পিএসজি ০ : ১ লিভারপুল
ফুটবলে ম্যাচের ফল সব সময় সঠিক কথাটি বলে না। অনেক সময় ফলের নিচে চাপা পড়ে যায় দুর্দান্ত অনেক কিছু। যেমন আজ বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে লিভারপুলের জয়ের নিচে চাপা পড়ে গেছে পিএসজির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের গল্পটা।
ম্যাচজুড়ে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেও শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পিএসজিকে। ঘরের মাঠে এমন হারের পর নিয়তিকে চাইলে দুষতেই পারে পিএসজি তারকারা। একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তাদের। ২৭টি শট নিয়ে মেলেনি কোনো গোল। অন্যদিকে ম্যাচে মাত্র একটি শট লক্ষ্যে নেওয়া লিভারপুল পেয়েছে জয়সূচক গোল।
পাশাপাশি অবশ্য কিছুটা দোষ দিতে হবে নিজেদের ফিনিশিং দুর্বলতাকেও। নয়তো এত সুযোগ হেলায় হারাবে কেন! আর লিভারপুল চাইলে আজকের ম্যাচের পর আলিসনের নামে আলাদা একটা মূর্তি বানাতেই পারে।
এই ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক একের পর এক গোল না ঠেকালে ম্যাচটা যে প্রথমার্ধে হেরে যেতে লিভারপুল। আলিসন আজ রাতে সব মিলিয়ে ৯টি গোল বাঁচিয়েছেন, যা চ্যাম্পিয়নস লিগে কোনো লিভারপুল গোলরক্ষকের সর্বোচ্চ। পাশাপাশি ক্লাবের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কোনো ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষকেরও সর্বোচ্চ।
বলতে হবে হার্ভে এলিয়টের কথাও। নিষ্প্রভ সালাহর বদলি নেমে মাত্র ১ মিনিটের মধ্যে গোল করে হয়ে গেছেন জয়ের নায়ক।
প্যারিসে শুরুতে লং পাসের ওপর নির্ভর করে খেলার চেষ্টা করে লিভারপুল। যদিও তাতে কোনো সাফল্য আসেনি। এরপর দুই দলই আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে দ্রুতই লিভারপুলের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে পিএসজি। অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক সুযোগও আদায় করে তারা। ম্যাচের ২০ মিনিটে তেমনই এক সুযোগকে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোলে পরিণত করেন শীতকালীন দলবদলে নাপোলি থেকে আসা খিচা কাভারাস্কেইয়া।
কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে বাতিল হয়ে যায় গোলটি। গোল না পেলেও লিভারপুলকে এ সময় বেশ ভালোভাবেই চেপে ধরে পিএসজি। একের পর আক্রমণে ইংলিশ ক্লাবটির নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ে প্যারিস জায়ান্টরা। উসমান দেম্বেলে, ব্র্যাডলি বারকোলা ও কাভারেস্কাইয়াদের পাসিং-প্রেসিং-ড্রিবলিংয়ে লিভারপুল রীতিমতো নাকাল হয়ে পড়ে।
বিশেষ করে বলতে হয় কাভারাস্কেইয়ার কথা। ‘নতুন ম্যারাডোনা’ খ্যাত নাপোলির ৩৩ বছর পর লিগ জেতার অন্যতম এই নায়ক শুরু থেকেই নিজের পায়ের জাদুতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। জর্জিয়ান এই ফুটবলারের কাছেই মূলত হুমকির ওপর থাকতে হয়েছে লিভারপুলকে।
৩১ মিনিটে আলিসন ও লিভারপুল রক্ষণ দেয়াল তুলে না দাঁড়ালে তখনই এগিয়ে যেতে পারত পিএসজি। সব দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতা এবং লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসনের দৃঢ়তায় অবিশ্বাস্যভাবে গোল বঞ্চিত থেকে যায় পিএসজি। বিশেষত আলিসনকে লিভারপুল চাইলে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই পারে। স্বাগতিকদের তোপের মুখে প্রতি-আক্রমণের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছিল লিভারপুলকে। যদিও সেই সুযোগও খুব একটা মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত কোনোরকমে গোল খাওয়া ঠেকিয়ে বিরতিতে যায় আর্নে স্লটের দল।
বিরতির পরও লিভারপুলকে চাপের মুখে রাখে পিএসজি। শুরু থেকে বারবার আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে তারা। ৫৪ মিনিটে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ফ্রি-কিক থেকে কাভারাস্কেইয়ার শট ঠেকিয়ে দেন আলিসন। এই অর্ধেও পিএসজির একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে কোনো রকমে গোল খাওয়া থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে যাচ্ছিল লিভারপুল।
পিএসজির আগ্রাসী ফুটবলের কোনো জবাবই যেন ছিল না অতিথিদের। তবে যেটুকু জবাব লিভারপুলের হাতে ছিল, পুরোটাই ছিল আলিসনের গ্লাভসে। তাঁর চুম্বকে মোড়া হাতটাই বারবার বাঁচিয়েছে লিভারপুলকে। আর আলিসনের কীর্তিকে শেষ পর্যন্ত স্মরণীয় করেছেন এলিয়ট। স্রোতের বিপরীতে লিভারপুলের একমাত্র গোলটি করেছেন তিনিই। এই গোলই এখন শেষ আটের পথে অনেকটা এগিয়ে দিল লিভারপুলকে।