জালিয়াতি ও দুর্নীতির মামলায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে নেইমার ও বার্সাকে
সান্তোস থেকে ২০১৩ সালে নেইমারের বার্সেলোনায় যোগ দেওয়া নিয়ে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছিল ব্রাজিলের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডিআইএস।
আগামী সপ্তাহে সেই মামলার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে নেইমারকে। ডিআইএস কাল এই মামলায় দোষীদের পাঁচ বছর কারাবাসের শাস্তি দাবি করেছে।
বার্সেলোনায় সোমবার থেকে এই মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। নেইমারের সঙ্গে এই মামলার বিবাদী পক্ষে আছেন তাঁর বাবা-মা, দুই ক্লাব বার্সেলোনা ও সান্তোস এবং ক্লাব দুটির সাবেক তিন সভাপতি। বার্সার সাবেক দুই সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ, স্যান্দ্রো রসেল এবং সান্তোসের সাবেক সভাপতি ওদিলো রদ্রিগেজ।
নেইমার সান্তোসে থাকতে তাঁর ৪০ শতাংশ স্বত্বের মালিক ছিল ডিআইএস। প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ, ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি থেকে নেইমারের বার্সেলোনায় যোগদানে দলবদলের আসল অঙ্কটা প্রকাশ করা হয়নি। এতে ডিআইএস স্বত্ব অনুযায়ী যে টাকাটা পাওয়ার কথা ছিল তা পায়নি, কম পেয়েছে। পিএসজি তারকা নেইমার এ অভিযোগ অস্বীকার করে ২০১৭ সালে স্পেনের উচ্চ আদালতে আপিল করে হেরে যাওয়ার পর বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
নেইমার ও তাঁর পরিবারের পক্ষে এ মামলায় লড়বেন আইনজীবী বেকার ম্যাকেঞ্জি। সংবাদ সংস্থা রয়টাসর্কে তিনি জানিয়েছেন, এই দলবদল যেহেতু ব্রাজিলে সেখানকার নাগরিকদের মাধ্যমে করা হয়েছে তাই স্প্যানিশ আদালতে ‘নেইমারের পরিবারের বিচার করার আইনি এখতিয়ার নেই’ বলে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হবে।
নেইমারের দুই বছর কারাবাসের পাশাপাশি ১ কোটি ইউরো জরিমানাও দাবি করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবীরা। এ ছাড়া বার্সার সে সময়ের সভাপতি রসেলের পাঁচ বছরের কারাবাস এবং কাতালান ক্লাবটিকে ৮৪ লাখ ইউরো জরিমানার দাবিও করা হয়েছে।
বার্তোমেউয়ের জেল খাটার দাবিও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিবাদী পক্ষকে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ইউরো জরিমানার দাবি করেছে ডিআইএস।
রসেল এর আগে সব রকম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর প্রতিনিধির কাছ থেকেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বার্সেলোনা ও বার্তোমেউয়ের তরফ থেকেও মন্তব্য মেলেনি। সান্তোসের সাবেক সভাপতি ওদিলো রদ্রিগেজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।
ব্রাজিল তারকা নেইমারের বয়স ১৭ থাকতে ২০ লাখ ইউরোর বিনিময়ে তাঁর ৪০ শতাংশ স্বত্বের মালিক হয় ডিআইএস। বলা হচ্ছে, তখন নেইমারের যে বাজারমূল্য ছিল, সে দামে তাঁকে বিক্রি করা হয়নি। তার চেয়েও কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। নেইমারকে সান্তোস থেকে উড়িয়ে আনার সময় বার্সা জানিয়েছিল, এই দলবদলের মূল্য ৫ কোটি ৭১ লাখ ইউরো। এর মধ্যে ৪০ লাখ ইউরো নেইমারের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। সান্তোসকে দেওয়া ১ কোটি ৭১ লাখ ইউরোর মধ্য থেকে ৪০ শতাংশ অর্থের ভাগ পায় ডিআইএস।
বার্সেলোনায় কাল সংবাদকর্মীদের ডিআইএসের আইনজীবী পাওলো নাসের বলেছেন, ‘নেইমারকে সর্বোচ্চ দাম হাঁকা ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়নি। তাঁকে ৬ কোটি ইউরোয় কিনতে আগ্রহী ক্লাবও ছিল।’
নেইমারের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, সর্বোচ্চ দাম দিতে চাওয়া ক্লাবের কাছেই বিক্রি করতে হবে, এই নিয়ম ফুটবলের দলবদলে খাটে না। কারণ এখানে খেলোয়াড়ের ইচ্ছা-অনিচ্ছাও জড়িত। ‘খেলোয়াড় কোনো পণ্য নয়। সে একজন ব্যক্তি, নিজ ইচ্ছায় স্বাধীন’—বলেন বেকি ম্যাকেঞ্জি। নেইমারের পরিবারের পক্ষের এই আইনজীবী দাবি করেন, অন্য ক্লাবগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষির বিষয়ে ২০১১ সালেই নেইমারের লিখিত অনুমতি নিয়েছে সান্তোস।
বার্সেলোনায় সোমবার আদালতের প্রথম দিনের কার্যক্রমে উপস্থিত থাকতে হবে নেইমারকে। এই মামলার শুনানি দুই সপ্তাহ চলতে পারে।