দুর্নীতির মামলা থেকে রেহাই ব্ল্যাটার–প্লাতিনির
ফিফার সাবেক সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার ও উয়েফার সাবেক সভাপতি মিশেল প্লাতিনির ওপর থেকে আজ দুর্নীতির মামলা তুলে নিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের একটি আদালত। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দুজনকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।
ফিফা সভাপতির পদে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করা ব্ল্যাটারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা ছিল। সুইজারল্যান্ডের বেল্লিনজোলা অঞ্চলের ফেডারেল ক্রিমিনাল কোর্ট এই মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়েছে। ফ্রান্সের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি মিডফিল্ডার প্লাতিনিকেও একই অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়। একসময় ফুটবলে সবচেয়ে ক্ষমতাবান দুটি পদ আগলানো এই দুজন বরাবরই তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
আইনজীবীদের অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালে ব্ল্যাটার–প্লাতিনি যোগসাজশ করে ফিফা থেকে ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। সেই টাকা পেয়েছিলেন প্লাতিনি। এই ঘটনা তখন আলোড়ন তোলার পর ব্ল্যাটারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২০১৫ সালে ফিফা সভাপতির পদ ছেড়ে দেন এই সুইস। প্লাতিনির ভাবমূর্তিও ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয় এবং ব্ল্যাটারের পর ফিফা সভাপতি হওয়ার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সেটিও ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়।
৮৬ বছর বয়সী ব্ল্যাটার দাবি করে এসেছেন, দুই মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ নিয়ে যে বিতর্ক সেটি ‘ভদ্রলোকের চুক্তি’র (জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্ট) অংশ, যার শুরু ১৯৯৮ সালে, যখন প্লাতিনিকে নিজের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। সুইস আদালতকে ব্ল্যাটার বলেছেন, ৬৭ বছর বয়সী প্লাতিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ফিফায় কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। তখন তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল তিন লাখ সুইস ফ্রাঁ। ব্ল্যাটার জানিয়েছেন, ফিফা তখন আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল। প্লাতিনির বার্ষিক বেতনের বাকি এক মিলিয়ন ফ্রাঁ পরে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানান ব্ল্যাটার।
তবে ওই টাকা প্লাতিনিকে ব্ল্যাটার ঠিক কী কারণে দিয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ২০১০ সালে দুজন সাক্ষাৎ করে পরের বছর ফিফা সভাপতি নির্বাচন নিয়ে নানা পরিকল্পনা করেছিলেন। ব্ল্যাটার প্লাতিনিকে ওই টাকা দেওয়ার অনুমতি প্রদানের সময় ফিফা সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কাতারের মোহাম্মদ বিন হাম্মাম। তখন ফিফা নির্বাচনের ভোটে প্রভাব রাখতে পারবেন, ইউরোপের এমন কিছু সদস্যের সঙ্গে দেনদরবারও করতে দেখা যায় প্লাতিনিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ২০১৫ সালে ফিফায় জালিয়াতি, ঘুষ ও টাকা পাচারের তদন্ত শুরুর পর এসব ঘটনা সামনে উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছিলেন ব্ল্যাটার। এরপর ব্ল্যাটার–প্লাতিনিকে আট বছরের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে অবশ্য দুজনের সাজার মেয়াদ কমিয়ে আনা হয়। প্লাতিনি তখন বলেছিলেন, তাঁর ফিফা সভাপতি হওয়ার পথ বন্ধ করতেই দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আজ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর প্লাতিনি বলেছেন, ‘আমাকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের বলতে চাই, সাত বছর ধরে মিথ্যাচারের পর শেষ পর্যন্ত সুবিচার পেলাম।’ বিচারককেও ধন্যবাদ জানান প্লাতিনি, ‘বিচারের সময় সত্যটা বেরিয়ে এসেছে, বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত বিচারকেরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।’
প্লাতিনি জানিয়েছেন, সত্যের খোঁজে তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন, ‘সব সময় বলে এসেছি, আমার লড়াই অবিচারের বিরুদ্ধে। তাতে প্রথম খেলাটা জিতলাম। এই মামলায় দোষী অনেকেই আছেন, যাদের শুনানিতে দেখা যায়নি। তাদের সঙ্গে আমার আবারও দেখা হবে, এটা বলে রাখলাম। কারণ আমি হাল ছাড়ব না, সত্যের সন্ধান করে যাব।’