না জিতে মাঠ ছাড়তে চাননি ক্রোয়েশিয়ানরা
>ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়তে চাননি ক্রোয়েশিয়ার কোনো খেলোয়াড়। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে মরিয়া ছিলেন রাকিতিচ-মদরিচরা
সেই ১৯৯১ তে স্বাধীনতা পাওয়া ক্রোয়েশিয়ার যে ভালো খেলোয়াড় ছিল না, তা নয়। যুগে যুগে ফুটবল বিশ্বকে মুগ্ধ করে গিয়েছেন বোবান, সুকারের মতো খেলোয়াড়েরা। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ায় একই সঙ্গে কি কখনো এত প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সমারোহ ছিল? লুকা মদরিচ, ইভান রাকিতিচ, ইভান পেরিসিচ, মারিও মানজুকিচ, সিমে ভরসালিয়োকো, দানিয়েল সুবাসিচ, মাতেও কোভাচিচ—সবাই নিজ নিজ প্রতিভায় ভাস্বর। সুকার-বোবানদের সেই সোনালি প্রজন্মের পর এ তো ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় ‘সোনালি প্রজন্ম’।
ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘ইটস নাউ অর নেভার!’ ক্রোয়েশিয়ার এই সোনালি প্রজন্মের ক্ষেত্রেও কি কথাটা সত্যি নয়? কিছুদিন পর দলের সবচেয়ে বড় তারকা লুকা মদরিচের বয়স হতে চলেছে তেত্রিশ, বাকি সবার বয়সও ত্রিশ ছুঁইছুঁই, না হয় ত্রিশ পেরোনো। এবার বিশ্বকাপ জিততে না পারলে ওঁরা কবে পারবেন?
ক্রোয়েশিয়ার সব খেলোয়াড়ই এ কথাটা জানেন। জানেন বলেই প্রতি ম্যাচে তাঁরা নিংড়ে দিচ্ছেন ভেতরের সবটুকু সামর্থ্য। ইভান রাকিতিচের কথাই ধরুন, কাল ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে পুরো ১২০ মিনিট খেলে গেছেন সমান তালে। কোচ জ্লাতকো দালিচ তাঁকে মাঠ থেকে উঠিয়ে বদলি খেলোয়াড় নামাতে চাইলেও রাকিতিচ রাজি হননি। অন্যান্য খেলোয়াড়ের মনোভাবও একই রকম ছিল। কেউই দলকে না জিতিয়ে মাঠ থেকে উঠে আসতে চাননি।
মনে করে দেখুন, ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন ইয়োসিপ পিভারিচ। সেটি ম্যাচের ৯৫ মিনিটে মানে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর। আন্তে রেবিচকে নামিয়ে আন্দ্রে ক্রামারিচকে নামানো হয় ১০১ মিনিটে, সবশেষে চোটগ্রস্ত স্ট্রাইকার ও ম্যাচ জয়ের নায়ক মারিও মানজুকিচকে উঠিয়ে ডিফেন্ডার ভেদরান চোরলুকাকে নামানো হয় ১১৫ মিনিটে।
এ নিয়ে ম্যাচ শেষে মুখ খুলেছেন স্বয়ং ক্রোয়েশিয়া কোচ দালিচ, ‘আমি আরও অনেক আগেই খেলোয়াড়দের বদল করতে চেয়েছিলাম, খেলোয়াড়েরা নিজেরাই মাঠ থেকে উঠে আসতে চায়নি। সবার মুখে আমি একটা কথাই শুনেছি—আমি খেলার জন্য প্রস্তুত, মাঠ থেকে উঠে আসতে চাই না!’
ক্রোয়েশিয়ানদের এই হার-না-মানা মানসিকতাই তাঁদের তুলে দিয়েছে ফাইনালে। স্বপ্নপূরণ হতে আর মাত্র এক ধাপ দূরে ক্রোয়েশিয়া!