ইয়ামালকে কেউ বলুক, চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে হাঁটলে হবে না

ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে বার্সেলোনা তারকা ইয়ামালের রাতটা ভালো যায়নিএক্স

সপ্তাহখানেক আগে যে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বার্সেলোনা ডর্টমুন্ডকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল, কাল রাতে সিগনাল ইদুনা পার্কে কি সেই দলটাই খেলল?

একাদশে মাত্র তিনটি পরিবর্তন। তারপরও কাল দেখে মনে হলো, এ যেন অন্য এক বার্সেলোনা! ইংরেজিতে একটা কথা আছে—‘অ্যাক্ট লাইক ইউ হ্যাভ বিন দেয়ার বিফোর।’ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাকে কাল দেখে মনেই হয়নি ওরা চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মঞ্চটা চেনে। বরং মাঠে কয়েকজন বার্সা খেলোয়াড়ের মুখচোখ দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা বুঝি ভাবছেন, ‘এ বাবা, এত বিশাল চাপ। খেলব কী করে!’

একদিক থেকে দেখলে, এ রকম ভাবনা আসা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছুও নয়। এই বার্সেলোনা দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় তো জানেনই না চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বাদ কেমন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, কোচ হান্সি ফ্লিক ও ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভানডফস্কি ছাড়া আর কেউ না।

আরও পড়ুন

ফলে যেটা হয়েছে, খেলা দেখে মনে হয়েছে, বার্সেলোনা বুঝি সিগনাল ইদুনা পার্কে গেছে গুগল ম্যাপে লোকেশন দেখে। জায়গাটা এতই অচেনা তাদের! ফলে ৪-০ গোলে প্রথম লেগ এগিয়ে থাকার পরও বার্সা সমর্থকদের মনে লিভারপুল, রোমার ভূত তাড়া করে গেছে। ভাগ্যিস ডর্টমুন্ডের জয়ের ব্যবধানটা ৩-১ এর বেশি হয়নি।

দায়টা অবশ্যই কোচ হান্সি ফ্লিককে নিতে হবে। শুরু থেকেই যখন বুঝতে পারলেন কিছু হচ্ছে না, ‘ঘুম থেকে ওঠো’ বাটন চেপে দেওয়া দরকার ছিল তখনই। ফ্লিক পুরো ক্যারিয়ারে এমন পরিস্থিতি কত সামলে এসেছেন, সেটা বোঝা গেল না মোটেও।
সবচেয়ে বেশি ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন লামিনে ইয়ামাল।

বার্সেলোনাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ডর্টমুন্ড
এএফপি

বার্সেলোনার বিস্ময় বালক! মাত্র দুই দিন আগে লেগানেসের সঙ্গে ম্যাচটায় তাঁকে পুরোটা সময় খেলানো হয়েছে। এরপরও কেন কাল তাঁকে শুরু থেকে নামানো হলো, সেটা বড় প্রশ্ন। হ্যাঁ, ১৭ বছরের ইয়ামালের ভেতরে আগুন আছে। কিন্তু প্রতিদিন আগুন জ্বালালে কয়লাও তো পুড়ে ছাই হয়ে যায়!

ফ্লিক একাদশ থেকে বিশ্রাম দিলেন পেদ্রিকে। অথচ তাঁকেই বরং দরকার ছিল শুরু থেকে। বলটা অন্তত বার্সেলোনার পায়ে থাকত।

ফ্লিক একাদশ থেকে বিশ্রাম দিলেন পেদ্রিকে। অথচ তাঁকেই বরং দরকার ছিল শুরু থেকে। বলটা অন্তত বার্সেলোনার পায়ে থাকত। মাঝমাঠটা একটু শক্ত থাকত, আর দু-একটা ভালো আক্রমণও হয়তো দেখা যেত। শুরুতে পেদ্রি না থাকায় বার্সেলোনা গোছানো কোনো আক্রমণই গড়তে পারল না। বিরতির আগের পরিসংখ্যান দেখুন—ডর্টমুন্ড ১০টা শট মেরেছে, ৭টা ছিল গোলে। আর বার্সেলোনা? একটাও গোলে মারতে পারেনি!

ক্লান্ত ইয়ামালকে দেখে মনে হলো কোনো কিছুতেই তাঁর আগ্রহ নেই। এটা অবশ্য নতুন দৃশ্য নয়। এর আগেও এমন হয়েছে। বড় ম্যাচ এলেই ‘বিস্ময় বালক’ কেমন যেন গায়েব হয়ে যান।

৬ বছর পর সেমিতে উঠেছে বার্সা
এএফপি

আর ইয়ামাল খেলেন জুলস কুন্দের সামনে। কুন্দের নিজেরও হয়তো বিশ্রাম দরকার। এর মধ্যে যদি ইয়ামাল হেঁটে বেড়ায়, তাহলে চাপটা পুরো গিয়ে পড়ে কুন্দের ওপর। ইয়ামাল প্রেস করছেন না, ওপরে ওঠার পর নিচে নামার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, এ রকম অবস্থায় কুন্দে আর বার্সার হাইলাইন ডিফেন্সের অবস্থা হয়ে গিয়েছিল রীতিমতো অসহায়।

সবার আগে ইয়ামালকে কারও বোঝানো উচিত, তিনি লিওনেল মেসি নন। এখনো হতে পারেননি। বার্সেলোনাকে তিনি এখনো কিছুই জেতাতে পারেননি। ফলে মাঠে হেঁটে বেড়ানোটা তাঁকে মানায় না। ফ্লিকেরই বলা উচিত কথাটা।

আরও পড়ুন

বরং রাফিনিয়া ছিলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। আন্তর্জাতিক বিরতির পর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডও পুরো ছন্দে ফেরেননি। তবে কাল রাতে অন্তত জান দিয়ে চেষ্টা করেছেন। জেরার্দ মার্তিনকে সাহায্য করার জন্য ওপরে-নিচ সমানে দৌড়েছেন। কিন্তু বাকিরা বোধ হয় তাঁকে দেখেননি।

প্রথম লেগটাই আপাতত বাঁচিয়ে দিয়েছে বার্সাকে। ফলে গত রাতে হারের পরও ৫-৩ ব্যবধানে জিতে উঠে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে। তবে পাশাপাশি ডর্টমুন্ড ম্যাচ এই সতর্ক বার্তাও দিয়ে দিল—সেমিফাইনালে এভাবে খেলতে শুধু হারতেই হবে না, হাসির খোরাক হতে হবে।

আরও পড়ুন

অথচ ফ্লিকের অধীন দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়েছে বার্সা। কিন্তু মানুষ আসলে শেষটাই শুধু মনে রাখে। আর শেষটায় বার্সেলোনার চ্যালেঞ্জ অনেক। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল তো আছেই, লা লিগাও এখনো নিশ্চিত নয়। রিয়াল মাদ্রিদ ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে সেখানে। কোপা দেল রের ফাইনালেও প্রতিপক্ষ সেই রিয়াল মাদ্রিদ।

ইয়ামালদের ঘুম যত দ্রুত ভাঙাতে পারেন ফ্লিক, তাঁর জন্য তত ভালো।