মেসি ‘মুছে দিলেন’ মায়ামির মালিকের নাম
পাঁচ মিনিট আগেই একটি গোল করেছেন। তারপর প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে ফ্রি–কিক পেল তাঁর দল ইন্টার মায়ামি। বক্সের সামনে বাঁ দিকে। ইন্টার মায়ামির সহ–মালিক ডেভিড বেকহাম কি লিওনেল মেসির নেওয়া সেই ফ্রি–কিকটি দেখেছেন?
বলটি ধনুকের মতো বাঁক নিয়ে কলম্বাস ক্রুয়ের গোলকিপার প্যাট্রিক শুলটেকে কী সুন্দর এক হাঁটুর ওপর বসিয়ে জালে জড়াল! শুলটে জানতেন, মেসির শটটি মানবদেয়ালের পাশ দিয়ে বাঁক নিয়ে তাঁর ডান দিকের পোস্ট ঘেঁষে আসবে। ডান দিকে একটু ঝুঁকেও ছিলেন শুলটে। কিন্তু বলের গতির কাছে মোহাবিষ্ট কিংবা পরাজিত হয়ে এক হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন। রণক্ষেত্রে যোদ্ধারা যেভাবে আত্মসমর্পণ করেন, সেভাবে। বেকহামও করলেন। হয়তো মনে মনে, কাগজে–কলমেও মায়ামির সহ–মালিক তো এখন মেসির পেছনে!
শিরোপা জিততে পেরে ভালো লাগছে। বছরের শুরুতেই আমরা জানতাম, এই দলটা শিরোপার জন্য লড়বে। সেই লড়াইটা আমরা শুরু থেকেই করেছি। কারণ, তেমন খেলোয়াড়ও আছে। প্রথম লক্ষ্য অর্জন করতে পেরে আমি খুশি, এখন সামনে পরবর্তী লক্ষ্য।লিওনেল মেসি, ইন্টার মায়ামি ফরোয়ার্ড
সেই কাগজটি আসলে রেকর্ড বইয়ের একটি পাতা। আর অধ্যায়ের নাম ফ্রি–কিক। ফুটবল ইতিহাসে ফ্রি–কিক থেকে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড থেকে মায়ামির মালিক বেকহামের নামটা মুছে দিলেন মেসি। আজ কলম্বাস ক্রুকে ৩–২ গোলে হারিয়ে মায়ামিকে সাপোর্টার্স শিল্ড ট্রফি জেতানোর পথে নিজের ক্লাবের সহমালিককেও এই তালিকায় পেছনে ফেললেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি ও ইংল্যান্ডের সাবেক মিডফিল্ডার বেকহাম তাঁর ক্যারিয়ারে ফ্রি–কিক থেকে ৬৫ গোল করেছেন। আজকের গোলে তাঁকে পেছনে ফেললেন ফ্রি–কিক থেকে ৬৬ গোল করা মেসি।
ফ্রি–কিক থেকে সর্বোচ্চ গোল করার তালিকায় মেসি এখন যৌথভাবে তৃতীয়। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদিনিওর ফ্রি–কিক থেকে গোলসংখ্যাও ৬৬। ৭৭ গোল নিয়ে তালিকার শীর্ষে ব্রাজিল ও লিওঁর সাবেক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জুনিনিও পেরনামবুকানো। ৭০ গোল নিয়ে দ্বিতীয় ব্রাজিলের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপজয়ী প্রয়াত কিংবদন্তি পেলে। সাবেক আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার ভিক্টর লেগরোতাগ্লিও মেসি আর রোনালদিনিওর সমান গোল নিয়ে যৌথভাবে তৃতীয়।
জোড়া গোল করে মায়ামিকে শিরোপা জেতানো মেসির ক্যারিয়ারে এটি ৪৬তম শিরোপা। মায়ামির হয়ে দ্বিতীয়। ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের দৌড়ে আগেই এগিয়ে গিয়েছিলেন মেসি। এবার ব্যবধানটা আরেকটু বাড়ালেন। মায়ামিকে শিরোপা জিতিয়ে খুশি মেসি ম্যাচ শেষে অ্যাপল টিভিকে বলেছেন, ‘শিরোপা জিততে পেরে ভালো লাগছে। বছরের শুরুতেই আমরা জানতাম, এই দলটা শিরোপার জন্য লড়বে। সেই লড়াইটা আমরা শুরু থেকেই করেছি। কারণ, তেমন খেলোয়াড়ও আছে। প্রথম লক্ষ্য অর্জন করতে পেরে আমি খুশি, এখন সামনে পরবর্তী লক্ষ্য।’
গত বছর আগস্টে মেসি যোগ দেওয়ার পর থেকেই মায়ামির পারফরম্যান্স পাল্টে যেতে শুরু করেছে। তাঁর সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ যোগ দেন গত বছরের ডিসেম্বরে। তারপর দুজনকে এ বছরই একসঙ্গে পূর্ণ মৌসুমের জন্য পেয়েছে মায়ামি। ফল? ৩১ ম্যাচে মায়ামির করা ৭১ গোলের ৩৫টিই মেসি–সুয়ারেজ জুটির। তবে চোট ও আন্তর্জাতিক বিরতির কারণে এ বছর মায়ামির হয়ে মাত্র ১৭ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন মেসি। তাতেই তিনি ক্লাবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৭)। ২৫ ম্যাচে ১৮ গোল করে শীর্ষে সুয়ারেজ।
তবে মেসি মনে করেন, শুধু তিনি নন, মায়ামির উত্থানে অবদান আছে আরও অনেকেরই। তাঁর মুখেই শুনুন, ‘কোচ জেরার্দো মার্তিনো এবং আমাদের (জর্দি আলবা, সুয়ারেজ ও সের্হিও বুসকেটস) আগমনের পর লক্ষ্য ছিল দাপট দেখানো এবং বলের পিছু ছোটা, বল দখলে রাখা। খেলা ও ব্যক্তিত্ব বিচারে গুরুত্বপূর্ণ সব খেলোয়াড়দের আগমনে দলটা বড় হয়ে উঠেছে। আমরা প্রত্যেক ম্যাচেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করি।’