ফ্রান্স-এমবাপ্পের দুঃস্বপ্নের রাতে বেনজেমার চোখধাঁধানো গোল
করিম বেনজেমার দিকে নজর থাকারই কথা। ছয় দিন আগে এই স্তাদ দো ফ্রান্সেই রিয়াল মাদ্রিদ ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে, ফাইনালে গোল না পেলেও রিয়ালের এবারের লিগ আর চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা তো বেনজেমার হাত ধরেই এসেছে।
সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে নজর ছিল কিলিয়ান এমবাপ্পের দিকেও। পুরো মৌসুম গুঞ্জন ছিল, এই মৌসুম শেষে পিএসজিতে তাঁর চুক্তি শেষ, এরপর রিয়াল মাদ্রিদে যাবেন এমবাপ্পে। কিন্তু মৌসুমজুড়ে দলবদলের গুঞ্জনের পর মৌসুম শেষে এসে পিএসজির সঙ্গেই চুক্তি নবায়ন করেছেন ২১ বছর বয়সী ফরাসি তারকা।
নজর থাকার কথা ছিল বেনজেমা আর এমবাপ্পের রসায়নের দিকেও। এমনিতে মাঠে ও মাঠের বাইরে দুজনের দারুণ সম্পর্ক। কিন্তু বেনজেমা মৌসুমে বেশ কয়েকবারই রিয়ালে এমবাপ্পের সঙ্গে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে রোমাঞ্চের কথা জানানোর পর যখন এমবাপ্পে পিএসজিতেই থেকে গেলেন, সেটি মাঠে দুজনের রসায়নে কেমন প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল।
কিন্তু সেটি দেখার আর সুযোগই তেমন পাওয়া গেল কোথায়! নেশনস লিগে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স কাল নিজেদের মাঠ স্তাদ দো ফ্রান্সে এবারের নেশনস লিগের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে, তাতে বেনজেমার রাতটা অসাধারণ কেটেছে। চোখধাঁধানো এক গোল করেছেন। কিন্তু ফ্রান্স আর এমবাপ্পের রাতটা কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। এমবাপ্পে চোট নিয়ে বিরতিতেই মাঠ ছেড়েছেন। আর এগিয়ে গিয়েও ফ্রান্স হেরে গেছে ২-১ গোলে।
বাবা মারা যাওয়ায় ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম কাল দলের সঙ্গে ছিলেন না। তবে ফলটা বাদ দিলে ম্যাচজুড়ে ফ্রান্সের খেলা দেখে তাঁর তৃপ্তই হওয়ার কথা। কাসপার হিউলমান্ডের অধীন ডেনমার্কের গতিশীল আক্রমণাত্মক ফুটবল তো গত ইউরোতেই নজর কেড়েছে, তাদের সঙ্গে লড়াইটা ফ্রান্সের জন্য সহজ হবে না, সেটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু পার্ক দো ফ্রান্সে কাল ম্যাচজুড়ে দাপট ফ্রান্সেরই ছিল।
৬০ শতাংশ বলের দখল ফ্রান্সের, ডেনমার্কের ৮টি শটের বিপরীতে বেনজেমারা শট নিয়েছেন ১৯টি। ডেনমার্ক গোলকিপার কাসপার স্মাইকেল দারুণ কিছু সেভ না করলে হয়তো বড় ব্যবধানে ম্যাচটা ফ্রান্সই জিতত।
তা হয়নি, উল্টো আন্দ্রেয়াস কর্নেলিয়াসের জোড়া গোলে হেরেই গেছে ফ্রান্স। অথচ গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে শুরুটা কী দারুণ হয়েছে ফ্রান্সের। বেনজেমার সৌজন্যেই। ৫১ মিনিটে স্তাদ দো ফ্রান্সকে বিস্ময় আর উল্লাসের জোড়া অনুভূতিতে ভাসিয়েছেন এবারের ব্যালন ডি’অরের সবচেয়ে বড় দাবিদার।
ডান দিক থেকে ঢুকে ফ্রান্সের উঠতি তারকা ক্রিস্তোফার এনকুনকুর সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে ভেতরে ঢুকেছেন, কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। বক্সে দুই ড্যানিশ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বেনজেমার দারুণ ফিনিশিং অনেক দিন চোখে লেগে থাকবে নিশ্চিত।
চোটের কারণে এমবাপ্পে বিরতির পর আর মাঠে না নামলেও দ্বিতীয়ার্ধে ডেনমার্কের রক্ষণের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে ফ্রান্স। কিন্তু ৬৮ মিনিটে গোল খেয়েছে তারাই। পিয়ের এমিল হইবিয়ার পাসে ডেনমার্ককে সমতায় ফেরান কর্নেলিয়াস। ৮১ মিনিটে ফ্রান্সকে আবার এগিয়ে দেওয়ার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন এনগোলো কান্তে। তাঁর বাঁকানো শট পোস্টে লেগে ফেরে
কিন্তু পাল্টা আক্রমণে ভয়ংকর ডেনমার্কও সুযোগ কম পায়নি। ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন সামনে শুধু ফ্রান্স গোলকিপার উগো লরিস থাকলেও শটটা লরিসের গায়েই মেরেছেন। তবে কর্নেলিয়াস সুযোগ হাতছাড়া করেননি। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে ইউরোতে আলো ছড়াতে লেফটব্যাক জোয়াকিম মেলের লম্বা পাস ধরে এগিয়ে যান, লরিসকে ফাঁকি দিতে তাঁর জোরাল শটই যথেষ্ট ছিল।
‘যেমনটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও ভালো কিছু হয়েছে আজ। অসাধারণ! এখানে এসে ৮০ হাজার মানুষের সামনে বিশ্বের সেরা দলকে হারিয়েছি আমরা’—সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠান টিভি টু-তে কর্নেলিয়াসের ম্যাচ শেষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। তাঁর পরের কথাটা ফ্রান্স তো বটেই, বিশ্বকাপে ডেনমার্কের প্রতিপক্ষ অন্য দলগুলোকেও হুঁশিয়ার করে দেবে। কর্নেলিয়াসের কথা, ‘আমাদের দেশটা ছোট, তবে আমরা সেরাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারি।’
আগামী সোমবার ফ্রান্সের পরের ম্যাচ ক্রোয়েশিয়ার মাঠে। ডেনমার্ক খেলবে গ্রুপের অন্য দল অস্ট্রিয়ার মাঠে।