ম্যাচ শেষে যখন সতীর্থরা ট্রফি নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেছে, নাঈম ইসলাম গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। হাতে ধরা সর্বোচ্চ গোলদাতার ট্রফি। পল্টন আউটার স্টেডিয়ামে জাতীয় স্কুল ফুটবলের ফাইনালে আজ নীলফামারী ছমির উদ্দিন স্কুল ১-০ গোলে হারিয়েছে যশোরের বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে। জয়ী দলের একমাত্র গোলটি করেছে নাঈম।
৫ ম্যাচে ২ হ্যাটট্রিকসহ ৮ গোল নাঈমের। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেয়েও নাঈমের চোখে জল। তখন বারবার মনে পড়ছিল নীলফামারীতে থাকা বাবার কথা।
নাঈমের বাবা রংপুরে একটি সিগারেট কারখানার কর্মচারী। দুই ভাই আর এক বোনকে নিয়ে অভাবের সংসার নাঈমদের। ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৪ মক কাপের ট্রায়াল ছিল ঢাকায়। সেবার টাকার অভাবে ঢাকায় আসতে পারেনি সে। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারী থেকে ঢাকায় আসা–যাওয়ার বাসভাড়া ও থাকা–খাওয়ার জন্য দুই হাজার টাকা জোগাড় করতে পারেননি নাঈমের বাবা।
আজ ম্যাচের পর সেই কষ্টের কথা মনে করে নাঈম বলছিল, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব দুর্বল। আমার বাবা অনেকের কাছে ধার চেয়েছিলেন দুই হাজার টাকা। কিন্তু সেদিন হয়তো তারা ভেবেছিল, বাবা এই টাকা ফেরত দিতে পারবেন না। তাই কেউই সেদিন টাকা দেয়নি। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো কান্না পায়। কিন্তু সেদিন জেদ করেছিলাম, যেভাবেই হোক একদিন ঢাকায় খেলব।’
এ বছর নীলফামারী জেলা ফুটবল লিগে খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি ক্লাবের হয়ে নাঈম করেছে সর্বোচ্চ ৮ গোল। চাচা জাহাঙ্গীর আলমের উৎসাহেই মূলত ফুটবলে এসেছে নাঈম। এবার সে স্বপ্ন দেখছে বয়সভিত্তিক যেকোনো পর্যায়ের জাতীয় দলে খেলার, ‘আমি বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলতে চাই। এভাবেই প্রতি ম্যাচে গোল পেতে চাই।’
নীলফামারীর কচুকাটা ইউনিয়নে বাড়ি নাঈমের। সেখান থেকে নীলফামারী স্টেডিয়ামের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। অনুশীলনের জন্য এই দূরত্ব পেরোতে কখনো অটোতে, কখনো সাইকেল চালিয়ে আসে নাঈম।
গ্রুপ পর্বে বেনাপোল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪-০ গোলে হারিয়েছিল ছমির উদ্দিন হাইস্কুলকে। কিন্তু আজ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল নাঈম, ‘আমার পুরো আত্মবিশ্বাস ছিল আমি গোল করব। দলকে জেতাব। আমরা আজ আরও গোল দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোচ গোল করার পর আমাদের অন্য ফর্মেশনে খেলিয়েছেন।’
প্রথমবার টুর্নামেন্ট জিতে ঈদের আগে যেন বাড়তি আনন্দ পেয়ে গেছে নাঈম, ‘কয়েক দিন পর ঈদ। মনে হচ্ছে আজই আমরা ঈদের আনন্দ পেয়ে গেছি।’