আবাহনীকে ৪ গোল দিতে ৯০ কিলোমিটার দৌড়েছে মোহামেডান!
>প্রায় চার বছর পর প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে মোহামেডান। তাও আবার ৪-০ গোলের জয়। সেদিন মোহামেডান দলের খেলোয়াড়েরা দৌড়েছিলেন প্রায় ৯০ কিলোমিটার।
আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের ৪-০ গোলের জয়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে এক হালি গোলের সেই জয় চার দিন পরও মোহামেডান সমর্থকদের মনে রোমাঞ্চের দোলা দিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী দলটির ব্যতিক্রমধর্মী সমর্থক দল মহাপাগল কাল বিকেলে ক্লাবে আয়োজন করেছিল ‘চার-শূন্য উদ্যাপন’। সাদা-কালো সমর্থকেরা এই জয়ের পর কতটা রোমাঞ্চিত বোঝা যাচ্ছে?
উদ্যাপন করছেন, খেলা দেখে আনন্দও পাচ্ছেন। তবে তাঁদের হয়তো জানা নেই আবাহনীকে এক হালি গোলের মালা পরাতে কত কিলোমিটার দৌড়াতে হয়েছে মোহামেডানের খেলোয়াড়দের। সেদিন পুরো মোহামেডান দল প্রায় ৯০ কিলোমিটারের বেশি দৌড়েছে। এখন কৌতূহল জাগতে পারে, খেলোয়াড়েরা কত দৌড়ালেন, এটা জানার জন্য যে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস থাকা দরকার, সেটা মোহামেডান আবার নিল কবে! নতুন কোচিং স্টাফের সুবাদে যোগ হয়েছে এ প্রযুক্তি এবং কোচ সিন লেনের মাধ্যমেই সেই জিপিএস রিপোর্ট প্রথম আলোর কাছে এসেছে।
গোলরক্ষক ছাড়া বাকি ১০ জনের সঙ্গে ছিল জিপিএস চিপ। তাঁরা দৌড়েছেন ৮৫.০৮ কিলোমিটার। এঁদের মধ্য হাবীবুর রহমান সোহাগ, তকলিচ আহমেদ ও জাহিদ হাসান এমিলির জায়গায় বদলি নেমেছিলেন যথাক্রমে কাউসার রাব্বি, ইউসুফ সিফাত ও মিঠু ভূঁইয়া। বদলি নামা তিন খেলোয়াড়ের সঙ্গে জিপিএস না থাকায় তাঁদের সঠিক রেকর্ড বের করা সম্ভব নয়। তবে তিনজন মিলে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি দৌড়েছেন বলে নিশ্চিত কোচ। সে হিসাবে সেদিন মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা দৌড়েছেন ৯০ কিলোমিটারের বেশি।
এই পরিসংখানকে খুব ভালো বলার সুযোগ নেই। কারণ, মারুফুল হকের আরামবাগ গড়ে দৌড়ায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার। অন্যদিকে, জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় হারের এ দিনে আবাহনীর পরিসংখ্যান জানা যায়নি।
ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে সবচেয়ে বেশি দৌড়েছেন মিডফিল্ডার গালিব নেওয়াজ। ১১.৩৪ কিলোমিটার দৌড়েছেন এই মিডফিল্ডার। জোড়া গোল করে নায়ক বনে যাওয়া তকলিচ আহমেদ ৭৯ মিনিট পর্যন্ত মাঠে থেকে দৌড়েছেন ৮.৩২ কিলোমিটার। পুরো ৯০ মিনিট খেলে সবচেয়ে কম দৌড়েছে সুলেমান ডায়াবাতে। সলো মুভে ৩-০ করা মালির এই ফরোয়ার্ড দৌড়েছেন মাত্র ৪.৮৬ কিলোমিটার। দলের নাম্বার নাইনের এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে কী কৌশলে সেদিন মাঠে নেমেছিল মোহামেডান।
স্পষ্টত প্রতিপক্ষের অর্ধে কোনো প্রেসিং না করেই মাপা প্রতি–আক্রমণে যাওয়া। ৮৮ মিনিট পর্যন্ত মাঠে থাকা দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলির নামের পাশে ৮.২০ কিলোমিটার। হেডে গোল করে আবাহনীর শেষ পেরেকটি মেরেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকার। তাঁকে অবশ্য মোহামেডান কোচ এখন খেলাচ্ছেন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে।
মোহামেডানের এই জয়ে বড় কৃতিত্ব দিতে হবে অস্ট্রেলিয়ান কোচ সিন লেনকে। পুরো অঙ্ক কষে দল সাজিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। আবাহনীর ক্ষুরধার আক্রমণত্রয়ীর সামনে ৫ ডিফেন্ডার দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। বিদেশি ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে তিন সেন্টারব্যাকের ওপরে দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার জাপানি উরু নাকাতা ও শেখ গালিব নেওয়াজ। মিডল করিডরে এই পায়ের জঙ্গল ভেদ করে সানডে চিজোবা, নাবীব নেওয়াজরা তেমন গোলের সুযোগই সৃষ্টি করতে পারেননি। ফলে প্রায় চার বছর পর আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া।
খেলোয়াড়ের নাম ও যে পজিশনে খেলেছিলেন | কিলোমিটার দৌড়েছেন | কত মিনিট খেলেছেন |
ক্রিল ওরিকু (সেন্টারব্যাক) | ৮.৭৮ | পূর্ণ সময় |
জাহিদ হাসান এমিলি (ফরোয়ার্ড) | ৮.২০ | ৮৮ মিনিট |
গালিব নেওয়াজ (মিডফিল্ডার) | ১১.৩৪ | পূর্ণ সময় |
ইকাঙ্গা (সেন্টারব্যাক) | ৮.৯২ | পূর্ণ সময় |
আতিকুর রহমান (ফুল ব্যাক) | ৬.৪৬ | পূর্ণ সময় |
শ্যামল রনি (ফুল ব্যাক) | ৯.১৪ | পূর্ণ সময় |
হাবীবুর রহমান (সেন্টারব্যাক) | ৮.৪৬ | ৬৮ মিনিট |
সুলেমান ডায়াতে (ফরোয়ার্ড) | ৪.৮৬ | পূর্ণ সময় |
তকলিচ আহমেদ (ফরোয়ার্ড) | ৮.৩২ | ৭৯ মিনিট |
উরু নাগাতা (মিডফিল্ডার) | ১০.৬০ | পূর্ণ সময় |
|
|
|