মেসিকে ধরে রাখার আগেই নতুন ঝামেলা হাজির বার্সায়

মেসিকে ধরে রাখতে পারবে বার্সা?ছবি: রয়টার্স

লিওনেল মেসিকে যেভাবেই হোক বার্সেলোনায় ধরে রাখবেন। নতুন করে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে হোয়ান লাপোর্তা এ কথাটা সব বার্সেলোনা সদস্যের মন গেঁথে দিয়েছেন। এর ফলও পেয়েছেন। করোনাকালেও বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচনের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটার হাজির হয়েছিলেন ভোট দিতে। বিপুল ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন মেসির উত্থানের সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়া লাপোর্তা।

নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই ক্লাবের হয়ে অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের সঙ্গী হতে চেয়েছিলেন লাপোর্তা। পিএসজির বিপক্ষের ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে হেরে যাওয়া বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে অবিশ্বাস্য কিছু করতে হতো। লাপোর্তা বলেছিলেন, তাঁর ক্লাব পারবে এই বিশ্বাস নিয়েই যাচ্ছেন প্যারিসে।

দারুণ খেললেও বার্সা পারেনি। লাপোর্তার শুরুটাও তাই রূপকথার মতো হয়নি। আর তাঁকে রূঢ় বাস্তবতায় টেনে নামিয়েছে আরেকটি ঘটনা। যে কারণে ক্লাব সভাপতি হিসেবে শপথটাও নিতে পারছেন না লাপোর্তা।

মেসির সঙ্গে পিএসজির নাম জড়িয়ে গুঞ্জন শোনা যায় নিয়মিত।
ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনার অর্থায়ন বিভাগের সহসভাপতি পদে এত দিন দায়িত্ব পালন করেছেন হাউমে জিরো। এই কাতালান আইনজীবী লাপোর্তার নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। লাপোর্তাকে আর্থিকভাবে আস্থা জুগিয়েছিলেন জিরো। লাপোর্তার নির্বাচনী প্রচারণায় অন্যতম অর্থ প্রদানদাতা হিসেবেও জিরোর নাম শোনা গিয়েছিল। সেই জিরো তাঁর পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বার্সেলোনায় নিজেই পদত্যাগ করে বসেছেন।

সুসম্পর্কে এমন উল্টো যাত্রায় স্বার্থের দ্বন্দ্বই প্রভাব রেখেছে। গতকাল শনিবার লাপোর্তার কাছেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দিয়ারিও আরা। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, নতুন বোর্ডে নিজের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না জিরো।

এ নিয়ে লাপোর্তার সঙ্গে মন-কষাকষি সম্পর্কে ছেদ টেনেছে দুজনের মধ্যে। এত দিন ক্লাবের অর্থায়ন বিভাগের সহসভাপতি পদে থাকা জিরো পদায়ন চাইছিলেন। নিজেকে বার্সেলোনার এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সবচেয়ে বড় কর্তা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন জিরো। কিন্তু এই আইনজীবীকে অর্থায়ন বিভাগের সভাপতি বানাতে রাজি হচ্ছিলেন না লাপোর্তা। আর এতেই পদত্যাগ করে বসেছেন জিরো। নতুন বোর্ডের সঙ্গে আর থাকতে রাজি নন তিনি।

ব্যক্তিগত এই রেষারেষিতে যে শুধু জিরোরই ক্ষতি হয়েছে তা নয়, বিপাকে পড়েছেন লাপোর্তাও। কিছুদিন আগেই জানা গেছে, বার্সেলোনার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দেনার পরিমাণ ১১৭ কোটি ইউরো ছাড়িয়েছে। স্পেনের যে চারটি ক্লাব এখনো বোর্ড সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়, বার্সেলোনা তাদের একটি। সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত ক্লাব যেন আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে না বসে, সেটা নিশ্চিত করতে একটি আইন চালু আছে দেশটিতে। আর সেটি হলো ক্লাবের বাজেটের অন্তত ১৫ ভাগ অর্থ ক্লাবের বর্তমান বোর্ড দেওয়ার ক্ষমতা রাখে—এটা নিশ্চিত করা।

বার্সেলোনার এই মৌসুমের ক্লাব বাজেটের ১৫ শতাংশ প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর কাছাকাছি। নতুন বোর্ডকে এই পরিমাণ অর্থের নিশ্চয়তা দিতে হবে স্প্যানিশ ফুটবলের কাছে। কিন্তু লাপোর্তার বোর্ডের অর্থ সংগ্রহের সব পরিকল্পনা করার কথা ছিল জিরোর।

বার্সার নতুন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা পড়েছেন উটকো ঝামেলায়।
ছবি: রয়টার্স

সেই জিরোই আচমকা সরে পড়ায় এখন শুধু তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করলেই চলছে না, নতুন করে ১২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো পূরণ করার চ্যালেঞ্জেও নামতে হবে লাপোর্তাকে। আর যতক্ষণ না তাঁর বোর্ড এটা করতে পারছে, লাপোর্তাও সভাপতি পদে শপথ নিতে পারছেন না।

এর আগে ২০০৩ সাল থেকে সাত বছর বার্সার সভাপতি পদে থাকা লাপোর্তা এবার ছয় বছরের জন্য দায়িত্ব পেয়ে ক্লাবে সোনালি সময় ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই নিজের ঘনিষ্ঠ কারও কাছ থেকে এমন ধাক্কা খাবেন, সেটা হয়তো ভাবতেও পারেননি বার্সার নবনির্বাচিত সভাপতি।