ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনালের আগে নির্বিকার ছিলেন মেসি
আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকার জয়ের বছর গড়াতে চলল। ইউরোজয়ী ইতালির বিপক্ষে আন্তমহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বসূচক লা ফিনালিসিমা জয়ও এখন ১০ দিন আগের ঘটনা। কিন্তু এই দুই শিরোপা নিয়ে আর্জেন্টাইনদের উচ্ছ্বাস যেন শেষই হচ্ছে না। বিশ্বকাপের বছরে আগের শিরোপা নিয়ে এত মাতামাতি শুনে আর্জেন্টিনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয়তো নেইমারের মতোই মনে হতে পারে, আর্জেন্টিনা কি বিশ্বকাপ জিতে গেছে!
তা অন্যদের যা-ই মনে হোক, আর্জেন্টিনা এখনো উদ্যাপন করেই চলেছে। আর্জেন্টাইন টিভি তেলেফে-তে মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পলের কথা শুনে আবারও সেটিই মনে হতে পারে। ব্রাজিলের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার ফাইনালের আগে কী হয়েছিল, মেসি কী করেছিলেন...এসব নিয়ে কথা বলেছেন দি পল। পাশাপাশি মেসির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, আর্জেন্টিনা দল তাদের কোচ লিওনেল স্কালোনির কথা কীভাবে মেনে চলে, সেসবও বিশদ বর্ণনা করেছেন আতলেতিকো মাদ্রিদে খেলা আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার।
যদি সকাল ১০টায় এসে স্কালোনি আমাদের বলেন “গুড নাইট”, আমাদের কাছে তাহলে তখনই রাত
কোপা আমেরিকা থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব আর লা ফিনালিসিমায় আর্জেন্টিনার সাফল্যের পথে মূল কারিগরদের একজন দি পল। মাঝমাঠে লো সেলসো, লিয়ান্দ্রো পারেদেসদের সঙ্গে তাঁর জুটি জমেছে বেশ।
মাঠের বাইরে-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেসির আশপাশেই যেমন তাঁকে দেখা যায়, তেমনি মাঠেও মেসির সঙ্গে তাঁর সমন্বয়টা চোখে পড়ে। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে যেমন তাঁর জুড়ি নেই, তেমনি খেলা গড়ে দিতেও জানেন। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারানোর পথে আর্জেন্টিনার একমাত্র গোলটি করেছিলেন আনহেল দি মারিয়া। তবে মাঝমাঠ থেকে দারুণ পাসে গোলটি গড়ে দিয়েছেন দি পলই।
এত কিছুর সঙ্গে যোগ করে নিন বাচনে-ভঙ্গিতে দি পলের নেতাসুলভ আচরণ। সব মিলিয়ে দ্রুত আর্জেন্টাইনদের প্রিয় হয়ে উঠেছেন ২৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। এই মুহূর্তে ক্লাব ফুটবলে ব্যস্ততা নেই, আর্জেন্টিনারও আপাতত ম্যাচ নেই। ছুটির সময়ে আর্জেন্টিনায় টিভি চ্যানেল তেলেফে-তে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে মেসিকে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হয়েছে।
অধিনায়ককে নিয়ে বলতে গিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন দি পল, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনালের দিন মেসিকে দেখলাম মাতে (দক্ষিণ আমেরিকান গরম পানীয়) পান করতে, তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন কিছুই হয়নি। বিশ্বাসই হচ্ছিল না। তাঁর জন্য ওই দিনটা ছিল ‘‘অল অর নাথিং’’ আর তিনি কিনা সব সময় যেমন থাকেন, তেমনই ছিলেন। তাঁকে দেখে সেদিন মনে হচ্ছিল, “আজ মাঝামাঝি কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। ভালো হলে ইশ্বরতুল্য হয়ে যাবেন, খারাপ কিছু হলে নরকের যন্ত্রণা সইতে হবে।” কোপা আমেরিকাটা তাঁর অসাধারণ কেটেছে।’
মেসির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সম্পর্ক কেমন, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন দি পল, ‘লিওর সঙ্গে প্রথম মুহূর্ত থেকেই সবকিছু সহজ ছিল। (খেলোয়াড় হিসেবে) আগে থেকেই ভালো লাগত, এখনো লাগে। মানুষ হিসেবে এখন আরও বেশি পছন্দ করি।’ তাঁর কাছ থেকে আর্জেন্টিনা দলে সবার আগে ঘুম থেকে ওঠা তিন খেলোয়াড়ের নামও জানা গেল, ‘সকালে আমরা একত্র হয়ে পাপুর (আলেহান্দ্রো গোমেজ) সঙ্গে মিলে মাতে পান করি। আমরাই সবার আগে উঠি।’
শুধু মেসি নয়, আর্জেন্টিনায় এখন লিওনেল স্কালোনির বন্দনাও চলে জোরেশোরে। চলবে না-ই বা কেন! ২০১৮ বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্নের পর তরুণ প্রতিভাবানদের দলে সুযোগ দিয়েছেন, মেসি-দি মারিয়াদের নিয়ে আর্জেন্টিনা দলে পালাবদল সামলে দলটাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন। কোপা আমেরিকা আর ফিনালিসিমা তো জিতিয়েছেনই, সে পথে স্কালোনির আর্জেন্টিনা অপরাজিতও আছে টানা ৩৩ ম্যাচে।
এতকিছু হয়তো সম্ভব হতো না মেসি-দি পলদের এতটা সম্মান স্কালোনি আদায় করে নিতে না পারলে। কোচকে আর্জেন্টিনা দলের সবাই কতটা সম্মান করেন, সেটি বোঝা যায় দি পলের কথায়, ‘যদি সকাল ১০টায় এসে স্কালোনি আমাদের বলেন “গুড নাইট”, আমাদের কাছে তাহলে তখনই রাত।’