মাঠে ঢুকে ভিলা গোলকিপারের মাথায় তিনবার আঘাত সিটি সমর্থকের

ভিলার জার্সিতে কালই প্রথম খেলতে নেমেছেন ওলসেনছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক অধিনায়ক ব্যাপারটা মানতেই পারছেন না। ম্যানচেস্টার সিটি সমর্থকদের ‘গর্দভ’ আখ্যা দিয়েছেন। জানিয়েছেন তাঁর শঙ্কার কথা, এভাবে চলতে থাকলে কোনোদিন মাঠে ঢুকে খেলোয়াড়কে ছুরিকাঘাতও করে বসতে পারেন কোনো সমর্থক!

ইংল্যান্ডে কিছুদিন ধরেই দলের অর্জনে উন্মাতাল সমর্থকদের মাঠে ঢুকে পড়া বিতর্ক ছড়াচ্ছে। বিতর্কে নবতম সংযোজন গতকাল প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর ম্যানচেস্টার সিটি সমর্থকদের মাঠে ঢোকা। কিন্তু শুধু মাঠে ঢুকলেই হয়তো বিতর্ক এত রং চড়ত না, প্রতিপক্ষ অ্যাস্টন ভিলার গোলকিপার রবিন ওলসেনের মাথায় তিনবার আঘাতও করেছেন কয়েকজন সিটি সমর্থক।

ভিলা কোচ স্টিভেন জেরার্ড এ নিয়ে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেছেন, সিটি পরে বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়েছে। দোষীদের ধরা গেলে তাঁদের অনির্দিষ্টকালের জন্য স্টেডিয়ামে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে। ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি বড় শাস্তির প্রতিশ্রুতি ছিল সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার কণ্ঠেও।

তবে ক্ষমাপ্রার্থনা আর প্রতিশ্রুতিতেই তো সব শেষ হয়ে যায় না! টিভিতে বিশ্লেষণে এ নিয়ে সমালোচনা ঝরেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুই সাবেক খেলোয়াড় গ্যারি নেভিল ও রয় কিনের কণ্ঠে। কিন জানিয়েছেন তাঁর শঙ্কার কথা।

দারুণ রোমাঞ্চ ছড়ানো সিটি-লিভারপুল শিরোপাদৌড় গতকাল শেষ দিনে আরও রং-রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে। লিভারপুল নিজেদের ম্যাচে জিতলে সিটিকে জিততেই হবে—এমন ম্যাচে ৭৫ মিনিটেও দুই গোলে পিছিয়ে ছিল সিটি, সেখান থেকে সাড়ে পাঁচ মিনিটের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ৩-২ গোলে ম্যাচ জিতে শিরোপাও সিটির—পাঁচ মৌসুমে চতুর্থ। এমন দিনে সিটি সমর্থকদের উন্মাতাল হওয়ারই কথা।

কিন্তু তাই বলে এভাবে মাঠে নেমে পড়তে হবে! মাঠে নামলেও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে আঘাত করতে হবে! ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সব মিলিয়ে ওলসেনের মাথায় পাঁচবার আঘাত লেগেছে। ইংলিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানাচ্ছে, এর মধ্যে তিনবার ইচ্ছাকৃত বলে মনে হচ্ছে। ওলসেন সেভাবে কোনো চোট পাননি, তবে প্রথমে ভিডিওতে দেখে মনে হয়েছে, মাথায় আঘাতের কারণে তিনি ব্যথা পেয়েছেন। এরপর দ্বিতীয়বার আবার তাঁর মাথায় আঘাত করেন এক সিটি সমর্থক, আরেকজন এসে পিঠে ধাক্কা দেন ওলসেনকে।

ভিলা কোচ স্টিভেন জেরার্ডকে ম্যাচের পর প্রশ্ন করা হয়েছিল, সমর্থকেরা ওভাবে মাঠে ঢুকে পড়ার পর তাঁর সব খেলোয়াড় নিরাপদে মাঠ থেকে বেরোতে পেরেছেন কি না? তাতে জেরার্ডের উত্তর, ‘আমার গোলকিপার আক্রমণের শিকার হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নটা ম্যানচেস্টার সিটি আর পেপকে (গার্দিওলা) করা উচিত।’ ভিলা পরে অবশ্য বিবৃতিতে লিখেছে, ওলসেন ‘পুরোপুরি ঠিক আছেন।’ কোনো অভিযোগ তারা করবে না বলেও জানিয়েছে ক্লাবটি।

