লুটনের মাঠে গেলে দেখা হবে কুক ও পানেসারের সঙ্গে
ওয়েম্বলিতে ২৭ মে প্লে-অফ ফাইনালে টাইব্রেকারে জিতে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগে উঠেছে লুটন এফসি। একসময়ে ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ স্তরে নিয়মিত খেলা ক্লাবটি অবশ্য হারিয়েই যেতে বসেছিল। ৯ বছর আগেও লুটন ছিল নন-লিগ দল। এমনকি ১২ বছর ধরে চ্যাম্পিয়নশিপেও (ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর) অনুপস্থিত ছিল ক্লাবটি। লুটনের প্রিমিয়ার লিগের গল্পে তাই মিশে আছে অনেক আবেগ। ওয়েম্বলির ফাইনালটি মাঠে বসে দেখেছেন লুটনের সমর্থক দুই সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার—সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক ও বাঁহাতি স্পিনার মন্টি পানেসার। লুটনের প্রিমিয়ার লিগে ওঠা নিয়ে দ্য টেলিগ্রাফে আবেগঘন এক কলাম লিখেছেন পানেসার। সেটিরই অনুবাদ—
আপনারা হয়তো আমাকে ও অ্যালিস্টার কুককে ওয়েম্বলিতে দেখেছেন। গত শনিবার সেখানে লুটনকে আমরা প্লে-অফ ফাইনাল জিততে দেখেছি। আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা দিন ছিল সেটি।
আমার সর্বস্বজুড়েই লুটন। জন্ম লুটনের ডানস্ট্যাবল হাসপাতালে, স্কুল লুটনে, খেলেছিও বেডফোর্ডশায়ারের হয়ে। তবে আপনারা হয়তো এটি জানেন না, কুকিরও (কুক) মৌসুম-টিকিট কাটা। তাঁর শ্বশুর অনেক বছর ধরেই এ ক্লাব সমর্থন করছেন, ওদের পুরো পরিবারই কট্টর সমর্থক।
সেদিন প্রথমবার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার মতোই নার্ভাস ছিলাম আমি। কুকির অবস্থাও অমনই ছিল। টেনশনে কমলা রঙের টাইটা আলগা করতে হয়েছিল তার। লুটনের জয়টা আসলে অতুলনীয়।
ওয়েম্বলির রয়্যাল বক্সে কুকির সঙ্গে লুটন টাউনকে প্রিমিয়ার লিগে উঠতে দেখার দিনটা আমার সব সময় মনে থাকবে। আনন্দ অশ্রুতে ভেসেছি আমরা। আশপাশে কেউ থাকলে সহজেই বুঝে যেত, আমরা কাদের সমর্থন করছি। প্রথমার্ধে তো কুকি ক্রমাগত ধারাভাষ্য দিয়ে যাচ্ছিল—‘কাম অন’, ‘এখন পাস দাও’, ‘লাইন ধরে এগোও’। বারবার বলছিল এসব।
হাফ টাইমে কেউ যদি এসে এই দুই সাবেক ইংল্যান্ড ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসা করতেন যে স্কোরলাইন কী হওয়া উচিৎ ছিল প্রথমার্ধে, তারা বলত—নিঃসন্দেহে ৩-০। এরপরও লুটনের এভাবে পার হওয়া, প্রিমিয়ার লিগে পৌঁছানোর মুহূর্তটা তাই বিশেষ কিছুই।
১০ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করি আমি। লুটন টাউন ও ইন্ডিয়ানস ক্রিকেট ক্লাবের মাঠ দুটিই ল্যাঙ্কাস্টার অ্যাভিনিউয়ে। মাঠটা ছিল সিটি কাউন্সিলের, তবে আমরা এটিকে হোম অব ক্রিকেট বলতাম। ছোট থাকতেই লুটনের তখনকার ম্যানেজার ডেভিড প্লিটের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি বলেন, মাঠে একটা স্টাম্প তাক করে নিরন্তর বোলিং করতে দেখতেন আমাকে। সেই প্লিটের সঙ্গে একসঙ্গে রয়্যাল বক্সে বসে লুটনের প্রিমিয়ার লিগে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করছিলাম আমরা। ডেভিড আমাকে বলেছিলেন, ‘যদি আজ তারা প্রিমিয়ার লিগে যেতে পারে, এ শহর আর ক্লাবের ইতিহাস বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা হবে সেটি।’ ডেভিড ঠিক বলেছিলেন।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর গ্যারি সুইটকেও ১৫ বছর ধরে চিনি আমি। যখন লিগের বাইরে ছিল লুটন, তখন থেকেই তার সঙ্গে বন্ধুত্ব আমার। ক্লাবের জন্য তখন কঠিন সময়। আর্থিক অনিয়মের কারণে পয়েন্ট কাটা হলো, তবে ক্লাবকে এখনকার জায়গায় নিয়ে আসতে দুর্দান্ত কাজ করেছে গ্যারি। দুর্দান্ত।
একটা ব্যাপার অবশ্য আমাকে স্বীকার করতেই হবে, যার জন্য আমাকে বেশ সমালোচনাও সইতে হয়েছে। হ্যাঁ, আমি আর্সেনালকেও সমর্থন করেছি। তবে এর ব্যাখ্যা আছে। আমার বেড়ে ওঠার সময় লুটনের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল খেলার ভাবনাটা ছিল খ্যাপাটে। ফলে আমাদের সবারই প্রিমিয়ার লিগের একটা দল থাকত। আমার সেই দল ছিল আর্সেনাল। তবে পরের বছর যখন এমিরেটস স্টেডিয়ামে যাব, আমার গায়ে থাকবে লুটনের জার্সি। এতে কোনো ভুল নেই। আর যদি আর্সেনালকে হারিয়ে দিই, তাহলে তো পিয়ার্স মরগানের মুখটা দেখা হবে দারুণ ব্যাপার।
লুটনের অনেক সমস্যা ছিল। তবে আশা করি, সেগুলো এখন অতীত। লুটনকে নিয়ে অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে। আশা করি, সামনে কেটে যাবে। এ দেশে জাতিগত বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে অন্যতম সেরা ক্লাব লুটন। শহরেও পরিবর্তন এসেছে। ওয়েম্বলিতে সেদিন লুটন টাউন ও ইন্ডিয়ানস ক্রিকেট ক্লাবের বেশ কয়েকজন সদস্য ছিলেন। অরেঞ্জ আর্মি তৈরি হচ্ছে। গ্যালারিতে আমার বন্ধুদের লুটন টাউনকে সমর্থন দিতে দেখা ছিল বিশেষ মুহূর্ত।
সোমবার লুটনের সেন্ট জর্জেস স্কয়ারের আবহটাই আলাদা ছিল। খোলা বাসে উদ্যাপন, যেন বিশ্বকাপ জিতে গেছি। অনেক বছরের মাঝে লুটনের এটিই সবচেয়ে ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা লুটনের ক্লাবকে নিয়ে অনেক গর্বিত। খেলোয়াড় ও ম্যানেজারদের এখন বলার মতো কিছু আছে। ‘লুটন প্রিমিয়ার লিগের দল’—এ কথাটিই তো দুর্দান্ত শোনাচ্ছে। আমার জীবনে ‘আমিও ছিলাম’ ধরনের অনেক মুহূর্তই আছে। তবে ২৭ মে ওয়েম্বলির মুহূর্তটা ওপরের দিকেই থাকবে।
আগামী মৌসুমে যদি কেনিলওর্থ রোডে লুটন টাউনের মাঠে আসেন, আমার ও কুকির সঙ্গে আপনাদের দেখা হবে।