১১ মাসে ৭ প্রতিযোগিতায় ৭২ ম্যাচ, রিয়ালের সামনে কঠিন মৌসুম
শুরুটা হয়েছে ওয়ারশতে। আজ রাতে ইউরোপিয়ান সুপার কাপের ফাইনাল দিয়ে ২০২৪-২৫ মৌসুম শুরু করছে রিয়াল মাদ্রিদ। আতালান্তার বিপক্ষে পোল্যান্ডের রাজধানীতে খেলা ম্যাচটি দিয়ে ঠাসা সূচির পথে হাঁটা শুরু করেছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। তবে এই পথচলার শেষ যে কবে এবং কোথায়, সেটা আপাতত অজানা।
চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে খেলতে হবে ৭টি প্রতিযোগিতায়, ম্যাচ খেলতে হতে পারে ৭২টি। তবে এত বেশি ম্যাচ খেলার জন্য সময় ১১ মাসেরও কম। এত বেশি ম্যাচ যাঁদের জন্য দুশ্চিন্তার, সেই খেলোয়াড়দের কিন্তু ফিফা উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলতে হবে। সব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের সামনে নতুন মৌসুম হাজির হয়েছে অস্বস্তির চোখরাঙানি দিয়েই। অধিনায়ক দানি কারভাহাল তো বিরক্তমুখে বলেই দিয়েছেন, ‘এসবের কোনো মানে হয় না।’
২০২৪-২৫ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ স্পেনে খেলবে তিনটি প্রতিযোগিতায়—লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল রে। আর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা চারটি—উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, কন্টিনেন্টাল কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এর মধ্যে লা লিগায় ম্যাচসংখ্যা নির্ধারিত। ২০ দলের লিগে আগস্ট থেকে আগামী মে পর্যন্ত খেলতে হবে ৩৮ ম্যাচ।
কোপা দেল রেতে রিয়াল খেলবে রাউন্ড অব থার্টি টু থেকে। এটা নকআউটভিত্তিক টুর্নামেন্ট। জিতলে ম্যাচসংখ্যা বাড়তে থাকবে, হারলে বিদায়। এবারের কোপা দেল রেতে রিয়ালের প্রথম ম্যাচ জানুয়ারিতে। স্পেনের ঘরোয়ায় রিয়ালের তৃতীয় টুর্নামেন্ট স্প্যানিশ সুপার কাপ। এখানে কার্লো আনচেলত্তির দল শুরু করবে সেমিফাইনাল পর্ব থেকে, যা হওয়ার কথা জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে।
মহাদেশীয় দুই টুর্নামেন্টের মধ্যে উয়েফা সুপার কাপের ফাইনাল আজ রাতেই হয়ে যাবে। অন্যটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতায় এবার ৪টি দল বেড়ে যাওয়ায় ম্যাচসংখ্যাও বাড়বে। লিগ পর্বেই সব দলকে খেলতে হবে ৮টি ম্যাচ। এরপর শেষ ষোলো হয়ে সামনের দিকে যেতে পারলে প্রতি পর্বে দুটি করে ম্যাচ বাড়বে। ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রিয়াল যে টুর্নামেন্টের ১৫ ম্যাচই খেলতে চাইবে, সেটি না বললেও চলে। আগস্টের শেষ সপ্তাহে শুরু হতে চলা চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৩১ মে।
রিয়ালের সামনে আছে ফিফার দুটি টুর্নামেন্টও। প্রথমটি ফিফা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ। ক্লাব ফুটবলের মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল এবারও ফিরছে। রিয়াল সরাসরি ফাইনাল খেলবে, যা হওয়ার কথা ১৮ ডিসেম্বর। আর সবার শেষে আছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এবারই প্রথম ক্লাব বিশ্বকাপ হবে ৩২ দলে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শুরু হবে ২০২৫ সালের জুনে। ফিফা এখনো পুরো টুর্নামেন্টের বিস্তারিত সূচি ঘোষণা করেনি। তবে ১৫ জুন শুরু হয়ে ফাইনাল হবে ১৩ জুলাই।
সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে ৭২টি (সব কটির ফাইনালে গেলে) ম্যাচ খেলতে হবে রিয়াল মাদ্রিদকে। ১১ মাসের মধ্যে ৭২ ম্যাচ মানে প্রতি মাসে ৬টির বেশি ম্যাচ খেলতে হবে। অনেক খেলোয়াড়ের জন্য ৬টি ম্যাচই যথেষ্ট নয়। কারণ, একই সময়ে ফিফা উইন্ডো আছে চারটি। জাতীয় দলগুলো এ সময়ে অন্তত ২টি করে মোট ৮টি ম্যাচ খেলবে। ২০২৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপ বলে ম্যাচগুলো হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগও নেই। মোটের ওপর রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের সামনে এখন তুমুল ব্যস্ততার এক মৌসুম। বেশি খেলার অর্থ একদিকে পরিবারের জন্য কম সময়, অন্যদিকে বেশি চোটের ঝুঁকি।
এমন ঠাসা সূচি স্বাভাবিকভাবেই ফুটবলারদের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। রিয়াল অধিনায়ক কারভাহাল যেমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিরক্তির সঙ্গে, ‘এসবের কোনো মানে হয় না। এক মৌসুমে ৭২টি ম্যাচ খেলা যায় না। এত এত ম্যাচ আর ভ্রমণের মধ্যে নিজেদের মান ধরে রাখা অসম্ভব। সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে মাথা ঘামানো দরকার। এর কারণে আমরা এবং আমাদের পরিবারকে ভুগতে হয়।’
খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কোচের জন্য ঠাসা সূচি কম ঝক্কির নয়। অনুশীলন আর ম্যাচ ঘিরে চাপ তো আছেই, মাদ্রিদভিত্তিক ক্রীড়া দৈনিক মার্কার হিসাব অনুসারে, আনচেলত্তিকে ১৫০টির মতো সংবাদ সম্মেলনেও বসতে হবে। ইতালিয়ান এই কোচ অবশ্য বেশি সাফল্যের সম্ভাবনাও দেখছেন, ‘খুবই ব্যস্ততাময় এক মৌসুম যাবে, যেটায় আবার খুব সফল হওয়ারও সুযোগ আছে। তবে কারভাহাল যেটা বলেছে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ওদের ভুগতে হয়।’