আবাহনীকে এখন ‘দ্বিতীয় হতেই লড়তে হবে’
গ্যালারির এক পাশ অনেকটা খালি। আরেক পাশে লাল সমুদ্র। এই অংশে ঢাকঢোল বাজল ম্যাচজুড়েই। অবশ্যই তা বসুন্ধরা কিংসকে সমর্থন জানাতে। শেষ পর্যন্ত সেই ঢাকঢোল বাজানো বৃথা যায়নি।
কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে গুরুত্বপূর্ণ লিগ লড়াইয়ে আজ ঠিকই জিতেছে শক্তিতে এগিয়ে থাকা কিংস। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফেরেইরার জোড়া গোলে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়েছে ২–১ ব্যবধানে।
ম্যাচ শেষে কিংস হয়তো সেভাবে উৎসব করেনি, তবে একটা বড় বাধা পেরোনার তৃপ্তি ছিল সবার মধ্যে। জোড়া গোল করা মিগুয়েল ছিলেন একটু বেশিই খুশি। সমর্থকেরা ঢাকঢোল বাজিয়ে জয় উদ্যাপন করেন।
তবে আবাহনীর শিবির ছিল বিষণ্ন। ভালো খেলেও এমন হার কোনোভাবেই মানতে পারছে না আকাশি–নীলরা। কোচ মারিও লেমোস ক্ষুব্ধ তাঁর ফুটবলারদের ওপর। বিশেষ করে সিরিয়ান ডিফেন্ডার ইউসেফ ও মিডফিল্ডার সোহেল রানাকে নিয়ে মারিও বলেন, ‘আমরা ওদের জয়টা উপহার দিয়েছি। ইউসেফ ও সোহেল রানার ভুল পাসে ওরা গোল করেছে। এমন ভুল করা মোটেও উচিত ছিল না।’
লিগ শিরোপার আশা শেষ কি না, এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমাদের পক্ষে এখন শিরোপা জেতা অনেক কঠিন।’ তারপর বললেন আসল কথাটা, ‘সত্যি বলতে, এখন দ্বিতীয় হতেই লড়তে হবে আমাদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না।’ লেমোসের শেষ কথাটাই আসল। বাস্তবতা বলছে, আবাহনীকে এখন দ্বিতীয় হতেই লড়তে হবে।
ফুটবল অঙ্গনে অনেকেই বলেন, কিংসের ম্যাচ তো একটাই। আর সেটা আবাহনীর সঙ্গে। অন্য কোনো দল কিংসকে ধরতে পারবে না। এ কথার প্রমাণ দেওয়ার দায়িত্ব যেন নিজেরাই নিয়েছে কিংস। এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের আগে ৯টি ম্যাচেই জিতেছে লাল জার্সিধারীরা। মৌসুমজুড়ে আছে অপরাজিত। সেই দলের সামনে আজ বুক চিতিয়ে লড়ে অন্তত ড্র করতে পারলেও লিগ লড়াইয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিল আবাহনী। কিন্তু ড্রয়ের সম্ভাবনা জাগালেও পারেনি পেশাদার লিগে ছয়বারের চ্যাম্পিয়নরা।
আর এতে টানা চতুর্থ প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে গেল কিংস। ৯ ম্যাচে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবাহনীর পয়েন্ট ১৮, সেখানে ১০ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট কিংসের। অর্থাৎ এক ম্যাচ বেশি খেলে আবাহনীর চেয়ে কিংস এখন ১২ পয়েন্ট এগিয়ে। ২০ ম্যাচের লিগে বাকি ১০ ম্যাচে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে মনে হয় না, কিংসকে আর ধরতে পারে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী।
দুই দলের আগের ১০ লড়াইয়ে কিংসের জয় ৬টি, ২টি জয় আবাহনীর, ২টি ড্র। আবাহনীর সামনে লিগ লড়াইয়ে এখনো অপরাজিত থাকল কিংস। দুটি ম্যাচ তারা আবাহনীর কাছে হেরেছে অন্যান্য টুর্নামেন্টে। প্রথমটি ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপে, দ্বিতীয়টি গত বছর স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে।
আবাহনী আজ গোলের রাস্তা ঠিকভাবে খুঁজে পেলে কিংস হেরেও যেতে পারত। অন্যদিনের মতো এদিন প্রতিপক্ষের রক্ষণে শুটিং অঞ্চলে জায়গা বের করতে পারছিল না কিংস। তবে ২৬ মিনিটে পেরেছে, তিন ব্রাজিলিয়ানের দারুণ বোঝাপড়ায় পেয়ে গেছে গোলও।
দরিয়েলতন থেকে বল পান রবসন। রবসন বল দেন মিগুয়েলকে। বাকি কাজটা করেন মিগুয়েল। বক্সের একটু ভেতর থেকে বাঁ পায়ের প্লেসিংয়ে ১–০ করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। এটাই আসলে কিংসের শক্তি। ব্রাজিলিয়ানদের ব্যক্তিগত স্কিল উঁচুমানের হওয়ায় তাঁদের আটকানো যেকোনো রক্ষণের জন্যই কঠিন। আবাহনীর রেজাউল, রহমতদের জন্যও তা আজ সহজ ছিল না।
কিন্তু ৩৬ মিনিটে ম্যাচটা নতুন প্রাণ পেয়েছে। আবাহনীর পোড় খাওয়া সেন্টারব্যাক রেজাউল করিম সমতা ফেরান ম্যাচে। গোটা ম্যাচে নিজের সেরাটা ঢেলে দেওয়া কলিনদ্রেসের কর্নারে রেজাউলের হেড যায় জালে।
দ্বিতীয়ার্ধটা আর তেমন জমেনি, যতটা জমেছিল প্রথমার্ধে। দুই দলই হয়তো ভেবেছে, হারের চেয়ে ড্রটা অন্তত ভালো। কিন্তু মিগুয়েল ভেবেছেন অন্য কিছু। ৭৭ মিনিটে তিনি ম্যাচের গতি আবার ফিরিয়ে নিয়েছেন কিংসের দিকে। নিরীহ একটা আক্রমণ থেকে দরিয়েলতন বল দেন মিগুয়েলকে। বক্সে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় আবার সেই বাঁ পায়ের প্লেসিংয়ে গোল করেন তিনি। সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি আবাহনী।
ম্যাচটা পরিচালনা করেছেন ভুটানি রেফারি প্রেমা শেরওয়াং। সঙ্গে দুই সহকারী ও চতুর্থ রেফারিও ছিলেন তাঁর স্বদেশি। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) এলিট প্যানেলে ঢোকার তৃতীয় অ্যাসেসমেন্ট হিসেবে ম্যাচটা করেন প্রেমা। তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় কোনো বিতর্ক হয়নি। কুমিল্লা থেকে হয়তো খুশি মনেই ফিরছেন তিন ভুটানি। খুশি মনে ফিরছে কিংসও। আর আবাহনীর সঙ্গী হতাশা।