বিশ্বকাপে ব্রাজিল যা, চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল তার চেয়েও বেশি

রিয়ালের এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠার নায়ক বেনজেমাছবি: রয়টার্স
২৮ মে প্যারিসে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। ভালোবাসার শহর কাকে বরমাল্য দেয়, সেটা জানতে এখন সবার অধীর অপেক্ষা। এই ফাইনাল উপলক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিদিন থাকছে বিশেষ আয়োজন। প্রথম দুই পর্বে স্মরণীয় পাঁচ ফাইনালের পর এবার থাকছে চ্যাম্পিয়নস লিগে এই মৌসুমের দুই ফাইনালিস্ট রিয়াল মাদ্রিদ আর লিভারপুলের গৌরবথা। প্রথমে রিয়াল মাদ্রিদ...

বিশ্বকাপ এলে তো বটেই, এমনিতেও যেকোনো সময়ে আর্জেন্টিনা ভক্তদের খোঁচা দেওয়ার একটা বড় অস্ত্র হাতেই থাকে ব্রাজিল ভক্তদের—আর্জেন্টিনা আগে ব্রাজিলের মতো বিশ্বকাপ জিতে দেখাক!

অবশ্য এমন গর্বের রেকর্ড থাকলে সেটি তর্কে কাজে লাগাতে না চাওয়ার কোনো কারণ নেই। ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনা যেখানে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছে, ব্রাজিলের ট্রফি ক্যাবিনেটে জ্বলজ্বল করে পাঁচটি বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার দ্বিগুণের বেশি!

চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল সামনে রেখে যদি লিভারপুল আর রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তদের মধ্যে তর্ক বেধে যায়, সে ক্ষেত্রে রিয়াল মাদ্রিদের ভক্তরাও তো সহজেই ব্রাজিলের গর্ব ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। বিশ্বকাপে ব্রাজিল যা, চ্যাম্পিয়নস লিগে যে রিয়াল মাদ্রিদ তার চেয়েও বেশি কিছু!

বিশ্বকাপে তবু ব্রাজিলের পাঁচটি শিরোপার পর ইতালি আর জার্মানি চারটি করে জিতে তালিকার দুই নম্বরে আছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে তো রিয়াল মাদ্রিদের ধারেকাছে কেউ নেই। দুই নম্বরে থাকা এসি মিলানের (৭টি) শিরোপাই রিয়ালের ১৩টির প্রায় অর্ধেক! লিভারপুল তো সেখানে আরও পেছনে, তিন নম্বরে—বায়ার্ন মিউনিখের সমান ৬টি চ্যাম্পিয়নস লিগ তাদের।

সেমিফাইনালে সিটিকে হারানোর পর রিয়ালের খেলোয়াড়দের উল্লাস
ছবি: রয়টার্স

শিরোপায় শ্রেষ্ঠত্ব তাদের। চ্যাম্পিয়নস লিগের কতশত রেকর্ডেও রিয়াল মাদ্রিদের আধিপত্য। এমনি এমনিই তো আর বলে না, চ্যাম্পিয়নস লিগ রিয়াল মাদ্রিদের টুর্নামেন্ট! রিয়াল মাদ্রিদের ডিএনএর অংশ।

চ্যাম্পিয়নস লিগের থিম সংই নাকি রিয়াল মাদ্রিদে আলাদা, অনির্বচনীয় একটা অনুভূতির জন্ম দেয়। একটা বাড়তি শক্তি এনে দেয়। এই মৌসুমেই পিএসজি, চেলসির পর ম্যানচেস্টার সিটি সেটির সাক্ষ্য দেবে। অবশ্য টুর্নামেন্টের ইতিহাসের প্রথম পাঁচবারের প্রতিবারই শিরোপা নিয়ে ঘরে ফেরা একটি দলের ডিএনএতে চ্যাম্পিয়নস লিগ থাকবে না তো অন্য কোন দলের থাকবে!

