খুব বেশি দুশ্চিন্তা ব্রাজিলের ছিল না ম্যাচটাকে ঘিরে। শেষ আটে যাওয়ার সমীকরণ সহজই ছিল, সৌদি আরবও প্রতিপক্ষ হিসেবে তেমন কঠিন নয়। সাইতামা স্টেডিয়ামে আজ অলিম্পিকে ছেলেদের ফুটবলের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটা ব্রাজিল জিতেছেও হেসেখেলেই। প্রথমার্ধে কিছুটা ভুগলেও দ্বিতীয়ার্ধে রিচার্লিসনের জোড়া গোলে ম্যাচটা ৩-১ গোলে জিতেছে দানি আলভেজের নেতৃত্বাধীন ব্রাজিল।
তবে গ্রুপের অন্য ম্যাচে বড় অঘটনই ঘটে গেল! গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়েছে ২০১৬ রিও অলিম্পিকের রানার্সআপ জার্মানি! কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে জিততেই হতো জার্মানদের, কিন্তু মিয়াগি স্টেডিয়ামে আইভরি কোস্টের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করতে পেরেছে জার্মানরা।
৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ব্রাজিল। ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হয়ে শেষ আটে আইভরি কোস্ট। ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় হলো জার্মানি। সৌদি আরব কোনো পয়েন্ট না পেয়ে গ্রুপে সবার নিচে থেকেই শেষ করল টোকিও অলিম্পিক।
তবে ব্রাজিল শেষ আটে ওঠার পর এখন কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল-স্পেন ম্যাচ হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
দূরতম সম্ভাবনাই বলতে হবে সেটিকে! গ্রুপে আজ নিজেদের শেষ ম্যাচে সাইতামা স্টেডিয়ামে স্পেনের বিপক্ষে খেলবে আর্জেন্টিনা। শেষ আটে উঠতে স্পেনের বিপক্ষে এই ম্যাচ জিততেই হবে আর্জেন্টিনাকে, হেরে গেলে বা ড্র করলেই বাদ পড়বে আর্জেন্টাইনরা। আর আর্জেন্টিনা কোনোভাবে জিতে গেলে সে ক্ষেত্রে সমীকরণের মারপ্যাঁচে আর্জেন্টিনা কিংবা স্পেনের গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে কোয়ার্টার ফাইনালের সূচিটাই এমন যে, আগামী শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ডি গ্রুপের শীর্ষে থাকা দলের বিপক্ষে খেলবে সি গ্রুপের দ্বিতীয় দল। ডি গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে ব্রাজিল তো ডি গ্রুপের সেরা হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল, আর্জেন্টিনা কিংবা স্পেনের মধ্যে কোনো দল সি গ্রুপে দ্বিতীয় হলেই কোয়ার্টার ফাইনালে মহারণের দেখা মিলবে। সেটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাই হোক কিংবা ব্রাজিল-স্পেন।
এবার অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার দলটা কাগজে-কলমে তেমন শক্তিশালী না হলেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ সব সময়ই বিশেষ কিছু, আর অন্যদিকে ব্রাজিলের পাশাপাশি স্পেন দলকে এবারের অলিম্পিকে ছেলেদের ফুটবলে সবচেয়ে শক্তিশালী মানা হচ্ছে।
তবে সে তো দূরের কল্পনা। ব্রাজিল আপাতত গ্রুপ পর্ব দারুণভাবে শেষ করার উদ্যাপন করতেই পারে। এর পাশাপাশি চলবে দল কোন দিকটিতে ভালো করেছে, কোনটি খারাপ—সেটির বিশ্লেষণও। আজ সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথমার্ধে যেমন ব্রাজিল ঠিক দাপট দেখাতে পারেনি।
আগের দুই ম্যাচের মতো ৪-৫-১ ছকে দল সাজিয়েছেন ব্রাজিলের অলিম্পিক দলের কোচ আন্দ্রে জার্দিন। মূল স্ট্রাইকার রিচার্লিসন, তাঁর পেছনে তিন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ক্লদিনিও, মাতেউস কুনিয়া ও আন্তোনি। আর তাঁদের পেছনে দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারে ব্রুনো গিমারেসের সঙ্গে মাতেউস এনরিকে। রক্ষণের ডানে অধিনায়ক দানি আলভেজ, লেফটব্যাক গিলের্মে আরানা, আর দুই সেন্টারব্যাক দিয়েগো কার্লোস ও নিনো। গোলপোস্টের নিচে সান্তোস।
