আর্জেন্টিনার মতো পা ফসকাবে না তো ব্রাজিলের?
‘গিভ মি ফ্রিডম, গিভ মি ফায়ার, গিভ মি রিজন, টেক মি হায়ার...’
বিশ্বকাপ আসতে না আসতেই গানের এই লাইনগুলো ফুটবল-ভক্তদের নতুন করে মনে করিয়ে দেয় বিশ্বকাপ ফুটবলের আর খুব বেশি বাকি নেই। বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র ১২ দিন বাকি। কে হবে এবারের চ্যাম্পিয়ন? এ নিয়ে সমীকরণ বুনতে বুনতেই ফুটবলবোদ্ধাদের কপালে যেন ইতিমধ্যেই চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেছে।
অনেকের কাছেই ব্রাজিল এবারের হট ফেবারিট, পুরো দলে তারকার কোনো কমতি নেই। তা ছাড়া নেইমার, কুতিনহো, ফার্নান্দিনহো, মার্সেলো, রবার্তো ফিরমিনো দলের সবাই এখন দুর্দান্ত ফর্মে। শুধু নামের বিচারেই নয় বরং দল হিসেবেও সবার মন কেড়েছে দলটি। তা ছাড়া গতবারের বিশ্বকাপের মতো এবারের দলটি আর নেইমার-নির্ভর নয়। ধারণা করা হচ্ছে, গত এক যুগের মধ্যে এটিই ব্রাজিলের সবচেয়ে ভালো দল। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও স্পষ্ট বোঝা গেছে গ্রুপ ‘এফ’-এ থাকা এই দলটি এখন কতটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাই তো চার ম্যাচ বাকি থাকতেই সবার আগে এবারের বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে দলটি।
ইতিহাস বলে, পাঁচবার বিশ্বকাপজয়ী এই দলটি বিশ্বকাপ জয় ছাড়া যেন আর কিছু ভাবতেই পারে না। তাই তো খেলোয়াড়েরাও ভক্তদের আশার বাণী শোনাচ্ছেন, নেইমার তো ইতিমধ্যে বলেছেনই, ‘এবারের বিশ্বকাপটা আমার চাই-ই চাই।’ তবে হিতে বিপরীতও হতে পারে। ২০০২ বিশ্বকাপের কথা মনে আছে? সেবার আর্জেন্টিনা ছিল বিশ্বকাপের হট ফেবারিট। বাছাইপর্বেও আগ্রাসী আর্জেন্টিনা টিমকেই দেখেছিল পুরো বিশ্ব। ব্রাজিলের সঙ্গে একটি হার এবং উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ের সঙ্গে ড্র করেছিল। বাকি সব ম্যাচেই সব প্রতিপক্ষকে হারিয়ে সবার আগে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল তারা। বিশ্বকাপের শুরু থেকে অনেকটা ধরেই নেওয়া হয়েছিল, এবারের বিশ্বকাপটি আর্জেন্টিনার হাতেই উঠতে যাচ্ছে।
গ্রুপ পর্বে সেবার আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল সুইডেন, ইংল্যান্ড ও নাইজেরিয়া। সে সময়ের বিচারে ইংল্যান্ড ছাড়া আর্জেন্টিনার কাছে বাকি দুটো দলকে নস্যিই বলা চলে। অথচ আশ্চর্য হলেও সত্যি, সে গ্রুপ থেকেই সেবার বাদ পড়তে হয়েছিল আর্জেন্টিনা দলকে! শুরুটা অবশ্য ভালোই ছিল আর্জেন্টিনা দলের জন্য। প্রথম ম্যাচেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়। দ্বিতীয় ম্যাচেই পা পিছলে যায় দলটির। চোট থেকে ফেরা ডেভিড বেকহামের পেনাল্টি গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে জিততেই হতো আর্জেন্টিনাকে।
সবাইকে হতাশ করে শেষের ম্যাচেও সুইডেনের বিপক্ষে আলো ছড়াতে পারেনি আর্জেন্টাইনরা। শেষ মুহূর্তের গোলে কোনোমতে ১-১ গোলে সমতা। একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল হুয়ান ভেরনের দলটি। অবিশ্বাস্য কিছু না হলে গ্রুপ ‘ই’তে থাকা ব্রাজিল দলটির অনায়াসেই গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে যাওয়ার কথা। তবু মনে এক প্রকার সংশয় যেন থেকেই যায়। এবারও প্রায় একই রকম দাপট দেখিয়ে বিশ্বকাপে উঠে এসেছে ব্রাজিল। অন্য দলগুলো যেখানে শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপ নিয়ে চিন্তিত, সেখানে চার ম্যাচ আগেই কাজ সেরে নিয়েছে তিতের দল। যেন ২০০২ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনাই। মার্সেলো বিয়েলসার দুর্ভাগ্যের ভূত আবার তিতের কাঁধে চড়বে না তো?