আল নাসরের রোনালদো-বরণ, কোচ চাইলে খেলবেন পরের ম্যাচেই
ছাই রংয়ের স্যুটের সঙ্গে হালকা নীল রংয়ের টাই পরে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাঁর বয়স যে ৩৭ বছর দেখে বোঝা কষ্ট! মনে হচ্ছিল, সেই তো তারুন্যদীপ্ত রোনালদো। নতুন চ্যালেঞ্জ বলেই বুঝি এতটা চনমনে ছিলেন পর্তুগিজ তারকা।
সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসর আজ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিল। তারই সংবাদ সম্মেলনে বসে রোনালদো ঘোষণা করলেন, ‘ইউরোপে আমার অভিযান শেষ। সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ক্লাবেই খেলেছি। এখানে ভালো লাগছে। সৌদি আরবের মানুষ চমৎকার।’
রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, জুভেন্টাস মাতানো পর্তুগিজ কিংবদন্তিকে সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ততক্ষণে ক্লাবটির মাঠ মরসুল পার্কে তিল ঠাঁই ছিল না। ২৫ হাজার আসনের এই স্টেডিয়ামে ভক্তরা গিজগিজ করছিলেন। স্টেডিয়ামের স্পিকারে বাজানো হচ্ছিল অ্যারাবিয়ান মিউজিক। ভক্তরা তাল মিলিয়ে ‘রোনালদো, রোনালদো’ রবও তুলেছিলেন। মরসুল পার্কের টানেল দিয়ে মাঠে ঢোকার ফটকেও রোনালদোর জন্য বিশেষ ব্যানার লাগানো হয়।
পাঁচবার ব্যালন ডি’অরজয়ী ও পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী রোনালদো কিছুদিন আগে সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দেন। ক্লাবটির জার্সি হাতে আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে যোগ দেওয়ার ছবি প্রকাশ করেছিলেন রোনালদো। বাকি ছিল আল নাসরের সমর্থকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয়–পব৴ ও সংবাদ সম্মেলন। সেটাই হলো আজ। স্টেডিয়ামে অন্য সঙ্গীতের সঙ্গে মার্কো লেস রিমিক্সের ব্রাইটার ডেজ গানের মিউজিক যখন বাজানো হচ্ছিল তখন চলছিল এই সংবাদ সম্মেলন পর্ব। রোনালদো সেখানে কোচ রুদি গার্সিয়া ও আল নাসর সভাপতি মুসাল্লি আল–মুয়াম্মারের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দেন।
একজন নারী সঞ্চালক আনুষ্ঠানিক এই সংবাদ সম্মেলন–পর্ব পরিচালনা করেন। রোনালদো সৌদির এই ক্লাবে যোগ দেওয়া নিয়ে একটু ব্যাখ্যাও করলেন, ‘ইউরোপে অনেক সুযোগ পেয়েছি। ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাস্ট্র এবং পর্তুগাল থেকেও ডাক পেয়েছি। তবে আমার জন্য এটা সুযোগ। নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবহার করে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্লাবকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। এই সিদ্ধান্তটা নিতে পেরে আমি গর্বিত। পরিবার সব সময় আমার পাশে ছিল। আর লোকে কী বলল তা নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি।’ কথা প্রসঙ্গে রোনালদো আরও বলেন, ‘আমি অনন্য খেলোয়াড়। আমি ওখানে (ইউরোপ) সব রেকর্ড ভেঙেছি। এখানেও কিছু রেকর্ড ভাঙতে চাই।’
