এবার গার্দিওলার সিটি দেখাল এভাবেও পয়েন্ট হারানো যায়
অবিশ্বাস্য বললেও যেন কম বলা হয়।
মাঠটা প্রতিপক্ষের নয় ম্যানচেস্টার সিটিরই ঘরের মাঠ ইতিহাদ। ডাচ ক্লাব ফেইনুর্ডের বিপক্ষে সিটি সেখানে ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু এরপর কী ভর করল কে জানে! ৭৫, ৮২ ও ৮৯ মিনিটে তিন গোল করে ম্যাচে ফিরল ডাচ ক্লাবটি। আর সিটি? চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত তিন গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও জয় না পাওয়া প্রথম দল হয়ে মাঠ ছেড়েছে ইংলিশ ক্লাবটি!
অবিশ্বাসের মাত্রা আরও বাড়তে পারে যদি সিটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আপনার জানা থাকে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৫ ম্যাচ হেরে ফেইনুর্ডের মুখোমুখি হয়েছিল পেপ গার্দিওলার দল। ৩ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর সিটি হারের বৃত্ত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে এমনটা ভাবাই ছিল স্বাভাবিক। হ্যাঁ, হারের বৃত্ত ঠিকই কাটিয়ে উঠল সিটি। তবে যেভাবে কাটাল সেটা হারের চেয়ে কম কী! ৭৫ মিনিটের পর ম্যাচের বিভিন্ন পর্যায়ে সিটি কোচ গার্দিওলাকে অবিশ্বাস ও হতাশার মিশেলে মাথায় হাত বোলাতে দেখা গেছে। ভাগ্যিস, গার্দিওলার মাথায় চুল নেই। হয়তো ছিঁড়েই ফেলতেন!
গতকাল রাতের এই ম্যাচসহ সিটির সর্বশেষ ৬ ম্যাচের স্কোরের তাকালে একটি বিষয় পরিষ্কার—বালির বাঁধ হয়ে উঠেছে তাঁদের রক্ষণ। গত ৩০ অক্টোবর থেকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ নিয়ে টানা ৬ ম্যাচে ন্যূনতম ২টি করে গোল হজম করল সিটি। অর্থাৎ, যে দলটা অক্টোবর পর্যন্তও ঠিকঠাক ছিল, নভেম্বরে এসে সেই দলটার অবস্থাই তথৈবচ। অথচ গার্দিওলার এই দলটাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে টানা চারবারের চ্যাম্পিয়ন, এই দলটাই গত কয়েক মৌসুম ধরে দাপট বিস্তার করেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে। বিশ্বাস হয়? যদি তাও না হয়, তাহলে আরেকটি তথ্য—সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৬ ম্যাচে সিটির ন্যূনতম ২টি করে গোল হজমের সর্বশেষ নজির দেখা গিয়েছিল, ব্রিটেনে ‘দ্য গ্রেট ট্রেইন রবারি’র বছর, টটেনহাম যে বছর তাঁদের ইতিহাসে একমাত্র ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ জিতেছিল এবং এদিকে আইয়ুব খান ক্ষমতায়—১৯৬৩! সে বছর ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগ থেকে নেমেও গিয়েছিল সিটি।
এবার সিটির তেমন সম্ভাবনা না থাকলেও তাঁদের রক্ষণভাগ যেখানে নেমেছে, সেটাকে সম্ভবত পাতাল বলে। সেই পাতালে নামার আগেও উড়ছিল সিটি। ৪৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে আর্লিং হলান্ডের গোল, ৫০ মিনিটে দূরপাল্লার শটে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইলকায় গুন্দোয়ান এবং তার ৩ মিনিট পর আরও একটি গোল করেন হলান্ড। কিন্তু ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে সত্যিকার অর্থেই সিটির রক্ষণ আর খোলা দুয়ারের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না! সিটি ডিফেন্ডার ইয়েস্কো গাভার্দিওলের বেখেয়ালি ব্যাক পাসের সুযোগ নিয়ে গোল করেন ফেইনুর্ডের ফরোয়ার্ড আনিস হাজ মুসা। ৭ মিনিট পর আবারও গোল এবং সেই গোলের শুরুতেও ছিল গাভার্দিওলের অপরিণামদর্শী পাস। সেখান থেকে জর্ডান লোতোম্বার ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে গোল করেন ডাচ ক্লাবটির ফরোয়ার্ড সান্তিয়াগো হিমিনেজ। গোলটি দেখে গার্দিওলার যেন বিশ্বাসই হয়নি। ডাগ আউটে কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু ভোগান্তির সেখানেই শেষ নয়। ৮৯ মিনিটে ফেইনুর্ডের ডেভিড হানকোর করা সমতাসূচক গোলেও ভুল করেন সিটি গোলকিপার এদেরসন।
এই ৬ ম্যাচে ১৭ গোল হজম করা সিটির সমস্যাটা কি? ক্লাবটির কোচ গার্দিওলা হারের পর বলেছেন, ‘আমি জানি না সমস্যাটা মানসিক কি না। প্রথম ও দ্বিতীয় গোলটি হতে পারে না। এরপর আমরা ভুলে গিয়েছিলাম কী ঘটেছে, ভালো করতে মরিয়া ছিলাম। সেটা করেওছি কিন্তু জিততে পারিনি।’ সংবাদ সম্মেলনে আসার পর গার্দিওলা নাকে ও মাথায় হালকা লালচে ক্ষত দেখা গেছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে সিটি কোচ মজা করে বলেছেন, ‘আমার আঙুলে নখ আছে। আমি নিজের ক্ষতি করতে চাই। শুভ রাত্রি।’
কিন্তু রাতটা আসলে শুভ হয়ে এসেছিল ফেইনুর্ডের জন্য। চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও হার এড়াতে পারা প্রথম দল ফেইনুর্ড। ডাচ ক্লাবটির কোচ ড্রয়ের পর বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষের মাঠে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর এবং সেটাও বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে, তারপর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে নেওয়া অবিশ্বাস্য ব্যাপার।’
আর সিটির জন্য অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, ৩৬ দলের এই চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বে ১৫তম স্থানে নেমে যাওয়া। ৫ ম্যাচে ২ জয়, ২ ড্র ও ১ হারে তাদের সংগ্রহ মাত্র ৮ পয়েন্ট। বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, গত মাসেও উড়তে থাকা দলটি এই মাসে এসে পাতালে পড়বে তা ভেবেছিলেন!