মে মাসে শুরু হবে দেশের প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি নারী ফুটবল
রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দাদের বিশাল সাইজের কাটআউট আকৃতির ছবি। প্রত্যেকের হাতে ধরা ফুটবল। এক পাশে বসানো হয়েছে আরেকটি বিশাল আকারের কাটআউট।
গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরার পর ছাদখোলা বাসে দেওয়া সংবর্ধনার সেই ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল কৃষ্ণা রানী সরকার, মনিকা চাকমারা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেয়েদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রথমবারের মতো দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। আজ লা মেরিডিয়ান হোটেলে হয়ে গেল লিগের আনুষ্ঠানিক লোগো উন্মোচন।
উদ্যোগটা মূলত নিয়েছে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান কে স্পোর্টস। প্রতিষ্ঠানটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ চালুর জন্য প্রাথমিক কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বাফুফেকে। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ উইমেন্স সুপার লিগ। আগামী মে মাসে মাঠে গড়াবে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের খেলা।
বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তারের অধীনে আরেকটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের ছাড়পত্র, স্টেডিয়ামের সুযোগ–সুবিধা ও ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত করার বিষয়গুলোর তদারক করবে। আপাতত লিগ শুরুর প্রাথমিক সময় নির্ধারিত হলেও সবকিছুই মূলত বাকি। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হতে পারে দুটি ভেন্যুতে। বাফুফের প্রথম পছন্দ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। কিন্তু মে মাসের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ না হলে খেলা হবে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা ও সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে।
ফ্র্যাঞ্চাইজির দল নিয়েও চূড়ান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নেয়নি বাফুফে। ৫টি বা ৬টি দল নিয়ে হতে পারে এই লিগ। ম্যাচসংখ্যা হতে পারে ১৯ থেকে ২৪। তবে দুই রাউন্ডে হবে খেলা।
‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’—এই তিন ক্যাটাগরিতে ফুটবলার বাছাই করা হবে। প্রতিটি দল ১৮ জন খেলোয়াড় নিতে পারবে। তাঁদের মধ্যে প্রতিটি দল খেলাতে পারবে পাঁচজন করে বিদেশি। দক্ষিণ এশিয়া থেকে দুজন ও বাকি অঞ্চল থেকে নেওয়া যাবে তিনজন ফুটবলার।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান কে স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিম অনুষ্ঠানে আগত ফুটবলার, বাফুফের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সামনে বড় পর্দায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের এই ধারণাগুলো উপস্থাপন করেন।
মেয়েদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মাঠে গড়ানোর কাজটা কঠিন। কিন্তু এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, ‘এটা আমাদের জন্য একেবারে নতুন ধারণা। এখানে অনেকগুলো বিষয় আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিতে কারা কারা আসবে, খেলোয়াড়দের মূল্য কত হবে, এটা বড় ইস্যু। কাজটা কঠিন। কারণ, আমাদের মাত্র ৫-৬টি ক্লাব। কীভাবে এটার আয়োজন করব, আমার সে ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই। কীভাবে মেয়েদের ছাড়পত্র দেবে ক্লাবগুলো, সেটাও দেখতে হবে। সব মিলিয়ে এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তারপরও বিষয়টার অনুমতি দিয়েছি। কারণ, এখানে একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এই মেয়েরা অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। তা ছাড়া তারা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবে।’
ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগটাকে নারী ফুটবলের নতুন যুগের শুরু হিসেবে দেখছেন বাফুফের মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার, ‘সবচেয়ে বড় কথা, যখন দায়িত্ব নিই, তখন প্রথম লক্ষ্যই ছিল মেয়েদের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়া। অনেক কষ্ট করে একটা পর্যায়ে এসে আমরা এই অবস্থানে দাঁড়িয়েছি। এটা মেয়েদের ফুটবলের নতুন যুগের শুরু।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেছেন, ‘এই লিগ নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত। আশা করি, মহিলা ফুটবল এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটা বড় ভূমিকা পালন করবে। এখানে বিদেশি ফুটবলার, ইউরোপ ও এশিয়ার ফুটবলার খেলবে। তাই লিগের মানও অনেক ভালো হবে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় দলের সব নারী ফুটবলার তো ছিলেনই। এসেছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, তানজিন তিশা, চিরকুট ব্যান্ডের শারমিন সুলতানা সুমি। এ ছাড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রি স্টাইলার আগুসকা ও প্যাট্রিক বল নিয়ে কারিকুরি দেখিয়ে মুগ্ধ করে রাখেন দর্শকদের।