ফাঁস হওয়া প্রশ্নে সুয়ারেজের পরীক্ষা, জুভেন্টাস ঝামেলায়

সুয়ারেজ এখন আতলেতিকোর।ছবি: এএফপি

রোনাল্ড কোমান বার্সেলোনার সদর দরজা দেখিয়ে দিয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজকে। উরুগুয়ে তারকা সেই দরজা দিয়ে বের হয়ে ঢুকতে চেয়েছিলেন ‘তুরিনের বুড়ি’দের ঘরে। কিন্তু চাইলেই তো আর সব হয় না! এমনকি জুভেন্টাস চাওয়ার পরও ভিসা জটিলতায় ইতালিতে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় সুয়ারেজের।

এতেও কোনো ঝামেলা ছিল না। কারণ, সুয়ারেজ যোগ দেন আতলেতিকো মাদ্রিদে। কিন্তু ইতালির পেরুজিয়া অঞ্চলের পুলিশ তদন্ত শুরুর পর অন্য রকম এক ঝামেলায়ই পড়েছে জুভেন্টাস। ইতালিয়ান ক্লাবটিকে এখন বলতে হচ্ছে, এসব অনৈতিক কাজকারবারের সঙ্গে তারা জড়িত না।

অনৈতিক? ঘটনাটা খুলেই বলা যাক। ইতালিয়ান নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ইউরোপিয়ান নন, এমন দুজনের বেশি খেলোয়াড় নেওয়া যায় না। সে কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় ইতালিয়ান পাসপোর্ট নিয়েই জুভেন্টাসে যেতে হতো সুয়ারেজকে।

সেটার জন্য ‘বি ওয়ান’ পরীক্ষা দিতে হয়েছিল সুয়ারেজকে। তাঁর স্ত্রী সোফিয়া বালবির ইতালিয়ান পাসপোর্ট আছে। অর্থাৎ সুয়ারেজ পরীক্ষায় পাস করতে পারলেই হতো। জুভেন্টাস তখন স্বাভাবিক উপায়েই তাঁকে দলে টানতে পারত।

সুয়ারেজ যখন ছিলেন বার্সেলোনার।
ছবি: টুইটার

তা, সুয়ারেজ নাকি দারুণভাবেই পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। গত ১৭ আগস্ট খবর এসেছিল, পেরুজিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে এসেছিলেন তিনি। সুয়ারেজের পাস করার খবরও চলে এসেছিল সেদিন।

কিন্তু ভিসার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার আগেই এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্বের স্কোয়াড ঘোষণার সময় পেরিয়ে যায়। তাই জুভেন্টাস দলবদল থেকে সরে আসে। কিন্তু দলবদলের এই ব্যর্থ প্রচেষ্টাই পরে ঝামেলা ফেলে দেয় এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের।

অভিযোগটা উঠেছিল গত সেপ্টেম্বরেই। সুয়ারেজ নাকি ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

পরীক্ষার প্রশ্ন কী হবে, কী ফল হবে, সেটা আগেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। নতুন খবর হলো পেরুজিয়া আইনজীবী অফিস থেকে বলা হয়েছে, সুয়ারেজের হাতে ইতালিয়ান পাসপোর্ট তুলে দিতে জুভেন্টাস সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির করেছিল। এ নিয়ে আরও তদন্ত চলছে।

কাল জুভেন্টাস এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক ফাবিও পারাতিচিকে অভিযুক্ত করেছে পুলিশ। তিনি ‘সরকারি কৌঁসুলিদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন’ বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু জুভেন্টাসের বিবৃতিতে বলা হয়, এই তদন্ত ‘সঠিক সময়ের মধ্যেই তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করবে।’

সে (সুয়ারেজ) এক শব্দ ইতালিয়ান বলতে পারে না। ক্রিয়াপদ গুছিয়ে বলতে পারে না। অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করে। যদি কোনো সাংবাদিক কোনো প্রশ্ন করত, সে কিচ্ছু বলতে পারত না।
ইতালিয়ান পত্রিকা রিপাবলিকার প্রতিবেদন

গিউলিয়ানা গ্রেগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন সুয়ারেজ। সেখানকার প্রধান নির্বাহী সিমোন অলিভিয়েরি, অধ্যাপক স্তেফানিয়া স্পিনা ও লরেঞ্জো রোকাকে আট মাস নিষিদ্ধ করা হয়।

তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘অনৈতিকভাবে লাভবান হতে মিথ্যা ধ্যানধারণার বশবর্তী হয়ে তাঁরা পেশাদার পর্যায়ে গোপন কিছু বিষয় ফাঁস করেছেন।’ কৌঁসুলির অফিস থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন সুয়ারেজকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাতে ফলটা আগেই ঠিক হয়ে যায়। জুভেন্টাস যেমন ফল চেয়েছিল, তেমন ফল পেতেই এই আয়োজন।’

ইতালিয়ান পত্রিকা রিপাবলিকা এর আগে জানিয়েছিল, সুয়ারেজের এত সহজে পরীক্ষায় পাস করাটা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ‘সে (সুয়ারেজ) এক শব্দ ইতালিয়ান বলতে পারে না। সে ক্রিয়াপদ গুছিয়ে বলতে পারে না। অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করে। যদি কোনো সাংবাদিক কোনো প্রশ্ন করত, সে কিচ্ছু বলতে পারত না। বছরে এক কোটি ইউরো আয় করবে যে, তাঁকে পরীক্ষা পাস করতেই হবে।’

সে যা–ই হোক, সুয়ারেজ এখন আতলেতিকো মাদ্রিদে। ঝামেলাটা তাই আপাতত শুধুই জুভেন্টাসের।