মেসি জানালেন তাঁকে ছাড়া বার্সা কীভাবে চলবে

বার্সেলোনা ছাড়ছেন লিওনেল মেসিছবি: এএফপি

এমন একটা দিন একদিন না একদিন আসতই। তবে সে দিনটি লিওনেল মেসির অবসরের দিন হবে বলেই সবার কল্পনায় এসেছে বারবার।

এমন দিন এত দ্রুত চলে আসবে, বার্সেলোনা সমর্থকেরা ভাবেননি। ভাবেননি লিওনেল মেসিও। বার্সা আর মেসি যে একে অন্যের সমার্থক হয়ে গিয়েছিলেন, হয়তো পরিপূরকও। অথচ সেই মেসি ক্লাবে থাকতে চাইছেন, কিন্তু আর্থিক জটিলতায় বার্সা তাঁকে রাখতে পারছে না...এমন দিন কে কবে কল্পনা করেছিল! অকল্পনীয় ব্যাপারটাই এখন সত্যি। বার্সা আর মেসির পথ এখন আর এক নয়।

ক্লাবের বিবৃতিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আগেই এসেছে, আজ বার্সায় মেসির বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে শেষ আনুষ্ঠানিকতাটুকুও শেষ হলো। শুরু হয়ে গেল মেসি-উত্তর বার্সেলোনার দিন। কীভাবে চলবে সেই বার্সেলোনা? মেসির চোখে, তাঁকে ছাড়া চলতে বার্সার সমস্যা হবে না!

গত ১২-১৩ মৌসুমের চেনা অভ্যাসটা বদলাতে হবে বার্সাকে, এ-ই যা! বার্সার মূল দলে মেসি খেলেছেন ১৭ মৌসুম, এর মধ্যে গত ১৩ মৌসুমে বার্সার সবকিছুর কেন্দ্রেই তো ছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। বার্সার গোল লাগবে? মেসিই ভরসা! গোল গড়ে দিতে হবে? মেসির দিকেই চোখ। আক্রমণে প্রাণ জোগানোর দায়িত্ব? মেসিরই ছিল। মেসির ওপরই বার্সা অতিনির্ভরশীল ছিল কি না, এমন প্রশ্ন গত এক দশকে কত শত-সহস্রবারই তো উঠেছে।

সেই মেসি বার্সা ছাড়ছেন আর বার্সার তেমন সমস্যা হবে না? বাস্তবতা তেমন কিছু ভাবতে দেয় না। তবে গত বৃহস্পতিবার বার্সার পক্ষ থেকে মেসির বিদায়ের ঘোষণা দেওয়া বিবৃতি আসার পরের দিন ক্লাব সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা বলে দিয়েছিলেন আপ্ত একটা বাক্য—ক্লাবের চেয়ে কোনো ব্যক্তি বড় নয়। আজ সংবাদ সম্মেলনে মেসিও তা-ই বললেন।

বিদায়বেলায় মেসির পাশে ছবি তুললেন সতীর্থরা। থাকল বার্সায় তাঁর জেতা ট্রফিগুলোও
ছবি: টুইটার

তাঁকে ছাড়া বার্সা কীভাবে চলবে, প্রশ্নে মেসির উত্তর, ‘বার্সার দলটা দারুণ। অসাধারণ অনেক খেলোয়াড় আছে। আরও খেলোয়াড় আসবে। খেলোয়াড় তো আসবে-যাবে। লাপোর্তা যেটা বলেছেন সেটাই সত্যি—ক্লাব যে কারও ওপরে।’

মানুষও মেসিহীন বার্সার সঙ্গে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেবে বলে মনে হচ্ছে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের, ‘মানুষ এর সঙ্গে মানিয়ে নেবে। শুরুতে হয়তো একটু অদ্ভুত লাগবে, তবে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’

বার্সা না হয় আস্তে আস্তে মানিয়ে নিল, বার্সাকে ছাড়া মেসি কীভাবে মানিয়ে নেবেন? তাঁর পুরো পেশাদার ক্যারিয়ার, বলতে গেলে তাঁর পুরো জীবনই তো এখানেই কেটেছে।

বার্সেলোনায় যখন একসঙ্গে খেলতেন মেসি ও নেইমার। পিএসজিতে আবার এক হচ্ছেন দুজন?
ছবি: সংগৃহীত

মেসি চ্যালেঞ্জটা নিতে প্রস্তুত, ‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি এই ক্লাবটা, এই জায়গাটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমার জীবন পুরো বদলে যাচ্ছে। এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। বড় বদল এটা, আমার পরিবারের জন্যও এই শহর ছেড়ে যাওয়া কঠিন হবে। তবে আমরা ঠিকঠাকই থাকব। কঠিন চ্যালেঞ্জ এটা, তবে এটা মেনে নিতেই হবে, নতুন করে শুরু করতে হবে।’

সেই নতুন অধ্যায়টা পিএসজিতেই হতে যাচ্ছে বলে যত গুঞ্জন। যেখানেই হোক, নতুন ক্লাবে ফুটবল শুরু হলেই বার্সা ছাড়ার ধাক্কা মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে মেসির, ‘সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর গত কয়েক দিন খুব বেদনার ছিল। এখন যখন আমি বাড়ি ফিরব, সবকিছু আরও খারাপ লাগবে। তবে এই মুহূর্তটাতে আমার পরিবারের আরও কাছে থাকা দরকার, যাঁদের ভালোবাসি তাঁদের সঙ্গ দরকার। ফুটবল খেলে যাওয়া দরকার, যে কাজটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। একবার ফুটবল খেলতে শুরু করলে সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’