‘সেই ম্যাচটির কথা মনে আছে?’
‘কোন ম্যাচটি বলুন তো?’ দ্রুতই পাল্টা প্রশ্ন ইমতিয়াজ সুলতান জনির। আরে, সেই ম্যাচটি! আপনারা যে ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে কুয়েতের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক ডিফেন্ডারকে ৩৭ বছর পেছন ফিরিয়ে নেওয়া হলেও কিছুক্ষণ চিন্তা করেও ম্যাচটির কোনো স্মৃতি মনে করতে পারেননি। বললেন, ‘এখন আর কিছু মনে নেই। সেই কবেকার কথা।’
দীর্ঘ ৩৭ বছর পর আজ আবার কুয়েতের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশের। আজই বেলা সাড়ে তিনটায় সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে দুদল মুখোমুখি হচ্ছে বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে। সে জন্যই ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ কুয়েতের সঙ্গে খেলা সেই ম্যাচের ফুটবলারদের কাছে ফিরে যাওয়া। কিন্তু ম্যাচটা নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলারদের স্মৃতিতে ধুলো জমেছে। সেই ধুলো ঝেড়েও কিছুই বলতে পারলেন না খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল বা কায়সার হামিদের মতো ফুটবলাররাও।
ওয়াসিম বরং প্রশ্ন করলেন এই প্রতিবেদককে, ‘কুয়েতের সঙ্গে আমরা সেবার খেলেছিলাম? কী জানি, আমার তো মনে পড়ছে না।’ ‘হ্যাঁ, সেবার বাংলাদেশ দল কুয়েতের সঙ্গে খেলেছিল’ বলার পর ওয়াসিম বললেন, ‘আমার আসলে কিছু মনে নেই। অনেক দিন আগের কথা তো। এগুলো আমার মনে থাকে না।’
কায়সার হামিদের কথা শুনেও হতাশ হতে হলো, ‘কত কত ম্যাচ খেলেছি। এগুলো এখন আর মনে নেই। কুয়েতের ম্যাচ নিয়েও কিছু বলতে পারব না। দেখি যদি মনে পড়ে বলব’—এ–ই হলো কুয়েত ম্যাচ নিয়ে কায়সার হামিদের কথা।
স্মৃতিশক্তির পরীক্ষায় জনি, ওয়াসিম বা কায়সার থেকে শেখ আসলামকে একটু আলাদা মনে হলো। চট করেই তিনি বলেননি যে কুয়েতের সঙ্গে সেই ম্যাচের কোনো স্মৃতি মনে নেই। শেখ আসলাম একটু সময় নিলেন। বলে রাখা ভালো, এশিয়ান গেমসে সেবার বাংলাদেশ দল চারটি ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে কুয়েত, ইরান ও জাপান—এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের এই তিন দলের সঙ্গেই ৪-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
ভাববেন না হারের পর হারের বিধ্বস্ত ছিল বাংলাদেশ। সেই সফরে আছে জয়ের আনন্দও। সেটি নেপালের সঙ্গে। আর তাতে বড় অবদান শেখ আসলামের। তাঁর গোলেই একমাত্র জয় নেপালের সঙ্গে (১-০)। নেপাল ম্যাচটা নিয়ে আসলাম ফিরলেন ৩৭ বছর পেছনে, ‘ওই ম্যাচটায় আমার গোল আছে। কী যে আনন্দ হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না।’
আসলাম পেছন ফিরে তাকালেন, ‘কুয়েতের কাছে আমরা চারটি গোল খেয়েছিলাম, মনে পড়ছে ম্যাচটার কথা।’ তারপর ফিরে যান ম্যাচের স্মৃতিতে, ‘আসলে তখন কুয়েতের আক্রমণভাগ ছিল তুখোড়। স্ট্রাইকাররা খুব ভালো ছিল। একটা স্ট্রাইকার ছিল বেশ লম্বা, ওকে ধরে রাখতে পারছিল না আমাদের ডিফেন্স। আমাদের ডিফেন্স তখন নড়বড়ে ছিল। এই সমস্যাটা আমরা সেদিন এড়াতে পারিনি। আক্রমণে আমরা ভালোই খেলছিলাম। আমাদের কীভাবে কড়া মার্কিংয়ে রাখা যায়, সেই চেষ্টা কুয়েত করছিল। কিন্তু রক্ষণে সমস্যা হয়, যে কারণে ৪টি গোল খেয়ে যাই।’
সেই সফরে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন মিডফিল্ডার খুরশিদ বাবুল।গোলকিপার ছাইদ হাসান কানন। ছিলেন মোস্তফা কামাল, মোনেম মুন্না, শিমুল, সম্রাট হোসেন এমিলিরা।
এশিয়ার এক সময় ওপরের সারির দল কুয়েত ফিফা তালিকায়ও ছিল ওপরের দিকে। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ফিফার তালিকায় ১৯৪টি দেশের মধ্যে ২৪ নম্বরে ছিল কুয়েত। এটাই দেশটির সর্বোচ্চ অবস্থান। মাঠে কুয়েতের নৈপুণ্যও ছিল তখন সমীহ করার মতো। কুয়েত ১৯৮০ সালে এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন। ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপ খেলেছে। কিন্তু মাঝে ৩ বার ফিফার নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি ফিফার তালিকায় এখন আর শক্ত অবস্থানে নেই। দলটি এখন নিজেদের ছায়া। কুয়েতের বর্তমান অবস্থান সেটাই বলছে। ফিফার তালিকায় তারা এখন ১৪১।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম যে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছে, সেটিতে দেখা হয়েছিল কুয়েতের সঙ্গে। ১৯৭৩ মারদেকায় কুয়েতের কাছে বাংলাদেশের হার ২-১ গোলে। বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি করেছিলেন এনায়েতুর রহমান খান, দীর্ঘদিন ধরেই যিনি কানাডাপ্রবাসী।
১৯৭৩ ও ১৯৮৬। এ দুবারই কুয়েতের সঙ্গে খেলোর সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের। তৃতীয়বার মুখোমুখি আজ। বেঙ্গালুরু সাফে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচেই ভালো খেলে সেমিফাইনালে এসেছে। ভারতকে পেছনে ফেলে কুয়েত গ্রুপসেরা হয়ে এসেছে শেষ চারে। আজ ফেবারিট কুয়েতই।
তবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ লড়াই করতে পারে। এমনকি কুয়েতকে হারিয়ে ১৮ বছর পর সাফের ফাইনাল খেলার স্বপ্নও দেখছেন লাল-সবুজের দল। সেটি যদি মাঠের পারফরম্যান্সে অনূদিত করতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!