রোনালদো সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলেন, ‘কোচ চাইলে (ক্লাবের) পরের ম্যাচেই তিনি মাঠে নামতে প্রস্তুত।’ বৃহষ্পতিবার আল তা’ঈয়ির বিপক্ষে ম্যাচ আছে আল নাসরের। আর কোচ রুদি গার্সিয়া? অনুষ্ঠানে নারী সঞ্চালক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কেমন লাগছে? গার্সিয়া এক গাল হেসে জবাব দেন, ‘খুব ভালো।’ এরপর কৌতুক করে বলেন, ‘আজ প্রচুর সংবাদকর্মী দেখছি। অন্যান্য সময় ম্যাচের পর সর্বোচ্চ তিন–চারজন সংবাদকর্মী দেখেছি। আজ কি হলো!’ রোনালদোর বিষয়ে গার্সিয়া আরও বলেন, ‘সে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।’ কোচের কথার আগে আল–নাসর সভাপতি আরবি ভাষায় নিজের বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে রোনালদোকে ক্লাবের ড্রেসিংরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। আল নাসরের সরাসরি সম্প্রচারিত ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায় ক্লাবের জার্সি পরে সতীর্থ ও কোচের সঙ্গে রসিকতা করছেন রোনালদো। দোভাষীর মাধ্যমে ক্লাবের টেকনিক্যাল স্টাফ ও সতীর্থদের কথাও শুনেছেন। রোনালদোও সতীর্থদের প্রতি কিছু কথা বলেন যা দোভাষীর মাধ্যমে বুঝিয়ে বলা হয়। ক্লাব সভাপতিও সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। রোনালদো সেখানে বলেছেন, ‘এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নিজের সেরাটাই দেব।’ এরপর রোনালদোকে নিয়ে যাওয়া হয় মাঠে।
মাঠের ঠিক মাঝে লাল রংয়ের মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। আর গ্যালারিতে আল নাসরের নীল–হলুদ জার্সি পরে ও স্কার্ফ হাতে উপস্থিত ছিলেন প্রচুর দর্শক। আলোর ঝলকানির সঙ্গে ছিল সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা। মাঠের মাঝে সাদা রংয়ের পোশাকে একজন নারী সঞ্চালক এবং সৌদির জাতীয় পোশাকে একজন পুরুষ সঞ্চালক রোনালদোর আগমনী–বার্তা ঘোষণা করেন। রোনালদো যখন টানেল দিয়ে এলেন, সেখানকার ইলেকট্রনিক মনিটরে হলুদ স্ক্রিনে ‘সিআরসেভেন’ লেখা ভেসে ওঠে। মাঠে ঢুকতেই যেন গর্জে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম। রোনালদো দু পাশে হাত ছড়িয়ে খুদেদের সঙ্গে করমর্দন করে মাঠে ঢোকেন। গ্যালারির দর্শকেরা ততক্ষণে উন্মাতাল আনন্দের শীর্ষবিন্দুতে।
নারী সঞ্চালক রোনালদোকে ‘নতুন ঘরে স্বাগতম’ বলতেই দর্শকদের চিৎকার আরও বেড়ে যায়। রোনালদো হাত নেড়ে জবাব দেন। মাইক্রোফোন হাতে কিংবদন্তি বললেন, ‘গতকালই তারা (ভক্ত) আমাকে এবং আমার পরিবারকে যেভাবে বরণ করেছে তাতে আমি শিহরিত। আমি এখানে নিজের সেরাটাই দেব।’ সৌদি আরবের এই ক্লাবে নিজের লক্ষ্যও জানালেন রোনালদো, ‘আমি এখানকার মানুষকে আনন্দে রাখতে চাই...। এটাই আমার লক্ষ্য।’
এরপর ক্লাবের খুদেদের সঙ্গে ছবি তোলার পর দুই সঞ্চালকের সঙ্গে সেলফিও তোলেন রোনালদো। বলে নিজের অটোগ্রাফও দেন। তারপর বলটা এক কিকে পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। এভাবে গ্যালারিতে পাঠান আরও কয়েকটি বল। শেষ বলটিতে অটোগ্রাফ দিয়ে গ্যালারির দিকে এগিয়ে একটি বাচ্চার হাতে তুলে দেন কিংবদন্তি। এই আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোনালদোর পরিবারকে মাঠে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সন্তানদের নিয়ে কালো রংয়ের পোশাক ও জিনস পরা রোনালদোর বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ মাঠে ঢোকেন। রোনালদো এরপর মাইক্রোফোন হাতে পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান আল নাসর সমর্থকদের প্রতি। সঞ্চালক রোনালদোকে অনুরোধ করেন শেষ কথা হিসেবে কিছু একটা বলতে। রোনালদো আরবি ভাষায় অভিবাদন জানিয়ে পরিবারকে নিয়ে মাঠ ছাড়েন।