেন মেসি-রোনালদোকে নিয়ে। না, দুজনকে এক দলে খেলতে দেখার স্বপ্ন নয় সেটা। একটি লড়াইয়ে, যে লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আরও বেশি করে লড়তে দেখতে চান তিনি। লড়াইটা এখন ক্রীড়া বিশ্বের সবাই লড়ছে। যে যার মতো করে। মেসি-রোনালদোও এর বাইরে নন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ তাঁরাও। কিন্তু র্যাপিনো চাইছেন, নিজেদের তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মেসি-রোনালদো এ লড়াইটা আরও বেশি করে লড়ুন!
এমনিতেই সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য সুনাম আছে র্যাপিনোর। যুক্তরাষ্ট্রে নারী ফুটবলারদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের অন্যতম কুশীলবও তিনি। পুরুষ ফুটবলারদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়া নিয়ে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন র্যাপিনো। এবার তিনি কথা বলেছেন বর্ণবাদ বিরোধী লড়াইয়ে মেসি-রোনালদোর আরও বেশি ভূমিকা রাখা নিয়ে। র্যাপিনোর কথা, ‘তাঁরা যদি তাঁদের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চায় তাহলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও বেশি কিছু করতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রে গত মে মাসে পুলিশি হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের মৃত্যুর পর দেশটিতে প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়। যে ঝড় পরে ছড়িয়ে পরে পুরো বিশ্বে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে পুরো বিশ্বের মানুষ। আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগে খেলার জগতেও। ফুটবল থেকে টেনিস—সব খেলার খেলোয়াড়েরাই নিজেদের মতো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। ফুটবলে এখন এটা আনুষ্ঠানিকভাবেই করা হচ্ছে। ‘কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবনেরও মূল্য আছে’—এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই প্রতিটি ম্যাচের আগে হাঁটু গেড়ে বসেন খেলোয়াড়েরা।
র্যাপিনো অবশ্য বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইটাকে এই গণ্ডির মধ্যে আটকে থাকতে দেখতে চান না। আন্দোলনটা যেন শুধু দেখানোর জন্য না হয়, এমনটাই চাইছেন তিনি। লড়াইটা আরও বেশি করে সময়ের দুই সেরা ফুটবলার মেসি-রোনালদোই করতে পারেন বলে মনে করেন র্যাপিনো। লেকিপের সাময়িকীতে তিনি বলেছেন, ‘আমি কিন্তু “কৃষ্ণাঙ্গদের মানুষের জীবনেরও মূল্য আছে” টি-শার্ট পরে শুধু একাত্মতা প্রকাশ করার কথাই বলছি না। আমি আরও গভীরে গিয়ে আন্দোলনটা করার কথা বলছি।’
মেসি-রোনালদোর মতো তরুণদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফ্রান্সের স্ট্রাইকার বর্তমানে খেলছেন ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের দল পিএসজিতে। তাঁর দেশে তো ম্যাচের আগে হাঁটু গেড়ে বসে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থনও জানানো হয় না! কিন্তু এমবাপ্পে এর জন্য কী করতে পারেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে র্যাপিনো বলেছেন, ‘আশা করছি এমবাপ্পে বোঝে যে কতটা প্রভাব সে এ ক্ষেত্রে ফেলতে পারে।’
এমবাপ্পে কতটা প্রভাব রাখতে পারে এবং সেটা কীভাবে তাও বলে দিয়েছেন র্যাপিনো, ‘অমূল্য এক উপহার-সমৃদ্ধ হয়ে সে পৃথিবীতে এসেছে। যেটা দিয়ে সে পৃথিবীতে অসাধারণ আর খুব স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু তার নিজেকেই প্রশ্ন করা উচিত কীভাবে সে তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।’ এমবাপ্পেকে তাঁর নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে বোঝার পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে নারী বিশ্বকাপ জেতা ফুটবলার, ‘আশা করি এমবাপ্পে বুঝতে পারবে যে সে পৃথিবীটা বদলাতে পারে। কখনো কখনো আপনি নিজে থেকে পৃথিবী বদলে দেওয়ার কথা ভাবেন। কখনো কখনো এই ক্ষমতা আপনার হাতের মুঠোয় ধরা দেয়।’
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে খেলার জগতের অনেক তারকাই এর আগে কথা বলেছেন। এর মধ্যে আছেন এফওয়ান ড্রাইভার লুইস হ্যামিল্টন, বাস্কেটবল তারকা লেব্রন জেমস, ফুটবলার রাহিম স্টার্লিং আর টেনিস তারকা নাওমি ওসাকা। এঁদের সবাইকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন র্যাপিনো। তবে আলাদা করে বলেছেন ইউএস ওপেনে ওসাকার অভিনব প্রতিবাদের কথা, ‘নাওমি ওসাকা ইউএস ওপেনে খুন হওয়া কৃষ্ণাঙ্গদের নামের মাস্ক পরে কোর্টে এসেছে। এই যেমন টেলর, ফ্লয়েডদের নামের মাস্ক পরে।’