কাকে নতুন মেসি বানাবে বার্সেলোনা?

বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে ঝড় তোলা লিওনেল মেসি কদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ মৌসুমে সব শিরোপা জেতার জন্য লড়বেন। বার্সেলোনায় এখন ভালো আছেন বলেও জানিয়েছেন। যার সঙ্গে মূল ঝামেলা ছিল আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের, সেই সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ বিদায় নিয়েছেন। বার্সেলোনার সমর্থকেরা তাই আশায় বুক বাঁধছেন এ মৌসুমের শুরুতে চলে যেতে চাওয়া মেসি হয়তো থেকে যাবেন।

এখনো নতুন চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা শুরু না হলেও বার্সেলোনার পরবর্তী সভাপতি নিশ্চিতভাবেই চেষ্টা করবেন মেসিকে যেকোনোভাবেই হোক ধরে রাখতে। কোচ রোনাল্ড কোমানের অধীনে বার্সেলোনার পারফরম্যান্স অবশ্য মেসির থেকে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী করছে না কাউকে। আর থেকে গেলেও মেসির বয়স ৩৩ হয়ে গেছে। একদিন না একদিন তো বিদায় বলবেনই বার্সা অধিনায়ক। বার্সেলোনাকে তাই মেসির উত্তরসূরি খুঁজে নেওয়ার কাজটা ভালোভাবেই শুরু করতে হবে।

স্প্যানিশ পত্রিকা মার্কা বার্সার হয়ে সে কাজটাই করেছে। সম্ভাব্য যে খেলোয়াড়দের পক্ষে মেসি নামক শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব, তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়েছে তারা।

মার্তিনেজ।
ছবি: রয়টার্স

লওতারো মার্তিনেজ

এক আর্জেন্টাইনের অভাব আরেক আর্জেন্টাইনকে দিয়েই পূরণ করার চেষ্টা। আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকারকে কেনার চেষ্টা গত এক মৌসুম ধরেই চালিয়েছে বার্সা। দারুণ গোল শিকারি, আবার দলের খেলায়ও অংশ নিতে পারেন মার্তিনেজ। বার্সেলোনার খেলার ধরনের সঙ্গে দারুণ মানান এই স্ট্রাইকার। মাত্র ২৩ বছর বয়স বলে তাঁকে ঘিরে এক দশকের পরিকল্পনাও সাজানো যায়। কিন্তু এই আর্জেন্টাইনের জন্য ১১ কোটি ইউরো দাম ঠিক করে রেখেছে তাঁর ক্লাব ইন্টার মিলান। ক্লাবটিতে মার্তিনেজের চুক্তির এখনো আড়াই বছর বাকি থাকায় ইন্টারের সঙ্গে দর-কষাকষিতে খুব একটা সুবিধা পাচ্ছে না বার্সেলোনা। তবে মার্তিনেজ চুক্তি নবায়ন না করে যদি বর্তমান ক্লাবের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে বার্সেলোনার তাঁকে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

নেইমার।
ছবি: রয়টার্স

নেইমার

তাঁকে কেনাই হয়েছিল মেসির উত্তরসূরি বানানোর জন্য। কিন্তু ২০১৭ সালে আচমকা বার্সেলোনা ছেড়ে দিয়ে ক্লাবের পরিকল্পনা নষ্ট করেছেন নেইমার। এরপর এমন কোনো দলবদল যায়নি যখন নেইমারের বার্সেলোনায় ফেরার সম্ভাবনা জাগেনি। শুধু এবার মেসির ক্লাব ছাড়ার কথা ওঠার ডামাডোলে নেইমারকে ফেরানোর সম্ভাবনা আড়ালে চলে গেছে। ওদিকে নেইমারও পিএসজিতে থেকে যাওয়ার কথা শোনাচ্ছেন ইদানীং। যদিও বার্সেলোনার সভাপতি হওয়ার আশায় থাকা এমিলি রুশো বলছেন, ‘নেইমার বার্সেলোনায় ফিরতে চায়, ওর প্রতিনিধিরাই বলেছে আমাকে।’ কিন্তু এ ফেরার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে বার্সেলোনার আর্থিক অবস্থা। পিএসজিতে প্রায় মেসির কাছাকাছি বেতন পান নেইমার। ওদিকে মেসির বেতনই এখন দিতে হিমশিম খাচ্ছে বার্সেলোনা। তাই নেইমারকে ফেরানোর একমাত্র উপায়ও বলে দিয়েছেন রুশো, ‘(অর্থের বিনিময়ে) দলবদল হওয়া সম্ভব না। বার্সেলোনার আর্থিক সে শক্তি নেই। ওর চুক্তি যখন শেষ হবে, তখন হতে পারে।’ পিএসজিতে ২৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ানের চুক্তির এখনো ১৮ মাস বাকি। এর মধ্যে চুক্তি নবায়ন করে বসলে বার্সেলোনার স্বপ্নটা আবার উবে যাবে।

সালাহ।
ছবি: রয়টার্স

মোহামেদ সালাহ

বার্সেলোনার আর্থিক দুর্দশা এমন প্রকট আকার ধারণ না করলে সালাহই হতে পারতেন মেসির সেরা বদলি। মাঠের ডান প্রান্তে খেলেন, দারুণ বাঁ পায়ে গোলরক্ষককে অসহায় বানাতে জানেন। ড্রিবলিংয়ে ব্যতিব্যস্ত করতে পারেন প্রতিপক্ষ রক্ষণকে। গত দুই মৌসুমে বহুবারই সালাহর বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। এ সপ্তাহেই খবর ছড়িয়েছে লিভারপুলে অখুশি সালাহ। এএসে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকার গুঞ্জনের পাল্লাও ভারী করেছিল। সেখানে বলেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা শীর্ষ ক্লাব... ভবিষ্যতে কী হবে কেউই বলতে পারে না। এখন আমার ভবিষ্যৎ ক্লাবের (লিভারপুল) হাতে।’ সালাহরও চুক্তির এখনো আড়াই বছর বাকি। ফলে সালাহকে টানার জন্য লিভারপুলকে রাজি করাতে প্রচুর অর্থ দরকার হবে বার্সেলোনার।

ফাতি।
ছবি: টুইটার

আনসু ফাতি

এই একটি ক্ষেত্রেই কোনো অর্থ দরকার হবে না বার্সেলোনার। গত মৌসুমে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বার্সেলোনার জার্সিতে অভিষিক্ত হয়ে রেকর্ড গড়েছেন আনসু ফাতি। বার্সার সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতাও এখন ফাতি। এল ক্লাসিকোতে সবচেয়ে কম বয়সে গোলের রেকর্ডটাও বুঝে নিয়েছেন কদিন আগে। নেইমারের বিদায়ের পর মেসির উত্তরসূরি খুঁজতে কম অর্থ ব্যয় করেনি বার্সা। প্রথমে ১০ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করে কেনা হয়েছিল উসমান ডেমবেলেকে। এরপর ১৪ কোটি ইউরোতে ফিলিপ কুতিনিও এবং ১২ কোটি ইউরোতে আঁতোয়ান গ্রিজমানও যোগ দিয়েছেন বার্সেলোনায়। কিন্তু এ তিনজন নয়, মেসির প্রকৃত উত্তরসূরি হওয়ার সব সম্ভাবনা ফাতির মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। ফাতির মতোই মাত্রই ১৮তে পা রাখা পেদ্রির মধ্যেও ভবিষ্যৎ তারকা হওয়ার সব সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে গোল করার ক্ষমতা বিবেচনায় ফাতিই এগিয়ে থাকছেন।