আগস্টে লিওনেল মেসি তখনো পিএসজিতে যোগ দেননি। গুঞ্জন চলছিল, নিশ্চিতভাবেই যোগ দিচ্ছেন সেখানে। তখন থেকেই পিএসজিতে মেসি, নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ত্রয়ী নিয়ে রোমাঞ্চে ভেসেছে ইউরোপের ফুটবলপ্রেমী দর্শকমন।
তুলনাও এসেছে। ২০১৭ সালে নেইমার বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়ার আগে কাতালান ক্লাবটিতে মেসি, নেইমার ও লুইস সুয়ারেজের ত্রয়ী অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়েছিল। অনেকের চোখে ফুটবলের মান, সৌন্দর্য আর গোলের সংখ্যা ও ধরন বিবেচনায় নিলে সর্বকালের সেরা ত্রয়ীই ছিল মেসি-নেইমার ও সুয়ারেজের ‘এমএসএন’।
সে জায়গায় পিএসজিতে হলো ‘এমএনএম’। মেসি আনুষ্ঠানিকভাবে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর শিহরণ ছড়িয়েছে মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পের এই ত্রয়ীর চোখধাঁধানো ফুটবলের সম্ভাবনা। পিএসজিতে এখনো তিনজন একসঙ্গে সেভাবে খেলতেই পারেননি বলে চোখধাঁধানোর সুযোগ তেমন পাননি। কিন্তু তা না হলেও তুলনাটা তো চলে আসে।
এবার ফরাসি সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবলে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সেই তুলনায় দুই ত্রয়ীর মধ্যে পার্থক্যটা তুলে ধরেছেন মেসি নিজেই।
কোন ত্রয়ী বেশি ভালো, সে তুলনা করার সময় এখনো আসেনি। বার্সেলোনায় লিওনেল মেসি, নেইমার আর লুইস সুয়ারেজের ত্রিরত্ন আলো ছড়িয়েছেন তিন মৌসুম। একটা চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দেওয়ার পাশাপাশি বার্সাকে তাঁরা লিগ জিতিয়েছেন দুবার। শিরোপা এক পাশে রাখুন, তিনজনের চোখধাঁধানো ফুটবল উপহার দেওয়া অনেক মুহূর্ত ফুটবলপ্রেমীদের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।
তিনজন মিলে তিন মৌসুমের প্রতিটিতেই অন্তত ১০০ গোল করেছেন। নিজেদের একসঙ্গে খেলার প্রথম মৌসুমেই বার্সেলোনাকে লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা দেল রের ‘শিরোপাত্রয়ী’ জেতানোর পথে গোল করেছেন ১২৫টি।
২০১৭ সালে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে নেইমারকে পিএসজি কেনার আগপর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪৫০ ম্যাচে এই ত্রয়ীর গোল ছিল ৩৬৪টি, এ সময়ে তিনজন গোল গড়ে দিয়েছেন আরও ১৭৩টি। ব্যক্তিগত হিসাবে গেলে এ সময়ে মেসির গোল ছিল ১৫৩টি, সুয়ারেজের ১২১টি, নেইমারের ৯০টি।
সে তুলনায় এমবাপ্পের সঙ্গে মেসি-নেইমারের সমন্বয় এখনো সেভাবে দেখারই সুযোগ মেলেনি। পিএসজিতে এই মৌসুমে মেসি যাওয়ার পর যে ত্রিরত্ন গড়ে উঠেছে, সেটির দেখা মিলেছেই মাত্র কয়েকটি ম্যাচে। এখন পর্যন্ত তিনজন একসঙ্গে মাঠে ছিলেন মাত্র ৪ ম্যাচে! তাতে তিনজনের মিলিত গোল মাত্র ২টি-মেসির ১টি, এমবাপ্পের ১টি! এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি এই ত্রয়ীর সমন্বয়।
তা পারফরম্যান্সে তুলনা এখনই করার দিব্যিই-বা কে দিয়েছে! বার্সেলোনায় তখন সময়ের সেরাদের তিনজন একসঙ্গে খেলেছেন, এখন পিএসজিতেও তা-ই। শুধু একটা নামের এদিক-সেদিক। সে কারণেই তুলনাটা এসেই পড়ে।
ফ্রান্স ফুটবলে মেসির সাক্ষাৎকারেও এসেছে। দুই ত্রয়ীর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়, এই প্রশ্নে প্রথমে মেসির সকৌতুক জবাব, ‘প্রথমত, বয়স (হাসি)! নেইমারের সঙ্গে যখন খেলা শুরু করেছিলাম, তখন বয়স আরও কম ছিল আমাদের। আর আজ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ হচ্ছে কিলিয়ান।’
এরপর মেসি তুলে ধরলেন দুই ত্রয়ীতে যে একটি নামের অদল-বদল, সেই দুই খেলোয়াড়ের দক্ষতার ভিন্নতা, ‘...তা ছাড়া, লুইস আর কিলিয়ান পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের খেলোয়াড়। লুইস একেবারে নিখুঁত নাম্বার নাইন, একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড, যে কিনা বক্সে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর, অনেক অনেক গোল করতে পারে।’
আর এমবাপ্পে? এর আগে আর্জেন্টিনা আর বার্সেলোনার জার্সিতে দুই দফায় তিনটি ম্যাচে এমবাপ্পেকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছেন মেসি। এর মধ্যে দুই ম্যাচে এমবাপ্পের ভয়ংকর গতির কাছেই হার মেনেছে মেসির আর্জেন্টিনা আর বার্সেলোনার বুড়িয়ে যাওয়া রক্ষণ।
২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে আর্জেন্টিনার ৪-৩ গোলের হারে এমবাপ্পে করেছিলেন জোড়া গোল। আর গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে পিএসজির জার্সিতে মেসির সাবেক ক্লাব বার্সেলোনাকে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলে হারানোর পথে প্রথম লেগে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এমবাপ্পে।
সেই এমবাপ্পেকেই এখন প্রতিনিয়ত অনুশীলনে, ম্যাচে পাশে পাচ্ছেন মেসি। সর্বশেষ দু-তিনটি ম্যাচে পিএসজির খেলা দেখে বোঝা গেছে, আক্রমণে মেসি ও এমবাপ্পের রসায়নটা জমেও উঠছে বেশ। চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে মেসির চোখধাঁধানো গোলের পথে শট নেওয়ার আগে এমবাপ্পের সঙ্গেই বল দেওয়া-নেওয়া করেছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড, পিএসজিতে যেটি মেসির প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র গোল।
এমবাপ্পেকে নিয়েও মুগ্ধতাই ঝরল মেসির কণ্ঠে, ‘কিলিয়ান আরেকটু বেশি সময় বল পায়ে রাখতে পছন্দ করে। ও অনেক শক্তিশালী, ভয়ংকর গতির একজন খেলোয়াড়। আপনি একটু একটু জায়গা ছেড়ে দিলেন, তো ও আপনাকে খুন করে ফেলতে পারে! কিলিয়ানও অনেক অনেক গোল করতে পারে। দুজনই অসাধারণ খেলোয়াড়, তবে দুজনের দক্ষতা অনেক ভিন্ন।’