রিয়ালের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে অবশ্য সেই পাঁচ শিরোপা প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তি, সেই ১৯৫৬ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের বোধনের প্রথম পাঁচ বছরে যখন সব রিয়াল জিতেছে, তখন দলগুলো তো যোগ্যতার বদলে আমন্ত্রণপত্রের জোরে টুর্নামেন্টে গেছে। রিয়াল ২০১৬ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠার পর তো ৫০ জন ফুটবল অনুরাগী (নাকি বার্সা সমর্থক?) উয়েফার কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন, রিয়ালের প্রথম পাঁচ বছরের শিরোপা কেড়ে নেওয়া হোক। কিন্তু অন্য দল আমন্ত্রণ পায়নি বা পেলেও যায়নি, সে তো আর রিয়ালের অপরাধ হতে পারে না!

ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লিগের প্রসঙ্গ ধরে যুক্তি এসেছে, সেখানে যেমন নাম বদলে প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লিগ হওয়ার পর সব রেকর্ড নতুন করে ধরছে স্কাই স্পোর্টসসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম, যে কারণে ১৮ বার প্রথম বিভাগ জেতা লিভারপুলের প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ধরা হয় ১টি...উয়েফাও চ্যাম্পিয়নস লিগে তেমন হিসাব রাখতেই পারে! ১৯৯২ সালে ইউরোপিয়ান কাপ থেকে নাম বদলে চ্যাম্পিয়নস লিগ হয়ে যাওয়ার পর এই টুর্নামেন্টের এখনকার ছকের সঙ্গে তো আগের ছকের, ঢংয়ের মিল নেই।

কিন্তু এই যুক্তিতেও রিয়ালকেই এগিয়ে রাখতে হয়। তর্কের খাতিরে তর্কে গেলে রিয়ালের দিক থেকে পাল্টা যুক্তি আসতেই পারে, যদি ওই পাঁচ শিরোপা বাদও দেওয়া হয়, তবু তো রিয়ালের শিরোপা থাকে আটটি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিলানের চেয়ে একটি বেশি!

শুধু শিরোপাই কেন? শিরোপা জেতা তো কৌশল, শক্তির পাশাপাশি ভাগ্যেরও খেলা। শিরোপার পাশাপাশি লম্বা সময় ধরে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে নিয়মিত টুর্নামেন্টের শেষ দিক পর্যন্ত যেতে পারাও বলবে একটা দলের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। সেখানে রিয়াল মাদ্রিদের রেকর্ড কী? কাগজ-কলম নিয়ে বসতে পারেন।

সবচেয়ে বেশি মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়নস লিগে) অংশ নেওয়ার রেকর্ড? রিয়াল মাদ্রিদের। ৫২ বছর, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১ বছর বেনফিকার।

সবচেয়ে বেশি ম্যাচ? রিয়াল মাদ্রিদের ৪৬৩টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ার্ন মিউনিখের, ৩৭২ ম্যাচ।

সবচেয়ে বেশি জয়? রিয়াল মাদ্রিদ! তাদের ২৭৬ জয় থেকে ৫৫টি কম দুইয়ে থাকা বায়ার্নের।

সবচেয়ে বেশি হারও (১০৮) রিয়ালের, সবচেয়ে বেশি গোল করা (১০২০) বা খাওয়া (৫০৮)...সবই রিয়াল মাদ্রিদের।

এখনই হাঁপ ছেড়ে বাঁচার কিছু নেই, রেকর্ড এখনো শেষ হয়নি। সবচেয়ে বেশি শিরোপা তো তাদেরই, সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলার রেকর্ডও স্বাভাবিকভাবেই রিয়ালের (১৭টি, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১টি বায়ার্ন ও মিলানের)। সবচেয়ে বেশি সেমিফাইনাল (৩১), কোয়ার্টার ফাইনালের (৩৭) রেকর্ডও কার? কী বিস্ময়, রিয়াল মাদ্রিদের!

রেকর্ড গেল, কীর্তির হিসাব করবেন না? টুর্নামেন্টটার নাম যখন ইউরোপিয়ান কাপ ছিল, তখন তো টানা পাঁচবার জিতে রেকর্ড গড়েছেই—যে রেকর্ড আর কোনো দল সম্ভবত কখনো আর ভাঙতে পারবে না। চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগেও যেখানে অন্য কোনো দলের টানা দুবার শিরোপা জয়ের কীর্তি ছিল না, রিয়াল সেখানে জিতেছে টানা তিনবার!

