বার্তোমেউর পদত্যাগ: মেসি থেকে যাবেন বার্সেলোনায়?
বার্সেলোনা সমর্থকদের অনেকেই হয়তো হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। অনেকের চোখে বার্সায় কালো ছায়া হয়ে থাকা জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ অবশেষে যে সভাপতির পদ থেকে সরে গেছেন! কিন্তু বার্তোমেউ ও তাঁর বোর্ডের পদত্যাগই তো সবকিছুর সমাধান নয়। এখনো প্রশাসনিক অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বার্সেলোনাকে।
তার মধ্যে বড় হয়ে পুরোনো একটি প্রশ্ন তো আছেই বার্সা সমর্থকদের সামনে—বার্তোমেউ তো গেলেন, লিওনেল মেসি থাকবেন?
এর বাইরেও বাতাসে ভাসছে আরও কিছু প্রশ্ন। সভাপতি নির্বাচন কবে, সেখানে কারা দাঁড়াচ্ছেন সভাপতি প্রার্থী হিসেবে, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই কদিন বার্সাকে সামলাবেন কে...কত কত বিষয় নিয়ে এখন মাথা ঘামাতে হচ্ছে বার্সা সমর্থকদের। সব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর তো এখনই দেওয়া সম্ভব নয়, এখনো অনেক যদি-কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে বার্সার আগামী দিনের পথচলা। কিন্তু বার্সা সমর্থকদের এই প্রশ্নগুলোর সম্ভাব্য উত্তর খুঁজে বের করে দেখা যাক...
মেসি থাকবেন বার্সায়?
গত আগস্টে বার্সেলোনার সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্কের শেষ টানতে চেয়ে মেসি যখন বুরোফ্যাক্স পাঠিয়েছিলেন ক্লাবে, বার্তোমেউ পাল্টা চাল দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মেসিকে রাখার জন্য প্রয়োজনে তিনি পদত্যাগ করবেন। মেসির যত ক্ষোভ বার্তোমেউর অধীনে ব্যর্থ প্রশাসনের ওপরই ছিল।
বার্তোমেউর ক্লাব পরিচালনায় ব্যর্থতার মাশুল দিয়ে মাঠে-মাঠের বাইরে দিনে দিনে খর্ব হচ্ছিল বার্সার শক্তি। বার্সায় নিয়মিত শিরোপা জিতে যাওয়ার মতো প্রকল্প (স্পোর্টিং প্রজেক্ট) বলতে কিছু নেই—এ-ই ছিল মেসির মূল ক্ষোভের কারণ। কিন্তু সব সময়ই নিজেকে ক্লাব রাজনীতির বাইরে রাখতে চাওয়া মেসি বার্তোমেউর পদত্যাগ করা-না করা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজে চলে যেতে চেয়েছিলেন।
তা শেষ পর্যন্ত মেসির চাওয়া পূরণ হয়নি। চুক্তির জটিলতার কারণে বার্সা ছাড়তে পারেননি ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। বার্সায় তাঁর চুক্তি আর এক বছর বাকি, সেটি শেষ করেই ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত মেসির—এমনটাই শোনা যায়।
মেসি থেকে গেলেও বার্তোমেউ তখন পদত্যাগ করেননি। কিন্তু এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি সেরে ফেলে বার্সার সমর্থকদের কয়েকটি গোষ্ঠী। সেটি পেছাতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন বার্তোমেউ। না পেরে শেষ পর্যন্ত করোনার মধ্যে ভোট আয়োজনে ‘ক্লাব সদস্যদের শারীরিক ঝুঁকি’র কথা বিবেচনায় নিয়ে সরে গেছেন।
কাল বার্তোমেউর পদত্যাগের ঘোষণা আসতেই আবার প্রশ্নটা ফিরে এসেছে, বার্তোমেউ তো সরে গেলেন, তাহলে মেসি কি থাকবেন?
