‘রোনালদোর রেকর্ড ভাঙা অসম্ভব’, বেনজেমার কাছে দলের জয়ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ
ফিফা ‘বেষ্ট’, উয়েফা বর্ষসেরা কিংবা ব্যালন ডি’অর—ব্যক্তিগত বড় তিন পুরস্কারের মধ্যে এই প্রথম কিছু জিতলেন করিম বেনজেমা। ইস্তাম্বুলে কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র অনুষ্ঠানে উয়েফার বর্ষসেরা হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়।
তাঁর জয়টাও ভূমিধস জয়ের মতো—দ্বিতীয় কেভিন ডি ব্রুইনা পেয়েছেন ১২২ ভোট, তৃতীয় থিবো কোর্তোয়া ১১৮। আর বেনজেমা পেয়েছেন ৫২৩ ভোট। বোঝাই যাচ্ছে, বেনজেমা যে এবার উয়েফার বর্ষসেরা হবেন, তা নিয়ে দ্বিধা ছিল খুব কম। তবে এটাই শেষ নয়!
চ্যাম্পিয়নস লিগে গত মৌসুমে রিয়ালের সঙ্গে শিরোপা জিতেছেন বেনজেমা। সর্বোচ্চ ১৫ গোল করেছেন এই টুর্নামেন্টে। সর্বোচ্চ গোল করে জিতেছেন লা লিগাও। গত মৌসুমজুড়ে ৪৬ ম্যাচে ৪৪ গোল। রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি কাল উয়েফার অনুষ্ঠানে বলছিলেন, ‘বেনজেমাকে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান, ফুটবলও তাকে পেয়ে ভাগ্যবান।’
বেনজেমা ভাবতে পারেন, তাঁর ভাগ্যে এখন ব্যালন ডি’অর থাকলেই হয়! নভেম্বরে বিশ্বকাপ খেলতে কাতারে যাওয়ার আগে অক্টোবরে ব্যালন ডি’অর-টা হাতে তুলতে পারলে, এর চেয়ে বড় আত্মবিশ্বাস অর্জন আর হয় না। তবে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের জয়ই বেনজেমার কাছে বেশি প্রাধান্য পায়। কাল উয়েফা ‘প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ ট্রফি হাতে বলছিলেন, ‘৩৪ বছর বয়সে ভালোই খেলছি। এটা সত্য যে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এটাই (গত) আমার সেরা মৌসুম। কিন্তু একটি বিষয় কখনো পাল্টায়নি। দলকে কীভাবে জেতাতে পারব, এটা ভেবে মাঠে নামি। ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, দলের জয়ই আগে আমার কাছে।’
গত মৌসুমে রিয়ালের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে বেনজেমার বেশি ভূমিকা আর কার ছিল! ১২ ম্যাচে ১৫ গোলের পথে শেষ ষোলোয় পিএসজি ও কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক, ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষেও সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে করেন তিন গোল—এমন পারফরম্যান্সের পর ভোটের বিশাল ব্যবধানে বেনজেমার এই পুরস্কার জিতে নেওয়াই তো স্বাভাবিক।
অবশ্য তাঁর মতে, এবার চ্যাম্পিয়নস জয়টাই সবচেয়ে কঠিন ছিল, ‘একেকটি শিরোপার ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য একেকরকম। যে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছি, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল। আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দরও, কারণ ঘুরে দাঁড়িয়ে তুলে নেওয়া জয়গুলো এবং আমরা কখনো হাল ছাড়িনি।’
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়ালে থাকতে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার সুযোগ পাননি বেনজেমা। অনেকটাই রোনালদোর সহকারীর ভূমিকায় ছিলেন, গোল করার চেয়ে বানিয়েছেন বেশি। রোনালদো ২০১৮ সালে রিয়াল ছাড়ার পর থেকে বেনজেমা নিজেকে পাল্টে দলের মূল গোলদাতার দায়িত্ব নিয়েছেন, এর পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে গোলও করাচ্ছেন। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদোর ১৪০ গোলের রেকর্ড টপকে যাওয়ার আশা করেন না এই ফরাসি তারকা। রোনালদো এখনো খেলে চলায় তাঁর গোলসংখ্যা আরও বাড়তে পারে। চ্যাম্পিয়নস লিগে এ পর্যন্ত ৮৬ গোল করা বেনজেমার ভাবনায় অবশ্য এসব রেকর্ড নেই।
দলের জয়ই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। তার সঙ্গে আমার ভূমিকাটা অন্যরকম ছিল। সে যাওয়ার পর আমার গোলসংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে। রিয়ালের কিংবদন্তিদের চেয়ে নিজেকে খুব বেশি দূরে মনে হয় না। এতে আত্মবিশ্বাস পাই। তবে এটা জানি, রোনালদোর গোলসংখ্যা ছোঁয়া আমার জন্য অসম্ভব। এ কারণে মাঠে নেমে শুধু দলের জয় নিয়েই ভাবি। সংখ্যা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি শুধু গোল আর শিরোপার জন্য খেলি না, আমি ফুটবল ভালোবাসি। যদিও বিশ্বকাপ ও ব্যালন ডি’অর জয়ের ইচ্ছা আছে।’
উয়েফার বর্ষসেরা কোচ আনচেলত্তিরও প্রশংসা করলেন বেনজেমা, ‘আমি যত কোচের অধীনে খেলেছি, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা। মরিনিও ও জিদানও রিয়ালে অসাধারণ কাজ করেছেন। কিন্তু আনচেলত্তি চলে যাওয়ার পর শেষ সহায় হিসেবে ফিরেছেন রিয়ালে। এরপর আমরা সুপার কাপ, লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছি। তিনি এমন কেউ যে, ম্যাচের বিরতিতে আমাদের আত্মবিশ্বাসের জোগান দেন এবং আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নামি, শুধু তিনি-ই এটা করেন।’