গোল যতই হোক, যখনই হোক, শেষ পর্যন্ত রিয়ালই জেতে

জয়সূচক গোলের পর রুডিগারের উদ্‌যাপনরয়টার্স

রিয়াল ৪-৪ সোসিয়েদাদ

(দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে রিয়াল জয়ী)

রাফায়েল নাদালকে দেখা যাচ্ছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর গ্যালারিতে। গালে হাত দিয়ে চিন্তা ক্লিষ্ট মুখে বসে ছিলেন। মাঠে তাঁর প্রাণের দল রিয়াল মাদ্রিদ। কোপা দেল রে ফাইনালে উঠতে পারবে কি না, তা নিয়ে নাদালের মতো দুশ্চিন্তায় ছিলেন রিয়ালের আরও অনেক সমর্থক। ১১৫ মিনিটে মাথার এক টোকায় সব দুশ্চিন্তা দূর করলেন আন্তনিও রুডিগার।

আরদা গুলেরের নেওয়া কর্নার থেকে হেডে গোল করেন রিয়াল ডিফেন্ডার। সেমিফাইনাল ফিরতি লেগের ম্যাচে তখন ৪-৪ গোলের সমতা আর দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। তখন নাদালের উল্লাস দেখে কে! বার্নাব্যু গর্জে ওঠার সঙ্গে নাদালও আসন ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন। হাত-পা ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করে মুখের ভঙ্গিটা এমন করলেন যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছুটল!

তা নয় তো কি? গত ফেব্রুয়ারিতে সান সেবাস্তিয়ানে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে প্রথম লেগ ১-০ গোলে রিয়াল জেতার পর তাদের ঘরের মাঠে ফিরতি লেগ আরও সহজ হবে ভেবে নেওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু গতকাল রাতে ফিরতি লেগের স্কোরকার্ডে লেখা হয়েছে অন্য গল্প। যেখানে ৮ গোলের রোমাঞ্চের মধ্যে আছে রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পও। ফিরতি লেগে তিনবার পিছিয়ে পড়েও ড্র করেছে রিয়াল। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলের জয়ে নিশ্চিত হয়েছে ফাইনাল। আর এতেই আরও একবার প্রমাণ হলো, ম্যাচে গোল যতই হোক, যখনই হোক, শেষ পর্যন্ত রিয়ালই জেতে!

আরও পড়ুন

রিয়াল ০-১ গোলে পিছিয়ে পড়েছে ম্যাচের ১৬ মিনিটে। ভিনিসিয়ুসের ডিফেন্স চেরা পাস থেকে দারুণ এক চিপে রিয়ালকে সমতায় ফেরান একাদশের হয়ে নামা এনদ্রিক। ডেভিড আলাবার আত্মঘাতী গোলে ৭২ মিনিটে রিয়াল আবারও পিছিয়ে পড়ে ১-২ গোলে। ৮০ মিনিটে সেই পিছিয়ে পড়ার ব্যবধানই দাঁড়ায় ১-৩। জুড বেলিংহামের ৮২ মিনিটের গোল ও চার মিনিট পর অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির গোলে সমতায় ফেরে রিয়াল। কিন্তু যোগ করা সময়ের ৩ মিনিটে মিকেল ওইরাজাবালের গোলে আবারও এগিয়ে যায় রিয়াল সোসিয়েদাদ। শেষ পর্যন্ত রুডিগারে রক্ষা।

সোসিয়েদাদ ম্যাচে একাধিকবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পারেনি
রয়টার্স

জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি জানিয়েছেন, ১-৩ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায়ও বিদায়ের ভয় তিনি পাননি, ‘বিদায় নিতে হবে এটা মাথায় আসেনি। বার্নাব্যুতে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। এমন ম্যাচে, এমন পরিবেশে যখন আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে, আমরা কখনো হাল ছাড়ি না।’ আনচেলত্তি স্বীকার করেছেন ম্যাচে অনেক ভুল করেছে তাঁর দল। তবে ফাইনালে উঠতে পেরে সেসব ভুল আর মনে রাখছেন না ইতালিয়ান এ কোচ, ‘আমাদের লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। আমরা আরেকটি ফাইনালে। অনেক ভালো কিছু হয়েছে, অনেক ভুলও করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা পেরেছি।’

আরও পড়ুন

পাঁচ বছর আগে এই বার্নাব্যুতেই কোপা দেল রে কোয়ার্টার ফাইনালে সোসিয়েদাদের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে ৪-৩ গোলে হেরেছিল রিয়াল। সেবার শিরোপা জেতা সোসিয়েদাদ এবার না পারলেও কিন্তু বার্নাব্যুর ইতিহাস লেখা হয়েছে নতুন করে। রিয়ালের মাঠে এটাই প্রথম ৪-৪ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচ। অন্যরকম এক মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন চুয়ামেনিও। রিয়ালের ইতিহাসে ১০ হাজারতম গোলটি তাঁর। জয়ের পর রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে এই ফরাসি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘কেমন লাগছে সেটা কীভাবে বোঝাব ঠিক জানি না। হ্যাঁ আমরা খুশি কারণ ফাইনালে খেলব। কিন্তু ম্যাচে তাকালে পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি হওয়ার সুযোগ নেই।’

চিপ করে গোল করেন এনদ্রিক
রয়টার্স

কিলিয়ান এমবাপ্পেকে বেঞ্চে বসিয়ে এনদ্রিককে একাদশে খেলান রিয়াল কোচ আনচেলত্তি। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে ডেভর সুকারের পর রিয়ালের নিজের প্রথম মৌসুমেই কোপা দেল রে-তে ন্যূনতম ৫ গোল করলেন এই ব্রাজিলিয়ান। এই টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচে করলেন ৫ গোল। আর মৌসুমে এ পর্যন্ত ৫৬২ মিনিট মাঠে থেকে করলেন ৭ গোল। রিয়াল মাদ্রিদ টিভিকে এনদ্রিক বলেছেন, ‘মাঠে নামলে আমাকে সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণভাগে বিশ্বের সেরা চারজন থাকায় আমি জানি এখানে খেলা কত কঠিন। তবে সুযোগ পেলে আমাকে দলকে সাহায্য করতে হবে।’

সেভিয়ায় আগামী ২৬ এপ্রিল ফাইনালে রিয়ালের প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা অথবা আতলেতিকো মাদ্রিদ। সেমিফাইনাল ফিরতি লেগে আজ রাতে মুখোমুখি হবে বার্সা ও আতলেতিকো। প্রথম লেগে ৪-৪ গোলে ড্র করেছে দুই দল।