২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

যেভাবে গার্দিওলার মন জিতেছিলেন পোস্তেকোগলু

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আজ রাতে মুখোমুখি হবে গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি ও পোস্তেকোগলুর টটেনহামছবি : এএফপি

গালভরা একটা নাম ছিল সেই ম্যাচের—ইউরোজাপান কাপ। কিন্তু আসলে প্রাক-মৌসুমের খুব সাধারণ একটা প্রীতি ম্যাচের বেশি কিছু নয়। ইউরোপের ফুটবলে ২০১৯-২০ মৌসুম শুরুর আগে জাপানের রাজধানী টোকিওতে ম্যানচেস্টার সিটি মুখোমুখি হয়েছিল ইয়োকোহামা এফ ম্যারিনোসের।

প্রাসঙ্গিকভাবে আরও একটা তথ্য দিয়ে রাখা ভালো, ইয়োকোহামা ম্যারিনোস ক্লাবের কিছুটা মালিকানা আবুধাবির সিটি ফুটবল গ্রুপের, যারা ম্যানচেস্টার সিটিরও মালিক। ফলে আসলে ওটা ছিল অনেকটা ‘বড় ভাই’য়ের বিপক্ষে ‘ছোট ভাই’য়ের লড়াই। এ রকম ম্যাচ হয় সাধারণত পিকনিক মেজাজে।

কিন্তু তা হয়নি। ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপে গার্দিওলা ভাবতেও পারেননি, ওই ম্যাচে তাঁর দলকে এত কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। না, সিটি হারেনি। জিতেছিল ৩-১ গোলে।

কিন্তু সেই জয়ের জন্য সেই সময়ে টানা দুইবার প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন প্রবল প্রতাপশালী গার্দিওলার দলকে প্রায় চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউট ম্যাচের মতো কষ্ট করতে হয়েছিল।

পোস্তেকোগলুকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন গার্দিওলা
ছবি : এএফপি

গার্দিওলার কাজটা ওই ম্যাচ যিনি খুব কঠিন করে দিয়েছিলেন, তাঁর নাম অ্যাঞ্জে পোস্তেকোগলু। সেই সময়ে ইয়োকোহামা এফ ম্যারিনোসের কোচ। ম্যাচ শেষে গার্দিওলা স্বীকার করেছিলেন, তাঁর দল স্রেফ ভাগ্যগুণে জিতেছে। একটু এদিক-ওদিক হলেই ম্যাচটার ফল পুরো উল্টো হতে পারত। বলেছিলেন ইয়োকোহামা এফ ম্যারিনোসের কোচ অ্যাঞ্জে পোস্তেকোগলুর কোচিং দেখে মুগ্ধ হওয়ার কথাও।

সেই ম্যাচে ৫৮ ভাগ বলের দখল ছিল ইয়োকোহামা এফ ম্যারিনোসের। গার্দিওলার দলের বিপক্ষে এটা কতটা অস্বাভাবিক, সেটা একটা তথ্য দিলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ম্যানচেস্টার সিটিতে প্রায় সাড়ে ৭ বছর ধরে কোচ গার্দিওলা। এই সময়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে সিটির বিপক্ষে প্রতিপক্ষের বলের দখল বেশি ছিল মাত্র চারটা ম্যাচে! সেই চারটা দল—গত মৌসুমে আর্সেনাল, ২০২০-২১ মৌসুমে ব্রাইটন, ২০১৯ বক্সিং ডে ম্যাচে উলভারহ্যাম্পটন এবং সিটিতে গার্দিওলার প্রথম মৌসুমে বার্সেলোনা।

ওই ম্যাচে সিটির গোলদাতা রাহিম স্টার্লিং পরে বলেছিলেন, ‘ভাবতেই পারিনি ওরা (ইয়োকোহামা) এত গতিময় ফুটবল খেলবে, এত প্রাণশক্তি ওদের! অনেক দিন আমি কোনো দলকে এভাবে নিচ থেকে আক্রমণ তৈরি করে খেলতে দেখিনি।’

