পাতানো খেলায় অভিযুক্ত জাতীয় দলের অধিনায়কও!
>গত বছর তিনটি ম্যাচের ব্যাপারে অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এবার আবার একটি ম্যাচ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাফুফে
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) একটি সন্দেহজনক ম্যাচ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মাঠে প্রিমিয়ার লিগের চট্টগ্রাম আবাহনী-সাইফ স্পোর্টিং গোলশূন্য ম্যাচটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও হইচই হয়নি। একটি বেসরকারি টিভি বলেছিল, ‘দুদলের কারও মধ্যেই জেতার আগ্রহ দেখা যায়নি। খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিল গা–ছাড়া ভাব। মনে হলো, সমঝোতার ম্যাচই খেলেছে দুদল।’
সেটিকে আমলে নিয়ে বাফুফে স্বপ্রণোদিত হয়েই তদন্ত নেমেছে। গত পরশু এ নিয়ে প্রথম সভায় বসে সাবেক সচিব হুমায়ুন খালিদের নেতৃত্বে বাফুফের পাতানো খেলা শনাক্তকরণ কমিটি। কমিটি দুই দলের তিনজন করে ফুটবলারকে আগামীকাল বাফুফে ভবনে তলব করেছে। সাইফের ইয়াসিন আরাফাত, জামাল ভূঁইয়া ও জাফর ইকবাল এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর মোনায়েম খান রাজু, আবদুল মালেক ও মাগালান।
ছয় ফুটবলারের মধ্যে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গে বাহরাইনে আছেন ইয়াসিন ও জাফর ইকবাল। তাঁরা দেশে ফিরলে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হবেন। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তাঁকে তলব করা প্রসঙ্গে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম আবাহনী পয়েন্ট তালিকার আটে। আমরা চারে। ওদের সঙ্গে পাতানো খেলা খেলতে যাব কেন আমরা? আমাদের কী লাভ? আমি দুঃখিত, ব্যথিত এই অভিযোগ ওঠায়। এটা আমার কাছে জোকস মনে হচ্ছে।’
সাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরীর কথা, ‘প্রশ্নই আসে না পাতানো ম্যাচ খেলার। বরং ম্যাচটি ছিল মারদাঙ্গা। এমন অভিযোগ উঠবে, আমি কল্পনাও করতে পারি না। এখন বাফুফেকে আমরা চিঠি দিয়ে বলব, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গে সঙ্গে থাকা ইয়াসিন আর জাফরকে চাইলে আমরা বাহরাইন থেকে ঢাকায় এনে বাফুফের কাছে হাজির করব।’
স্মরণযোগ্য যে গত লিগে ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি ফরাশগঞ্জের কাছে ৩-১ গোলে শেখ জামালের হার নিয়ে পরদিন সংবাদমাধ্যম বিস্তর সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। ওই জয়ে ফরাশগঞ্জ অবনমন এড়ানোর পথে কিছুটা এগোলেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এই ম্যাচের তদন্তে কিছু আলামত পাওয়ার কথা বলেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এ ছাড়া স্বাধীনতা কাপে শেখ জামাল-রহমতগঞ্জ ম্যাচটিকে ভিডিও দেখে এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছিলেন ‘ফ্রেশ ম্যাচ মনে হয়নি’। তবে লিগে অবনমন বাঁচাতে রহমতগঞ্জকে ছেড়ে দিয়েছে সাইফ স্পোর্টিং, এমন গুঞ্জন থাকলেও এই ম্যাচে আলামত পাওয়া যায়নি বলেন তদন্ত কমিটির আরেকজন সদস্য।
তদন্ত কমিটির এক সদস্য তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, দুটি ম্যাচের ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু আখেরে কিছু হয়নি। মাস দুয়েক পরই তদন্ত চলে যায় হিমাগারে। তবে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম কাল দাবি করেন ওটা হিমাগারে যায়নি, ‘ওই ম্যাচগুলোর ফাইল তো ক্লোজ হয়ে গেছে তখনই। তদন্ত কমিটি আমাদের বলেছিল, কিছু পাওয়া যায়নি। এখানে আমাদের কী করার আছে।’
তবে যে ফরাশগঞ্জ লিগের প্রথম পর্বে শেখ জামালের কাছে ৫ গোলে উড়ে গিয়েছিল, সেই দলটি দ্বিতীয় পর্বে শেখ জামালকে ৩ গোল দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেদিন উপস্থিত দর্শকেরা ম্যাচটি দেখে নানা কথা বলেন। ফরাশগঞ্জের এক আফ্রিকান খেলোয়াড়সহ রহমতগঞ্জের কয়েকজন ফুটবলারকে বাফুফে ভবনে ডেকে নানা প্রশ্ন করে তদন্ত কমিটি। শেখ জামালের তিন ফুটবলারকে ডাকা হলেও ক্লাবটি তাদের ফুটবলার ছাড়েনি। শেষ পর্যন্ত তদন্তও থেমে হয়ে যায়।
দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে পাতানো ম্যাচের ব্যাপারে বাফুফে বরাবরই বলে, ‘কিছু পাওয়া যায়নি।’ পেশাদার যুগে ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১০-১২টি ম্যাচের ব্যাপারে অভিযোগ উঠলেও মাত্র একটি ম্যাচের শাস্তি হওয়া সেটিই বলে। ২০১১ সালে শেখ জামাল-রহমতগঞ্জ সেই আলোচিত ম্যাচে যা একটু শাস্তি হয়েছিল। শেখ জামাল জরিমানা গোনে ২০ লাখ টাকা। জরিমানাসহ রহমতগঞ্জের গোলকিপার ও এক কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথম বিভাগে একটি ম্যাচের দুই দলকে অবনমিত করলেও পরে তা প্রত্যাহার করেছে বাফুফে। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে কিছু ম্যাচের ব্যাপারে অভিযোগ এলেও এগুলোর তদন্ত এগোয় না। নিচের দিকে হরদম পাতানো খেলা চলে, কিন্তু বিচার হয় না।