সিটির শিরোপা নিশ্চিত হতেই মাঠে নেমে পড়েন সমর্থকেরা
ছবি: রয়টার্স

সিটিও এর কিছুক্ষণ পরই বিবৃতিতে ওলসেনের কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখেছে, ‘ক্লাব সঙ্গে সঙ্গেই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। অপরাধীদের শনাক্ত করা গেলে তাঁদের অনির্দিষ্টকালের জন্য স্টেডিয়ামে ঢোকা থেকে নিষিদ্ধ করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে সিটি কোচ গার্দিওলাও ক্ষমা চেয়েছেন, ‘আমি খুবই দুঃখিত। ক্লাবের পক্ষ থেকে আমি ওলসেন ও অ্যাস্টন ভিলার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমার মনে হয় না, তারা এটা ইচ্ছা করে করেছে। এখানে তো আসলে মানুষের আবেগ জড়িত। মানুষ কেন এমন করে, নিজেদের মতো করে উদ্‌যাপন না করে কেন এ ধরনের কিছু করে আমি বুঝতে পারি না। আশা করি আমরা ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারব এবং তাকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে।’

সমর্থকদের এভাবে মাঠে ঢুকে পড়ার রাস্তা বন্ধ করার কোনো উপায়ও জানা নেই সিটি কোচের, ‘আপনি তো আর এক হাজার গার্ড দিয়ে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আমরা খুবই দুঃখিত। আজকের দিনের খারাপ খবর এটি।’

এমন খারাপ খবর ইংল্যান্ডের ফুটবলে গত এক সপ্তাহে নিয়মিতই এসেছে। এভারটনের মাঠে এভাবে দর্শকের ভিড়ে ক্রিস্টাল প্যালেস কোচ প্যাট্রিক ভিয়েরা এক সমর্থককে আঘাত করেছেন, নিচের স্তরের লিগে পোর্ট ভ্যাল, নটিংহাম ফরেস্টের সমর্থকেরা দলের অর্জনের উদ্‌যাপনে মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে সিটির মাঠে এমন ঘটনা।

অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পর শিরোপা জিতেছে সিটি
ছবি: রয়টার্স

সব দেখে রয় কিনের শঙ্কা, ‘কোনো একদিন একজন খেলোয়াড় বা কোচ গুরুতরভাবে আহত হবে! কেউ যদি মাঠে নেমে একজন খেলোয়াড়কে আঘাত করার মতো পাগলাটে হতে পারে, তাহলে খেলোয়াড়কে ছুরি মেরে বসার মতো পাগল কেউও থাকতেই পারে। জঘন্য কিছু একটা কোনোদিন ঘটে যাবে।’

সমর্থকদের এমন আচরণের পেছনে করোনাকালে স্বভাবে-আচরণে বদলই দায়ী বলে মনে হচ্ছে কিনের, ‘আমার মনে হয় কোভিড আসার পর, মানুষ যখন কোভিড থেকে (স্বাভাবিক জীবনে) আবার ফিরে এল, ওরা ভুলেই গেছে কোথায় কী করা উচিত বা উচিত নয়। গর্দভের দল।’

স্কাই স্পোর্টসের অনুষ্ঠানে কিনের সঙ্গী ইউনাইটেডের আরেক সাবেক গ্যারি নেভিলও সমর্থকদের এভাবে মাঠে নেমে পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠতে দেখে শঙ্কিত, ‘কী হচ্ছে এসব? গত অসাধারণ ৩০টি বছরে আমরা ইংলিশ ফুটবলে গ্যালারির বেষ্টনী নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করেনি। ১০০ বারের মধ্যে ৯৯ বারই সমর্থকেরা এই ব্যাপারটাকে সম্মান দেখান যে আপনি চাইলেই মাঠে নেমে পড়তে পারেন না, কারণ এখানে একটা পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শিশু-কিশোর মাঠে আসে, অনেক বেশি নারী মাঠে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত কয়েক সপ্তাহে, কয়েক মাসে আমরা দেখছি, এই গর্দভেরা হুটহাট মাঠে নেমে পড়ছে।’

স্কাই স্পোর্টস জানাচ্ছে, ব্রিটিশ পুলিশ এর মধ্যেই গতকাল মাঠে যাওয়া দুই সিটি সমর্থককে আটক করেছে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মাঠে পাইরো (ধোঁয়া বোমা) ছুড়ে মেরেছেন। অন্যজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মাঠে ঢুকে পড়ার। তবে ওলসেনকে আঘাত করা সমর্থকদের খুঁজে পেতে এখনো দুই ক্লাবের সাহায্য নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।