ইমনের এমন সুন্দর গোল দেখারও মানুষ নেই
‘বাংলাদেশের ফুটবলাররা ফাঁকা পোস্টেও গোল করতে পারেন না’—চায়ের আড্ডা থেকে ফেসবুকে, দেশের ফুটবল নিয়ে আলোচনা উঠলে সবার আগে এ কথাটিই শোনা যায়। যাবে না-ই বা কেন!
জাতীয় দলের জার্সিতে গোল করার লোক নেই বলে মাথা কুটতে হচ্ছে। ঘরোয়া ফুটবলেও গোলদাতা বলতে সেই বিদেশিরা। দেশি ফুটবলারদের পায়ে গোল দেখা যায় কালেভদ্রে। এর ফলে হতাশা থেকে ফুটবলপ্রেমীদের মনে এ কথা আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
* প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দেখতে পাবেন ইমনের গোলটি।
তবে আজ কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মিডফিল্ডার শাহরিয়ার ইমন যে দর্শনীয় গোলটি করলেন, তা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর কাছে মোহামেডান ৪-২ গোলে হারলেও, ইমনের গোলটি মোহামেডান–সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়েছে। শুধু মোহামেডান কেন, ক্লাবের গণ্ডি ছাপিয়ে গোলটি দেশের ফুটবলের সব সমর্থকের জন্যই স্বস্তির। বাংলাদেশের ফুটবলাররাও যে ভালো গোল করতে জানেন, এ গোলই তার প্রমাণ।
ফুটবলে প্রথম স্পর্শটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রথম স্পর্শে বাংলাদেশের ফুটবলাররা দুর্বল, এটা সবারই জানা। আজ গোল করার আগে এ জায়গাতেই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে মোহামেডানে যোগ দেওয়া ইমন।
ম্যাচে মোট ৬টি গোলের সবই হয়েছে প্রথমার্ধে। মনে হচ্ছিল, একটা পাগলাটে ম্যাচ হতে যাচ্ছে। ইমনের গোলের আগে ৩-১ গোলে পিছিয়ে ছিল মোহামেডান। প্রথমার্ধের যোগ করা সময় তখন।
মাঝমাঠের নিচ থেকে বাতাসে লম্বা পাস বাড়িয়েছিলেন মিডফিল্ডার অনিক মোল্লা। ডান দিক থেকে ঢুকে বক্সের মধ্যে প্রথম স্পর্শে আবাহনী লেফটব্যাক নুরুল নাঈমকে ছিটকে ফেলেন ইমন। এরপর শট নেওয়ার ভঙ্গি করে ইমনের বডি ডজে মাটিতে পড়ে গেলেন আবাহনীর ইরানি সেন্টারব্যাক মিলাদ শেখ।
আবাহনীর দুই ডিফেন্ডারেরই ধারণা ছিল, বল নিয়ে পোস্ট থেকে বাইরের দিকে যাবেন ইমন। বাংলাদেশের ফুটবলে সাধারণত যা হয় আর কি, উইঙ্গার বল নিয়ে টাচলাইনের দিকে গিয়ে সেখান থেকে ক্রস ফেলেন, ইমনও তেমন কিছুই করবেন বলে হয়তো ভেবেছিলেন তাঁরা।
কিন্তু ভেতরের দিকে ঢুকলেন, ভিন্নধর্মী ভাবনায় আর বলে দারুণ স্পর্শে দুই ডিফেন্ডারকে ঘোল খাওয়ালেন। আরেক সেন্টারব্যাক রেজাউল করিম এগিয়ে স্লাইড করেও বল ছুঁতে পারলেন না। ইমনের বাঁ পায়ের শট জালে। গোলকিপার শহীদুল বাঁ দিকে ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পেলেন না।
মোহামেডানের হয়েই এ বছর প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন ইমন। এর আগে প্রিমিয়ার লিগ তো দূরের কথা, ঢাকার ফুটবলে কোনো স্তরেই খেলেননি ২১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।
স্বাভাবিকভাবে আবাহনী-মোহামেডানের মতো বড় ম্যাচে গোল করতে পেরে আনন্দিত খুলনার এ তরুণ। কুমিল্লা থেকে প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আবাহনীর বিপক্ষে গোল করব, একটা আত্মবিশ্বাস ছিল। ও যখন বল ফেলেছে, ওয়ানটাচে কাটব্যাক করে বল ঠেলে ঢুকে গিয়েছি। তবে ম্যাচটা অন্তত ড্র করতে পারলে বেশি ভালো লাগত।’ লিগে ১৩ ম্যাচ খেলে ইমনের এটি দ্বিতীয় গোল।
মোহামেডানের জার্সিতে আবাহনীর বিপক্ষে স্থানীয় কোনো ফুটবলারের পায়ে গোল এসেছে সময়ের হিসাবে ৩ বছর আর ম্যাচের হিসাবে ৫ ম্যাচ পর। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন তকলিস আহমেদ, একটি গোল এসেছিল জাহিদ হাসানের পা থেকে।
দুর্ভাগ্য হলো এমন সুন্দর গোল দেখার তেমন মানুষ ছিল না গ্যালারিতে। এমন দর্শনীয় গোলের পর তালিই যদি শোনা না যায়, দর্শকের আনন্দ–চিৎকারই শোনার সৌভাগ্য না হয়, তবে আর গোল করার তৃপ্তি কোথায়!