মিলিয়ে নিন শেষ আটের সমীকরণ
>রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের লাইনআপ চূড়ান্ত! প্রত্যাশিতভাবেই এতে কয়েকটি বড় দল থাকলেও অপ্রত্যাশিতভাবে শেষ আটের আগেই বিদায় নিয়েছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন, পর্তুগালের মতো দল। ৬ জুলাই থেকে শেষ আটের লড়াই শুরু হওয়ার আগে সম্ভাবনার সমীকরণ মিলিয়ে দেখা যাক
ব্রাজিল-বেলজিয়াম
এই ম্যাচটি শেষ আটের সবচেয়ে ‘হাই ভোল্টেজ ম্যাচ’—এটা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বকাপের দুই হট ফেবারিটের মুখোমুখি লড়াইটা জিবে পানি আনার মতোই। ম্যাচে দুই দলের জয়ের সম্ভাবনাই সমান। কিন্তু অভিজ্ঞতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে বেলজিয়াম থেকে অনেক এগিয়ে থাকছে ব্রাজিল। দলীয় শক্তিতে দুই দলই সমান। গোলকিপিং থেকে শুরু করে রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণ—সব জায়গাতেই দুই দলে প্রতিভার ছড়াছড়ি। দুই দলই নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে উঠেছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে সহজেই হারিয়েছে ব্রাজিল। জাপানের সঙ্গে বেলজিয়ামের ম্যাচটা ছিল রোমাঞ্চে ভরা। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ৩-২ গোলে জিতে শেষ আটে এসেছে বেলজিয়াম।
নেইমার, কুতিনহোদের দারুণ ফর্ম ব্রাজিলকে আশা জোগাচ্ছে। এডেন হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইনারা আছেন বেলজিয়ামের ভরসা হয়ে। নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেললে ব্রাজিল-বেলজিয়ামের ম্যাচটি বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্যাচই হতে যাচ্ছে।
ফ্রান্স-উরুগুয়ে
বিশ্বকাপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত ফ্রান্স। নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেই শেষ আটে এসেছে ফরাসিরা। শেষ ষোলোতে চ্যাম্পিয়ন হয়েই উঠেছেন এমবাপ্পে, পগবারা। মেসির আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারানোর ম্যাচটি নিজেদের দারুণভাবেই চিনিয়েছে তারা। ম্যাচটি ছিল এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। এই ম্যাচেই বোঝা গেছে, এমবাপ্পে হতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের বড় ভরসা।
তাঁর জোড়া গোলেই আর্জেন্টিনা উড়ে গিয়েছিল সেদিন।অন্যদিকে শেষ আটে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল। দুর্দান্ত রক্ষণ ও অসাধারণ আক্রমণভাগ নিয়ে উরুগুয়ে যেকোনো দলের জন্যই হুমকি। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে উঠেছিল তারা।
পর্তুগালের বিপক্ষে সেই ম্যাচটিতে নিজেদের দুর্দান্তরূপেই চিনিয়েছে সুয়ারেজ-কাভানিরা। এ ম্যাচে কাভানির পারফরম্যান্স আরও আশাবাদী করে তুলেছে উরুগুয়েকে। ফ্রান্স-উরুগুয়ে ম্যাচে তাই কাউকে আগেভাগে ফেবারিট হিসেবে ধরে নেওয়া যাচ্ছে না।
ইংল্যান্ড-সুইডেন
বিশ্বকাপে দুর্ভাগ্যই সব সময় সঙ্গী হয় ইংল্যান্ডের। কিন্তু এবার সেই দুর্ভাগ্যকে পেছনে ফেলেছে তারা। শেষ ষোলোর ম্যাচে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে তারা। এবারের বিশ্বকাপ কি ইংল্যান্ডের জন্য পয়া? ইতিহাস কি নতুন করে লিখবে তারা? শেষ আটে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ সুইডেন। নিজেদের ফুটবল ঐতিহ্য, সংস্কৃতির জন্যই এগিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথে তারা খেলেছেও দুর্দান্ত। নিজেদের গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে উঠলেও ইংল্যান্ডের খেলা মন ভরিয়েছে সবার। দলের অধিনায়ক হ্যারি কেইন এবারের বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জেতার সবচেয়ে বড় দাবিদার। ৬ গোল করেছেন ৩ ম্যাচেই। সুইডেনের বিপক্ষেও তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড।
সুইডেনকে হিসাব থেকে বাদ দিলে কিন্তু ভুলই হবে। জার্মানির গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় উঠেছিল সুইডেন। আর জার্মানি পেরোতেই পারেনি প্রথম পর্বের বাধা। সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ আটে এসেছে সুইডেন। ১৯৫৮ সালে একবারই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা সুইডেন নিজেদের বিশ্বকাপ-সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে ইংলিশদের বিপক্ষে মরিয়া হয়েই ঝাঁপাবে।
রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া
বিশ্বকাপের সবচেয়ে নিচের র্যাঙ্কিংয়ে দল স্বাগতিক রাশিয়া। রুশরা প্রথম পর্বের বাধা পার হতে পারবে কি না, সেটি নিয়েই ছিল সংশয়। তারা শেষ ষোলোতে এসেছে দাপট দেখিয়েই। সৌদি আরবকে ৫-০ আর মিসরকে ৩-১ গোলে হারানো রাশিয়া শেষ ম্যাচে আটকে গিয়েছিল উরুগুয়ের বিপক্ষে। শেষ ষোলোতে বাজিমাতই করেছে তারা ফেবারিট স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে। এই ম্যাচের পর রাশিয়াকে নিয়ে কিছুটা বাজি ধরতেই হচ্ছে। ম্যাচটি পেনাল্টি শুটআউটে গেলে অভিজ্ঞ গোলরক্ষকের কারণে রাশিয়ার সম্ভাবনা কিন্তু থাকবেই।
রাশিয়ার প্রতিপক্ষ কিন্তু বেশ কঠিনই। বিশ্বকাপে দলগতভাবে সবচেয়ে ভালো ফুটবলটা খেলেছে ক্রোয়েশিয়াই। গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জিতেই শেষ ষোলোতে উঠেছিল ক্রোয়াটরা। দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে বিধ্বস্ত করেছে ৩-০ গোলে। শেষ ষোলোতে ডেনমার্ককে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। ইভান রাকিতিচ, লুকা মডরিচের মতো দুজন বিশ্বসেরা মিডফিল্ডারই ক্রোয়েশিয়ার বড় শক্তি।