রিয়ালের সঙ্গে বরং এখানে রিয়ালেরই শুধু তুলনা চলতে পারে—পঞ্চাশ-ষাটের দশকে টানা পাঁচবার, নাকি ২০১৬-১৮ টানা তিনবার, কোনটি বেশি মাহাত্ম্যপূর্ণ ছিল রিয়ালের জন্য?

প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি নিজেদের সঙ্গেই নিজেদের, টুর্নামেন্টটাতে রিয়াল মাদ্রিদের একাধিপত্য নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না। থাকা উচিত নয়।

রিয়ালের ১৩ শিরোপা

১৯৫৬, ১৯৫৭, ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬৬, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০২, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮।

দশকে দশকে পথচলা

১৯৫০: খেলেছে - ৫ আসরে, শিরোপা - ৫
৫৫/৫৬ শিরোপা
৫৬/৫৭ শিরোপা
৫৭/৫৮ শিরোপা
৫৮/৫৯ শিরোপা
৫৯/৬০ শিরোপা

১৯৬০: খেলেছে - ১০ আসরে, শিরোপা - ১
৬০/৬৪ প্রথম রাউন্ড
৬১/৬২ ফাইনাল
৬২/৬৩ বাছাইপর্ব
৬৩/৬৪ ফাইনাল
৬৪/৬৫ কোয়ার্টার ফাইনাল
৬৫/৬৬ শিরোপা
৬৬/৬৭ কোয়ার্টার ফাইনাল
৬৭/৬৮ সেমিফাইনাল
৬৮/৬৯ দ্বিতীয় রাউন্ড
৬৯/৭০ দ্বিতীয় রাউন্ড

১৯৭০: খেলেছে - ৭ আসরে, শিরোপা - ০
৭২/৭৩ সেমিফাইনাল
৭৫/৭৬ সেমিফাইনাল
৭৬/৭৭ দ্বিতীয় রাউন্ড
৭৮/৭৯ দ্বিতীয় রাউন্ড
৭৯/৮০ সেমিফাইনাল

১৯৮০: খেলেছে - ৭ আসরে, শিরোপা - ০
৮০/৮১ ফাইনাল
৮৬/৮৭ সেমিফাইনাল
৮৭/৮৮ সেমিফাইনাল
৮৮/৮৯ সেমিফাইনাল
৮৯/৯০ দ্বিতীয় রাউন্ড

১৯৯০: খেলেছে - ৭ আসরে, শিরোপা - ২
৯০/৯১ কোয়ার্টার ফাইনাল
৯৫/৯৬ কোয়ার্টার ফাইনাল
৯৭/৯৮ বিজয়ী
৯৮/৯৯ কোয়ার্টার ফাইনাল
৯৯/০০ বিজয়ী

২০০০: খেলেছে - ১০ আসরে, শিরোপা - ১
০০/০১ সেমিফাইনাল
০১/০২ বিজয়ী
০২/০৩ সেমিফাইনাল
০৩/০৪ কোয়ার্টার ফাইনাল
০৪/০৫ শেষ ষোলো
০৫/০৬ শেষ ষোলো
০৬/০৭ শেষ ষোলো
০৭/০৮ শেষ ষোলো
০৮/০৯ শেষ ষোলো
০৯/১০ শেষ ষোলো

২০১০: খেলেছে - ১০ আসরে, শিরোপা - ৪

১০/১১ সেমিফাইনাল
১১/১২ সেমিফাইনাল
১২/১৩ সেমিফাইনাল
১৩/১৪ বিজয়ী
১৪/১৫ সেমিফাইনাল
১৫/১৬ বিজয়ী
১৬/১৭ বিজয়ী
১৭/১৮ বিজয়ী
১৮/১৯ শেষ ষোলো

২০২০: খেলেছে - ২ মৌসুমে, শিরোপা - ০
১৯/২০ শেষ ষোলো
২০/২১ সেমিফাইনাল
২১/২২ ?