এ মৌসুমেই টটেনহামের দায়িত্ব নিয়েছেন পোস্তেকোগলু
ছবি : এক্স

ম্যাচ শেষে একসঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে গার্দিওলার টাকমাথায় হাসিমুখে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন পোস্তেকোগলু। ভাবখানা ছিল—দেখলে তো তোমার দলকে কী পরীক্ষায় ফেললাম। ইয়োকোহামা এফ ম্যারিনোসের খেলোয়াড়েরা নিশ্চিতভাবে মাঠ ছেড়েছিলেন এই প্রশান্তি নিয়ে, একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে এগোলে, একটা নির্দিষ্ট দর্শনে খেলতে পারলে সেরা দলকেও নাকানিচুবানি খাওয়ানো যায়।

ইয়োকোহামা এফ ম্যারিনোসের সেই অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যাঞ্জে পোস্তেকোগলু এখন প্রিমিয়ার লিগে। এই মৌসুমের শুরুতে দায়িত্ব নিয়েছেন টটেনহামের। আজ ইতিহাদে পোস্তেকোগলুর টটেনহাম খেলবে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে। আরও একবার পেপ গার্দিওলার মুখোমুখি হবেন পোস্তেকোগলু। আরও একবার কি গার্দিওলার দলকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারবেন তিনি?

আরও পড়ুন

পোস্তেকোগলু টটেনহামে আসছেন, এ বছর জুনে এই খবরটা শুনেই গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘আরও একজন অসাধারণ কোচ আসছেন প্রিমিয়ার লিগে। তিনি এমন একজন কোচ, যিনি ফুটবল খেলাটাকে আরও সুন্দর বানিয়েছেন।’

গার্দিওলা ও পোস্তেকোগলু দুজনের ফুটবল দর্শনই বেশ কাছাকাছি। বলের দখল রেখে ক্রমাগত পাসে আক্রমণ গড়া, ফলের দিকে না তাকিয়ে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা, গত কিছুদিনে টটেনহামের খেলাতেও তাই বেশ পরিবর্তনের ছাপ। আসলেই কি পোস্তেকোগলু গার্দিওলার ফুটবল দর্শনে প্রভাবিত? প্রশ্নটা শুনে গত জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ বলেছিলেন, ‘আমার ফোনবুক চেক করে দেখুন, তাঁর নম্বরই নেই।’

সরাসরি হয়তো যোগাযোগ নেই, কিন্তু ফুটবল–দর্শনে মিলটা বেশ স্পষ্ট। প্রক্রিয়া অনুসরণের ব্যাপারে দুজনেই খুব কঠোর, দুজনের কাছেই ‘ভালো’র কোনো শেষ নেই, আরও বেশি চান সব সময়ই। গার্দিওলার মতোই পুরো স্বাধীনতা না পেলে কিংবা নিজের ফুটবল দর্শনের সঙ্গে না মিললে সেই জায়গায় কাজ করেন না পোস্তেকোগলু। এ কারণেই ২০১৮ বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন, কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের লক্ষ্য আর তাঁর লক্ষ্য এক নয়। নিজেকে প্রতিনিয়ত পরীক্ষার মধ্যে ফেলতে চান বলেই কোনো ক্লাবে তিন বছরের বেশি স্থায়ী হননি।

আরও পড়ুন

গার্দিওলার বিপক্ষে আজ পোস্তেকোগলুর যে দলটা খেলবে, তারা টানা তিন ম্যাচ জয়হীন, রক্ষণভাগ চোটে জর্জরিত। এমন একটা দল নিয়ে সিটির বিপক্ষে ওদেরই মাঠে হলান্ড-আলভারেজ-ফোডেনদের আক্রমণভাগ সামলানো, রদ্রির কাছ থেকে মাঝমাঠে বল কেড়ে নেওয়া, কঠিনের চেয়েও বেশি কিছু।

কিন্তু সিটিকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেই তো বছর চারেক আগে পোস্তেকোগলু জয় করেছিলেন গার্দিওলার মন। আজও কি পারবেন?