পর্দার আড়ালেই থাকবেন বানেগা?
>নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে গোল পেয়ে বীর মেসি ও রোহো। কিন্তু এ ম্যাচে পর্দার অন্তরালের নায়ক কিন্তু এভার বানেগাই। প্রতিভার প্রতি কখনোই সেভাবে সুবিচার করতে পারেননি এই আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার
এমনটাই হওয়ার কথা ছিল, যে দলে লিওনেল মেসি নামের এক মহিরুহ খেলেন সে দলের অন্য কেউ পাদপ্রদীপের আলোয় থাকবেন—এমনটা আশা করা বৃথা। মেসির মতো আলো না ছড়ালেও আর্জেন্টিনা দলে তারকার অভাব নেই। অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইন, পাওলো দিবালা—প্রত্যেকেই বড় তারকা। এই দলে এভার বানেগার নামটা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু প্রতিভার সঙ্গে সুবিচার না করতে পারার কারণে সেটি হয়নি। ক্যারিয়ারে বিভিন্ন পজিশনে খেলতে বাধ্য হওয়াও এর একটা বড় কারণ। তবে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। গোল করে পুরো আলোটা হয়তো কেড়ে নিয়েছেন মেসি-রোহো, বানেগা কিন্তু কারও চেয়ে কম ছিলেন না!
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বানেগাকে দেখা গেছে তাঁর মতো করেই। মেসির করা প্রথম গোলের পাসটি তাঁরই দেওয়া। প্রথম দুই ম্যাচে যে সৃষ্টিশীলতার অভাবে ভুগেছে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ, মেসি যে কারণে বল পাচ্ছিলেন না, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বানেগাই যেন সেই সমস্যার সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। একটু খেয়াল করে দেখলে এ ম্যাচের মূল তারকা ছিলেন বানেগাই।
আইসল্যান্ডের সঙ্গে পুরোপুরি ফিট না থাকায় প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি, পরে মাঠে নেমেও ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও তাঁকে বিবেচনাই করেননি কোচ সাম্পাওলি। দুই ম্যাচেই আর্জেন্টিনার ভরাডুবির কারণ ছিল তাঁদের মাঝমাঠ। কারও মধ্যেই সৃষ্টিশীলতা ছিল না। যিনি খেলাতে পারেন পুরো দলকেই, মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ঠান্ডা মাথায়—এমন খেলা খেলতে পারেননি কেউই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লিওনেল মেসির কাছে বলই গেল হাতেগোনা কয়েকবার। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার মূল অভাবটাই যেন মিটিয়েছেন বানেগা।
অথচ প্রথম একাদশে সুযোগই পাওয়ার কথা ছিল না তাঁর। আর্জেন্টিনার এতসব সমস্যা সমাধান করার জন্য দলে ছিলেন ম্যানুয়েল লানজিনি। সেই লানজিনিও বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ইনজুরিতে পড়ে গেলেন। সব দায়িত্ব এসে পড়ল বানেগার কাঁধে। প্রথম দুই ম্যাচে অপাঙ্ক্তেয় বানেগাকেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গুরুদায়িত্ব দিলেন সাম্পাওলি। সেই দায়িত্ব কী দুর্দান্তভাবেই পালন করেছেন বানেগা!
মেসিকে ৪০ গজ দূর থেকে দেওয়া তাঁর পাসটা ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে থাকবে অনেক দিন। এমন পাস যদি তিনি নিয়মিত দিতে পারতেন! সার্জিও আগুয়েরো, ডি মারিয়াদের সঙ্গে জিতেছেন যুব বিশ্বকাপের শিরোপা। সেই আগুয়েরো, মারিয়ারা বিশ্ব ফুটবলের তারকা হয়ে উঠলেও বানেগা পারেননি। ছিলেন না ২০১০ ও ২০১৪ সালের আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দলেও।
ক্লাব ক্যারিয়ারে মাঝারি সারির দলে খেলে গিয়েছেন। বর্তমানে খেলছেন স্প্যানিশ দল সেভিয়াতে। এর আগে ছিলেন ভ্যালেন্সিয়া, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে। ক্লাব ক্যারিয়ারের শুরুটা বোকা জুনিয়র্সে। তাঁর প্রতিভা দেখেই ২০০৯ সালে ইংলিশ ক্লাব এভারটন তাঁকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভ্যালেন্সিয়াতে নিজেকে প্রমাণ করবেন এই জেদ ধরে তিনি যাননি। কিন্তু পারেননি সেই জেদকে পারফরম্যান্সে প্রতিফলিত করতে। উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচারের কারণে শিরোনাম হয়েছেন বারবার।
২০১০ বিশ্বকাপে বানেগার আচরণে ব্যক্তিত্বের ঘাটতি আছে বলে তাঁকে দলে নেন নি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ২০১৪ বিশ্বকাপের আগেও ফর্মে ছিলেন না। সে সময় মেসিও নাকি বানেগাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনায় ফিরে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়তে। মেসির কথামতোই নিউ ওয়েলস ওল্ড বয়েজে ২০১৪ মৌসুম খেলেন বানেগা। নিজেকে সেখানেও মেলে ধরতে না পারায় জায়গা হয়নি আলেসান্দ্রো সাবেলার বিশ্বকাপ দলে। তাঁর দলে না থাকার খবর শুনে ড্রেসিংরুমেই নাকি কেঁদেছিলেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া।
গত চার বছরে গড়পড়তা খেলেছেন বানেগা। সর্বশেষ মৌসুমে খুব ভালো খেলেছেন বলেই সুযোগ মিলেছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দলে। তবে লানজিনি চোটে না পড়লে তিনি মাঠে খেলার সুযোগ পেতেন কিনা, সন্দেহ! নাইজেরিয়া ম্যাচের পর বানেগাই এখন আর্জেন্টিনার আশা-ভরসার প্রতীক। মেসির সঙ্গীর অভাব তিনি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পূরণ করেই প্রত্যাশার পারদটা চড়িয়েছেন। এটি পূরণ করতে পারলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ যাত্রা আরও দীর্ঘায়িত হবে, সেই সঙ্গে নিজের প্রতিভার স্বীকৃতিও পাবেন বানেগা।