উত্তরটা অবশ্য এখনো আগের মতোই আছে। মেসির থাকা-না থাকা নির্ভর করবে বার্সার পরের সভাপতির ওপর। পরের সভাপতি কে হবেন, তিনি এসে বার্সায় ভালো একটা ক্রীড়া প্রকল্প দাঁড় করাতে কী কী পদক্ষেপ নেন, সেসব দেখবেন মেসি। তা পছন্দ হলেই বার্সায় চুক্তি নবায়নের কথা ভাববেন বার্সা অধিনায়ক।
তবে ইএসপিএনের সাংবাদিক মার্ক ওগডেন কাল এক পডকাস্টে মেসির থাকার ইঙ্গিতই দিয়েছেন। ওগডেনের বিশ্লেষণে, বার্তোমেউই ছিলেন মেসির ‘বার্সায় থাকার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।’
বার্সার দায়িত্ব এখন কে নেবেন?
নতুন সভাপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড বার্সার দায়িত্ব নেবে। তবে এই বোর্ডের ক্ষমতা থাকবে সীমিত। ক্লাবের প্রতিদিনের কাজকর্ম পরিচালনার দায়িত্ব পড়বে তাঁদের ঘাড়ে। বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচন ঠিকঠাকভাবে শেষ করাও তাঁদের দায়িত্ব।
অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের প্রধান কে?
কার্লেস তুসকেতস। বার্সেলোনা অর্থনৈতিক কমিশনের প্রধান তিনি। বার্সেলোনার অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন, নতুন সভাপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বার্সার ম্যাচগুলোতে প্রেসিডেন্টস বক্সেও দেখা যেতে পারে তাঁকে। ব্যবসায়ী হিসেবে কাতালুনিয়ায় বেশ স্বনামধন্য তুসকেতস গত বছর বার্সেলোনার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হওয়ার দৌড়েও ছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত হেরে গেছেন। ২৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার কোষাধ্যক্ষ হয়েছিলেন।
তবে তাঁকে ঘিরে বিতর্কও আছে। ন্যাশনাল কোর্টে পুজোল কেইসের বিচারক হোসে দে লা মাতা তাঁকে ২৬ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।
সভাপতি নির্বাচন কবে?
সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে সভাপতি নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে, সেটি এই বছর শেষ হওয়ার আগেই যত দ্রুত সম্ভব আয়োজন করা হবে।
সভাপতি প্রার্থী কারা?
বার্তোমেউ এমনিতেও আগামী নির্বাচনে সভাপতি পদে দাঁড়াবেন না বলে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। সে ক্ষেত্রে এবারই শেষ হয়ে যেত বার্সার সভাপতি হিসেবে বার্তোমেউ অধ্যায়। সেটি শুধু একটু আগেভাগে হলো, এ-ই যা!
নতুন সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ভিক্তর ফন্তের নাম অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। সভাপতি নির্বাচিত হলে ক্লাবের কিংবদন্তি মিডফিল্ডার জাভিকে কোচ হিসেবে ফেরানোর ঘোষণা এরই মধ্যে দিয়েছেন তিনি, পাশাপাশি ক্লাবের যুব প্রকল্প লা মাসিয়াকে কেন্দ্র করে নতুন দিনের বার্সাকে গড়বেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফন্ত।
ফন্তের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জর্দি ফার, টনি ফ্রেইসা ও লুইস এর্নান্দেসের নাম শোনা যাচ্ছিল। এর মধ্যে নির্বাচনে দাঁড়ানো নিয়ে দোনোমনায় ভোগা হোয়ান লাপোর্তাও গত সেপ্টেম্বরে নতুন করে সভাপতি নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার সভাপতি ছিলেন লাপোর্তা। রোনালদিনিওকে ক্লাবে আনার জন্য বিখ্যাত তিনি, মেসিরও অভিষেক হয়েছে তাঁর সময়েই। ২০১৫ সালেই অবশ্য লাপোর্তা জানিয়ে রেখেছিলেন, সভাপতি নির্বাচিত হলে পেপ গার্দিওলাকে আবার কোচ করে ফেরাবেন।