ম্যাচ চলাকালীন সময় ব্রাজিল সমর্থক এক টুইটার ব্যবহারকারীকে বলতে দেখা গেল, নেইমারের ক্যারিয়ারের সেরা পাঁচ পারফরম্যান্সের একটা দেখা গেল আজ। সে টুইটার ব্যবহারকারী বিন্দুমাত্রও বাড়িয়ে বলেছেন বলে মনে হলো না। আজ এতটাই ভালো খেলেছেন নেইমার!
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে শক্তিশালী উরুগুয়ের বিপক্ষে আজ ৪-১ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। এই চার গোলের মধ্যে মাত্র একটা গোল নেইমারের হলেও উরুগুয়ের রক্ষণভাগকে পুরো চরকির মতো নাচিয়ে ছেড়েছেন নেইমার। গোল করেছেন একটা, করিয়েছেন দুটি।
নেইমারের আলো ছড়ানোর ম্যাচে আলো ছড়িয়েছেন লিডস ইউনাইটেডের উইঙ্গার রাফিনহা। গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রিচার্লিসন, এভেরতন রিবেইরো, এভেরতন সোয়ারেস, কুতিনিও, রবার্তো ফিরমিনোদের কারণে জাতীয় দলে তেমন সুযোগ না পেলেও তিনি যে হলুদ জার্সি পরে নেইমারদের পাশে খেলার যোগ্যতা রাখেন, ক্লাব ক্যারিয়ারে গত এক বছরে সেটা বহুবার প্রমাণ করেছেন রাফিনহা।
আজকেও মূল একাদশে সুযোগ পেয়ে কোচ তিতেকে নিজের জাত চিনিয়েছেন। রাফিনহার কাছ থেকে ব্রাজিল গোল পেয়েছে দুটি। বাকি গোলটা ফ্লামেঙ্গো স্ট্রাইকার গাব্রিয়েল বারবোসার।
৪-৪-২ ছকে আজ মাঠে নেমেছিল ব্রাজিল। যে ছকটা ক্ষণে ক্ষণেই ৪-৩-৩ এ রূপ নিচ্ছিল। ম্যানচেস্টার সিটির গোলকিপার এদেরসনের সামনে রক্ষণভাগে জুটি বেঁধেছিলেন চেলসির বর্ষীয়ান সেন্টারব্যাক থিয়াগো সিলভা ও বেনফিকার লুকাস ভেরিসিমো। টটেনহামের এমারসন রয়্যালকে খেলানো হয়েছে রাইটব্যাক হিসেবে, ওদিকে জুভেন্টাসের অ্যালেক্স সান্দ্রো খেলেছেন লেফটব্যাক হিসেবে।
মাঝমাঠে রিয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো ছিলেন না। তাঁর জায়গায় সুযোগ পেয়েছিলেন লিভারপুলের রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ফাবিনিও। ফাবিনিওর পাশে লিভারপুলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা ফ্রেদকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তৃতীয় মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছেন অলিম্পিক লিওঁর লুকাস পাকেতা।
আক্রমণভাগের বাকি তিনজন ছিলেন রাফিনহা, নেইমার ও গাব্রিয়েল জেসুস। এই তিনজনের চতুর চলাফেরাই ছকটাকে কখনও ৪-৪-২, বা কখনও ৪-৩-৩ করে দিচ্ছিল।
ওদিকে ৪-৩-১-২ ছকে দুই পোড় খাওয়া স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ ও এদিনসন কাভানিকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছিল উরুগুয়ে। এ দুজন ছাড়াও এই ম্যাচের মূল একাদশে উরুগুয়ের হয়ে খেলেছেন জুভেন্টাসের রদ্রিগো বেনতাঙ্কুর, ইন্টার মিলানের মাতিয়াস ভেচিনো, রিয়াল মাদ্রিদের ফেদেরিকো ভালভার্দে, কালিয়ারির নাহিতান নান্দেজ, রোমার মাতিয়াস ভিনিয়া, আতলেতিকোর সাবেক অধিনায়ক দিয়েগো গদিন প্রমুখ। কাগজে-কলমে বেশ শক্তিশালী একাদশ। কিন্তু ওই যে, যেদিন নেইমার ছন্দে থাকেন, সেদিন প্রতিপক্ষের একাদশে যতই মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের উপস্থিতিত থাকুক না কেন, কোন লাভ হয় না যে!
এর আগে উরুগুয়ের বিপক্ষে ৪ ম্যাচ খেলে দুই ও আর তিন গোলে সহায়তা ছিল নেইমারের। লাতিন আমেরিকার এই শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে পেলেই জ্বলে ওঠেন নেইমার। আজকের তার ব্যতিক্রম হয়নি। ম্যাচের দশ মিনিটেই নেইমারের গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
মাঝমাঠ থেকে অসাধারণ এক সহায়তায় নেইমারকে দিয়ে গোল করান মিডফিল্ডার ফ্রেদ। ডানপ্রান্তে রাফিনহার কাছ থেকে বল নিয়ে বক্সে থাকা নেইমারের উদ্দেশ্যে উড়িয়ে বলটা পাঠান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার। উরুগুয়ের অভিজ্ঞ গোলকিপার ফের্নান্দো মুসলেরাকে বোকা বানিয়ে গোল করতে একটু সমস্যা হয়নি নেইমারের।
প্রথম থেকেই দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলা শুরু করে ব্রাজিল। আক্রমণভাগে উরুগুয়ের রক্ষণভাগকে তটস্থ রাখছিলেন নেইমার আর জেসুস। দুজনের জুটিটা বেশ জমে উঠেছিল।
১৮ মিনিটে এবার রাফিনহাই নাম লেখান গোলদাতার তালিকায়। পাকেতার অসাধারণ পাস থেকে নেইমারের শট, সেখান থেকে গোল না হলে ফিরতি বল জালে জড়ান লিডসের এই উইঙ্গার। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকে ব্রাজিল।
দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে ম্যাচ শুরু করে সেলেসাওরা। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে নেইমারের সহায়তায় নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান রাফিনহা। ৭৭ মিনিটে লুইস সুয়ারেজের দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে ব্যবধান কমলেও তা উরুগুয়েকে একটু সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। ম্যাচের শেষদিকে এসে বিকল্প স্ট্রাইকার গাব্রিয়েল বারবোসার গোলে ব্যবধান ৪-১ করে ফেলে ব্রাজিল।
এক গাব্রিয়েল গোল করতে পারলেও গোল করার ক্ষেত্রে ব্যর্থই হয়েছেন আরেক গাব্রিয়েল (জেসুস)। দুর্দান্ত খেললেও ডি-বক্সে এসে তাঁর শট না নিতে চাওয়ার প্রবণতা বেশ ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে, নাহয় আরও কয়েকটা গোল পেতে পারতেন নেইমাররা।
এই নিয়ে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ১১৫ ম্যাচ খেলা হয়ে গেল নেইমারের। গোল করেছেন ৭০টি, করিয়েছেন ৫০টা। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৮ ম্যাচ খেলে সাত গোল করেছেন, করিয়েছেন আরও সাতটা। কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন, কাতার বিশ্বকাপই হয়তো হতে পারে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি পরে এখনও যেভাবে খেলছেন, ব্রাজিল সমর্থকেরা আরও বহু বহুদিন নেইমারকে মাঠে দেখতে চাইবেন!