কোন কোচ পাচ্ছেন কত টাকা?

মারুফুল হক, সাইফুর বারি টিটু, জোসেফ আফুসি ও অস্কার ব্রুজোন। ফাইল ছবি
মারুফুল হক, সাইফুর বারি টিটু, জোসেফ আফুসি ও অস্কার ব্রুজোন। ফাইল ছবি
দেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে ২০১৭-১৮ মৌসুমটা বিশেষভাবে মূল্যায়ন করতেই হবে। এর পেছনে যে কয়েকটি কারণ আছে, এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভালো মানের বিদেশি কোচ আসা ও স্থানীয় কোচদের আর্থিক নিরাপত্তা। নতুন মৌসুমে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, এমন ছয় কোচ নিয়ে প্রথম আলোর এই আয়োজন


বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে কোচ হওয়াটা একসময় ছিল আর্থিকভাবে সবচেয়ে অনিরাপদ চাকরি। গড়পড়তা অনেক খেলোয়াড়ের চেয়েও স্থানীয় কোচদের অর্থমূল্য ছিল অনেকটাই নামকাওয়াস্তে। চাকরিও ছিল অনিশ্চিত— ‘এই আছে তো এই নেই’। ১০ বছর আগেও ছিল এমন চিত্র। মারুফুল হকের বদৌলতে স্থানীয় কোচদের সেই দৃশ্য বদলে গিয়েছে। বড় ক্লাবের কোচ হতে পারলেই মৌসুমে পাওয়া যায় মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক। নিয়োগ কিংবা ছাঁটাই প্রক্রিয়াতেও এসেছে পেশাদারি মনোভাব।

দেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে ২০১৭-১৮ মৌসুমটা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতেই হবে। এর পেছনে যে কয়েকটি কারণ, এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভালো মানের বিদেশি কোচ আসা ও স্থানীয় কোচদের আর্থিক নিরাপত্তা। এবার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকধারী কোচ বসুন্ধরা কিংসের অস্কার ব্রুজোন। আর দেশীয় কোচদের মধ্যে সর্বোচ্চ টাকা পেয়েছেন সাইফুল বারি টিটু।


অস্কার ব্রুজোন (বসুন্ধরা কিংস)
মাসিক ১০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় মাসিক সাড়ে আট লাখ টাকা)

উয়েফা ‘প্রো’ লাইসেন্সধারী স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রজোনকে নিয়োগ দিয়ে চমক দেখিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। যিনি গত মৌসুমে মালদ্বীপ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব নিউ রেডিয়ান্টের কোচ ছিলেন। ৪১ বছর বয়সী ব্রুজোন মালদ্বীপ ছাড়াও এর আগে ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইএসএলের দল মুম্বাইয়ের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। স্প্যানিশ ক্লাব মায়োর্কার সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী মাসিক ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে এক বছরের চুক্তিতে বসুন্ধরার দায়িত্ব নিয়েছেন। এই মৌসুমে অস্কারই সবচেয়ে দামি কোচ।

স্টুয়ার্ট হল (সাইফ স্পোর্টিং)
মাসিক সাত হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ লাখ)

সাইফ স্টোর্টিংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগে উয়েফা প্রো-লাইসেন্সধারী কোচ স্টুয়ার্ট হল সর্বশেষ কাজ করেছেন কানাডার হ্যালিফেক্স কাউন্টি ইউনাইটেডের হয়ে। এর আগে সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রানাডা ও জাম্বিয়া জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। এ ছাড়া কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ইংল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তানজানিয়া ও কেনিয়ায়। ৫৮ বছর বয়সী এই কোচ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভারতের ক্লাব পুনে এফসির দায়িত্বে ছিলেন। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী মাসিক ৭ হাজার ডলারের বিনিময়ে এক বছরের চুক্তিতে সাইফের দায়িত্ব নিয়েছেন।

জোসেফ আফুসি (শেখ জামাল ধানমন্ডি)
মাসিক সাত হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ লাখ)

অনেক নাটক শেষে আবারও শেখ জামালের ডাগ আউটে দেখা যাবে নাইজেরিয়ান কোচ জোসেফ আফুসিকে। শেষ মৌসুমে ধানমন্ডির ক্লাবটির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু লিগের মাঝপথেই তাঁর বিরুদ্ধে রীতিমতো পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ব্যাপারটা নিয়ে নাটক হয়েছিল যথেষ্ট, দেদার কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছিল। গত বছর শেখ জামাল ছিল তারুণ্যনির্ভর দল। সেই তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়েই পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থেকে লিগের প্রথম পর্ব শেষ করেছিলেন আফুসি। তাই হয়তো আবার এএফসি এ লাইসেন্সধারী কোচকে ফিরিয়ে আনা। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী নাইজেরিয়ান এই কোচের মাসিক বেতন ৭ হাজার ডলার।

সাইফুল বারি টিটু (শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র)
এক মৌসুমের জন্য ৪৫ লাখ টাকা

এই মৌসুমে স্থানীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকধারী কোচ সাইফুল বারি টিটু। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে ৪৫ লাখ টাকার চুক্তিতে শেখ রাসেলে এসেছেন এএফসি ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ। এর আগে মোহামেডান, শেখ জামাল ও আরামবাগের দায়িত্ব পালন করেছিলেন দেশের অন্যতম সেরা এ কোচ। জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বেও ছিলেন বিভিন্ন সময়।

মারুফুল হক (আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ)
এক মৌসুমের জন্য ৪০ লাখ টাকা

দেশের ফুটবলে আধুনিক কোচিংয়ের পথ দ্রষ্টা বলা হয় উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী এই কোচকে। গত মৌসুমের স্বাধীনতা কাপে একেবারেই সাদামাটা আরামবাগ দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। অন্য ক্লাবে বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও থেকে গিয়েছেন আরামবাগে।

জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু (চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড)
এক মৌসুমের জন্য ৩০ লাখ টাকা

গতবার চট্টগ্রাম আবাহনীর সহকারী কোচ ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই উইঙ্গার। কাজ প্রশংসিত হওয়ায় চট্টগ্রামের ক্লাবটি এবার প্রধান কোচের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে মিন্টুর হাতে। প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেলেও বিশ্বস্ত সূত্রমতে ৩০ লাখ টাকা পাচ্ছেন মিন্টু।