‘নিষিদ্ধ’ ইরান কি বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবে
যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে ফিরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত জানুয়ারিতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁর প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
ট্রাম্প মূলত অভিবাসন নীতির ওপর বেশি জোর দিয়েছেন এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করেছেন। তাঁর প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া। এ ছাড়া কিছু দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা অনেক আগে থেকেই আছে। সেই সংখ্যা এবার আরও বাড়ছে, যা ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
আগামী বছর বিশ্বকাপের ২৩তম আসর বসছে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায়। ৪৮ দলের এই বিশ্বকাপের বেশির ভাগ ম্যাচই হবে যুক্তরাষ্ট্রে।
কিন্তু ট্রাম্পের সরকার যেসব দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে কিংবা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, বিশ্বকাপে সেসব দেশের ফুটবল দল তাহলে কী করবে, কোথায় খেলবে—এ ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্প সরকার যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার জন্য ৪৩ দেশের একটি তালিকা প্রস্তাব করেছে। দেশগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে—১) পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বা লাল তালিকাভুক্ত দেশ, ২) আংশিক বা কঠোর ভিসা স্থগিতাদেশ, ৩) আংশিক নিষেধাজ্ঞার জন্য সুপারিশকৃত দেশ।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে থাকা দেশগুলো ৬০ দিনের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ না করলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে থাকা দেশগুলোর নাগরিককে শর্ত সাপেক্ষে বা বিশেষ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। কিন্তু লাল তালিকাভুক্ত দেশের নাগরিককে কোনোভাবেই মার্কিন ভূখণ্ডে ঢুকতে দেবে না ট্রাম্প সরকার।
বিপত্তিটা এখানেই। ট্রাম্পের লাল তালিকাভুক্ত ১১ দেশের একটি ইরান, যারা এরই মধ্যে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ইরান ছাড়াও পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, ভুটান, কিউবা, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেন।
পরশু নিজেদের মাঠ আজাদি স্টেডিয়ামে বাছাই পর্বের ম্যাচে উজবেকিস্তানের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে এশিয়ান অঞ্চলের (এএফসি) দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ইরান। দলটি এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের মূল পর্বের টিকিট পেল, সব মিলিয়ে সাতবার। কিন্তু এবারই প্রথম তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হচ্ছে।
লাল তালিকায় থাকা আরেক দেশ ভেনেজুয়েলারও মূল পর্বে খেলার সম্ভাবনা আছে। দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের (কনমেবল) বাছাইয়ে ভেনেজুয়েলা এখন সাত নম্বরে আছে। এ অঞ্চলের বাছাইয়ে সপ্তম হওয়া দল প্লে-অফ পর্বে জিতে চূড়ান্ত পর্বে উঠে যেতে পারে। তবে আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। এই দুই দল এরই মধ্যে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে পড়েছে।
ইরান জাতীয় দলের বেশির ভাগ ফুটবলার স্বদেশি ক্লাবে খেলেছেন। দলের প্রধান কোচ আমির গালেনোয়েইও একজন ইরানি। তবে দুই তারকা ফরোয়ার্ড সরদার আজমুন ও মেহদী তারেমি অনেক দিন হলো বিদেশি ক্লাবে খেলছেন।
আজমুন বর্তমানে খেলছেন আরব আমিরাতের ক্লাব শাবাব আল আহলিতে। এর আগে তিনি ইউরোপে খেলেছেন এএস রোমা, বায়ার লেভারকুসেন, জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গের মতো ক্লাবগুলোতে। তারেমির বর্তমান ঠিকানা ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মিলানে। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সামান গুদুসের জন্ম আবার সুইডেনে। গুদুস একসময় খেলতেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ব্রেন্টফোর্ডে। তবে তাঁদের তারকাখ্যাতি ও ভিনদেশি ‘চারিত্রিক সনদ’ ট্রাম্প সরকারের মন গলাতে পারবে কি না, নিশ্চিত নয়।
নিউইয়র্ক টাইমস দাবি করেছে, নিষেধাজ্ঞা সুপারিশের খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তালিকায় ইরানসহ ১১ দেশকে লাল তালিকায় রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই ১১ দেশের নাগরিককে কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এ–ও জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা সুপারিশ হোয়াইট হাউসে পৌঁছানোর পর এবং ট্রাম্পের অনুমোদন পাওয়ার আগে তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।
আংশিক নিষেধাজ্ঞার জন্য সুপারিশকৃত দেশের তালিকায় আছে আফ্রিকার ক্যামেরুন, বুরকিনা ফাসো, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রসহ আরও কয়েকটি দেশ, যাদের বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ট্রাম্প সরকার অভিবাসন নীতির মতো ক্রীড়াঙ্গনেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, যার মধ্যে একটি হলো নির্বাহী আদেশে নারীদের খেলায় ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের নিষিদ্ধ করা।
ফিফা যেভাবে নিষেধাজ্ঞা সমস্যার সমাধান করতে পারে
ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ট বাইবেল’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০২৬ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক যেহেতু মেক্সিকো ও কানাডা, তাই ইরান ও ভেনেজুয়েলার মতো ‘লাল তালিকাভুক্ত’ দেশগুলোর গ্রুপ পর্বের ম্যাচ ওই দুই দেশে আয়োজন করা যেতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান যেন একই গ্রুপে না পড়ে, বিশ্বকাপ ড্রয়ের আগে সেটাও ঠিকঠাক করা যেতে পারে।
মেক্সিকো ও কানাডায় শেষ বত্রিশ ও শেষ ষোলো পর্বেরও ম্যাচ আছে। উদাহরণস্বরূপ—ইরান নকআউট পর্বে উঠলে সেই ম্যাচও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে খেলতে পারে। কিন্তু নকআউট পর্বের কোনো পর্যায়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান মুখোমুখি হলে কী হবে? স্বাগতিক হয়েও যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানের বিপক্ষে খেলতে মেক্সিকো বা কানাডায় যাবে?
এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ‘হাইব্রিড মডেলে’ আয়োজিত ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বিষয়টি সামনে এনেছে ‘স্পোর্ট বাইবেল’। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূল আয়োজক পাকিস্তান হলেও রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে দেশটিতে দল পাঠায়নি ভারত সরকার। রোহিত-কোহলি-শামিরা নিজেদের ম্যাচগুলো খেলেছেন দুবাইয়ে। রিজওয়ান-আফ্রিদি-বাবরদেরও ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে দুবাইয়ে যেতে হয়েছিল।
ট্রাম্প সরকারের হাতেও এখন দুটি ‘অপশন’। হয় ইরান, ভেনেজুয়েলার মতো দেশকে ‘লাল তালিকা’ থেকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে, নয়তো তাদের বিপক্ষে খেলা পড়লে মেক্সিকো বা কানাডায় গিয়ে খেলতে আসতে হবে।
আইসিসিকে সমাধানের উপায় খুঁজতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ফিফা কিন্তু আইসিসিকে অনুসরণ করে সহজেই সমস্যার সমাধান করতে পারে!