হলান্ড নাকি এমবাপ্পে, রোনালদোর গোলের রেকর্ড ভাঙবেন কে
চ্যাম্পিয়নস লিগে লম্বা সময় ধরে দাপট দেখিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অনেক রেকর্ডে নিজের একাধিপত্যও প্রতিষ্ঠা করেছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। আর দলীয়ভাবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন ৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। ইউরোপে শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে এমন অপ্রতিরোধ্য পারফরম্যান্সের কারণে তাঁকে ‘ইউরোপের রাজা’ও বলা হয়। এই মঞ্চে লিওনেল মেসিও রোনালদোর চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে।
গোলের কথাই ধরা যাক। চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে বেশি ১৮০ ম্যাচ খেলে রোনালদো গোল করেছেন ১৪০টি। এই রেকর্ডে রোনালদোর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির গোল ১৬৩ ম্যাচে ১২৯টি। রোনালদো ও মেসি দুজনই এখন খেলেন ইউরোপের বাইরে। ক্যারিয়ার শেষ করার আগে এই মঞ্চে আবার ফিরবেন, সেই সম্ভাবনাও নেই বললে চলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রোনালদোর ১৪০টি চ্যাম্পিয়নস লিগ গোলের রেকর্ড কে ভাঙবেন?
বর্তমান সময়ে এমন কোনো তরুণ কি আছেন, যিনি ভবিষ্যতে রোনালদোর এই রেকর্ড ভাঙতে পারবেন? রোনালদোর রেকর্ড যাঁরা ভাঙতে পারেন, সম্ভাব্য সেই তালিকায় সবার আগে যে দুজনের নামবে আসে, তাঁরা কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ড। যদিও রেকর্ড ভাঙার জন্য এ দুজনকে এখনো পাড়ি দিতে হবে অনেক লম্বা পথ।
চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙতে শুরুতেই পক্ষে পেতে হবে ফিটনেসকে। লম্বা সময় ধরে খেলা ছাড়া এই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ নেই বললেই চলে। রোনালদো এখন পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার। দুর্দান্ত ফিটনেসের কারণেই তাঁর পক্ষে এত লম্বা সময় ধরে খেলা সম্ভব হয়েছে। শুধু ফিটনেসই আবার যথেষ্ট না। লম্বা সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে গোলও করতে হবে, যা ‘সিআর সেভেন’ করেছেন। এরপর প্রয়োজন সতীর্থদের সহযোগিতা।
২৬ বছর বয়সী এমবাপ্পে এখন পর্যন্ত ৮০ ম্যাচে করেছেন ৫১ গোল। এ পরিস্থিতিতে রোনালদোর রেকর্ড ছুঁতে হলে এমবাপ্পেকে করতে হবে আরও ৮৯ গোল। কাজটা অসম্ভব না হলেও কঠিন তো বটেই। ফিটনেসের দিক থেকে এমবাপ্পে সে অর্থে চোটপ্রবণ খেলোয়াড় নন। ফলে তাঁর ক্যারিয়ার লম্বা হতেও পারে।
আর এমবাপ্পে গোল করার ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। তাঁর জন্য আরেকটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে, আশাপাশে থাকা খেলোয়াড়েরা। রিয়াল মাদ্রিদে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, জুড বেলিংহাম ও রদ্রিগোরা নিঃস্বার্থভাবে এমবাপ্পেকে বলের জোগান দিচ্ছেন। এরই মধ্যে এমবাপ্পেকে সফল করার জন্য নিজের সর্বোচ্চটা করার কথা বলেছেন ভিনি। এখন রিয়ালে যদি এমবাপ্পে ৮–১০ বছরের খেলে যেতে পারেন, তবে একপর্যায়ে রোনালদোর রেকর্ড ভেঙেও যেতে পারে।
এমবাপ্পের চেয়ে ২ বছরের ছোট হলান্ড অবশ্য গোল করায় আরও ক্ষুরধার। এমনকি প্রতি ৯০ মিনিটে গোলের হিসাবেও হলান্ড আছেন সবার ওপরে। এরই মধ্যে মাত্র ৪৬ ম্যাচে করে ফেলেছেন ৪৭ গোল। এই গতিতে এগিয়ে যেতে থাকলে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙা হলান্ডের জন্য মোটেই কঠিন নয়।
কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তাঁর ফিটনেস ও ধারাবাহিকতা নিয়ে। এমবাপ্পেকে যতটা লম্বা রেসের ঘোড়া ভাবা যায়, হলান্ডকে ততটা নয়। মাঝেমধ্যেই চোটে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। পাশাপাশি যোগ্য প্লেমেকারের সঙ্গ না পেলে গোল করার ক্ষেত্রে সংগ্রাম করতে দেখা যায় তাঁকে। সামনের দিনগুলোতে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙতে হলে এই দুই চ্যালেঞ্জের সমাধান বের করতে নরওয়েজিয়ান তারকাকে। সেটি করতে পারলে হলান্ডকে থামানো অসম্ভব হবে।