প্রথমার্ধে ব্রাজিল তিন-চারটি সুযোগ তৈরি করেছে বটে, তবে সৌদি আরব এ সময়ে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতাই গড়ে! রক্ষণ মাঝমাঠে তৎপর সৌদিরা চেষ্টা করেছে পাল্টা আক্রমণে ব্রাজিলকে ভোগানোর। বিরতিতে ১-১ স্কোর বলে, সৌদিরা সে পরিকল্পনায় বেশ সফল।
১৩ মিনিটে কর্নার থেকে মাতেউস কুনিয়ার হেডে এগিয়ে যায় ব্রাজিলই। কিন্তু ২৬ মিনিটে সমতায় ফেরে সৌদি আরব। কর্নার থেকে সৌদি ডিফেন্ডার আল-আমরির হেড জড়িয়ে যায় ব্রাজিলের জালে। এরপর প্রথমার্ধে অবশ্য আরও তিনটি ভালো সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিল। এর একটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ লেফটব্যাক আরানা, দুটি নষ্ট করেছেন উইঙ্গার আন্তোনি।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অনেক গুছিয়ে আক্রমণে উঠেছে ব্রাজিল। কিন্তু গোল আসছিল না। রিচার্লিসন ৫৭ মিনিটে সুযোগ পেয়েও গোলকিপারের হাতে মেরেছেন, ৬৫ মিনিটে ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়েও কুনিয়া শট মেরেছেন বারে। এর তিন মিনিট পর সৌদি আরবের গারিবের ফ্রি-কিক ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল ব্রাজিল সমর্থকদের মনে, গোলকিপার সান্তোস কর্নারের বিনিময়ে দলকে বাঁচান। ৭১ মিনিটে রিচার্লিসনের বুলেট গতির শট কোনোরকমে ফেরান সৌদি আরব গোলকিপার।
অবশেষে ৭৫তম মিনিটে প্রাপ্য গোলটা পায় ব্রাজিল! দানি আলভেজের ফ্রি-কিকের পর ব্রুনো গিমারেস হেড করে বলটা বাড়িয়ে দেন রিচার্লিসনের দিকে, ইংলিশ ক্লাব এভারটনে খেলা উইঙ্গার হেড করে বল জড়ান জালে। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর আবার গোল পেলেন রিচার্লিসন।
এরপর আবার ব্রাজিলের গোলের খুব কাছে গিয়েও গোল না পাওয়ার গল্প। মালকম ও রিচার্লিসন দুবার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, ৮৯তম মিনিটে রিচার্লিসন বল জালে জড়ালেও গোল বাতিল হয় অফসাইডে। এরপর ৭ মিনিট যোগ করা সময় দেখা অর্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে ব্রাজিল পায় তৃতীয় গোল। গোলদাতা? রিচার্লিসন!
রাইট উইংয়ে মালকম বল পেয়ে সেটি ঠেলে দেন রেইনিয়েরের দিকে, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ধারে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলা প্লেমেকার নিচু ক্রস করেন রিচার্লিসনের উদ্দেশে। রিচার্লিসনের জন্য এরপর কাজটা সহজই ছিল, শুধু বলটাকে জালে ঠেলে দেওয়া। ম্যাচে দ্বিতীয় ও টুর্নামেন্টে পঞ্চম গোলের পথে সেই কাজটা করতে খুব একটা কষ্ট হলো না রিচার্লিসনের।
গ্রুপের অন্য ম্যাচ অবশ্য ফেবারিটদের অঘটনের শিকার হতে দেখেছে অলিম্পিক। প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে দুবার পিছিয়ে পড়েও হাঁচোড়ে-পাঁচোড়ে ৩-২ গোলে জিতেছিল জার্মানি। এদিকে প্রথম দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে আইভরি কোস্ট। আজ তাই জিততেই হতো জার্মানদের। কিন্তু ১-১ গোলে ম্যাচে দুই গোলই দুই জার্মান করলেও জয় পাওয়া হয়নি জার্মানির। একটা গোল যে আত্মঘাতী!
৬৭ মিনিটে বেঞ্জামিন হেনরিখসের আত্মঘাতে পিছিয়ে পড়ে জার্মানি। জবাব দিতে বেশি সময় নেয়নি, বদলি নামা এডওয়ার্ড ল্যুভেনের গোলে ছয় মিনিট পরই ফেরে সমতায়। কিন্তু অতটুকুই যথেষ্ট ছিল না জার্মানদের জন্য।