দায়িত্ব নিয়ে যা বললেন বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ
গত ২৬ অক্টোবর বাফুফের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েই দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছিলেন এএফসির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখান থেকে দেশে ফিরে আজই প্রথম বাফুফে ভবনে আসেন বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল। বিকেল চারটার পর তাবিথ আসার আগেই বাফুফের নতুন নির্বাহী কমিটির অনেকে আসেন ভবনে। এ সময় বাফুফে ভবন চত্বরে ছিল না কোনো আড়ম্বর। অন্য দিনের মতোই ছিল সবকিছু। সাংবাদিকেরা অপেক্ষা করছিলেন নতুন সভাপতির জন্য, এই যা। নতুন সভাপতিকে বরণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা চোখে পড়েনি ভবনের বাইরে।
নতুন পরিচয়ে চার বছর পর বাফুফে ভবনে এসে বাফুফের বেতনভুক্ত কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন তাবিথ। পরিচিত হয়েছেন বাফুফের নতুন নির্বাহী কমিটির সঙ্গেও, যেখানে ২০ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিসহ ১৮ জন। নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বাইরে বেরিয়ে আসেন রজনীগন্ধা ফুল হাতে। বাফুফের কর্মীরা এটি দিয়েছেন সভাপতি ও নতুন কমিটির সদস্যদের। সন্ধ্যায় সিনিয়র সহসভাপতি, চার সহসভাপতি ও নির্বাহী কমিটির ১২ সদস্যকে নিয়ে ভবনের তৃতীয় তলায় সম্মেলনকক্ষে সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সঙ্গে বসেন বাফুফের নতুন সভাপতি।
একটা নতুন কমিটি, এটা ফেস্টিভের জায়গা, এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। খেলার মনমানসিকতা নিয়ে আমরা আগামী চার বছর পালন করতে চাই। সেই বার্তা দিতেই এসেছিলাম আমরা।তাবিথ আউয়াল, বাফুফে সভাপতি
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় তাবিথ কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। বাফুফের কোনো নীতিনির্ধারণী বিষয়ে তাঁর কিছু বলার কথা নয় প্রথম দিনে, বলেনওনি। ৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই কমিটি যাত্রা করবে। সেদিনই কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারবেন জানিয়ে তাবিথ বলেন, ‘আজ আমরা সব স্টাফের সঙ্গে বসেছি (দেশের বাইরে থাকায় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না), সর্বোচ্চ স্টাফ থেকে ক্লিনার পর্যন্ত সবার সঙ্গে পরিচিতি সভা করেছি। পরপরই মেয়েদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। আগামী দিনের কিছু পরিকল্পনার কথা বলেছি।’
পরক্ষণেই যোগ করেন, ‘একটা নতুন কমিটি, এটা ফেস্টিভের জায়গা, এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। খেলার মনমানসিকতা নিয়ে আমরা আগামী চার বছর পালন করতে চাই। সেই বার্তা দিতেই এসেছিলাম আমরা।’
নারী ফুটবলাররা সাফ শিরোপা ধরে রেখেছেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাঁদের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করবে বাফুফে। অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানও মেয়েদের সংবর্ধনা দিতে চায় জানিয়ে নতুন সভাপতির কথা, ‘৯ নভেম্বর আমাদের প্রথম সভায় নির্বাহী কমিটিতে পাস করে মেয়েদের পুরস্কারের ব্যাপারে একটা ঘোষণা দেব।’
২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সাবিনা থাতুনদের কিছু সংবর্ধনা ছিল নিম্নমানের। নামমাত্র উপহার দিয়ে প্রচার নিয়েছে অনেকে। এ নিয়ে প্রশ্ন হলে বাফুফের নতুন সভাপতি বলেন, ‘এটি প্রশ্ন নয়, পরামর্শ হিসেবে নিলাম। বিষয়টা নিয়ে আমরা সচেতন থাকব।’
আমরা একটা দল হয়ে কাজ করব। বিগত কমিটির কয়েকজন নতুনভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কয়েকজন নতুন। তৃতীয় গ্রুপ আছে আমার মতো বাইরে ছিলেন এক-দুই টার্ম। তাঁরা ফিরে এসেছেন। তিন ধরনের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে চাইছিতাবিথ আউয়াল, বাফুফে সভাপতি
২০১২ ও ২০১৬ সালে বাফুফের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তাবিথ। ২০২০ সালের অক্টোবরে তৃতীয় মেয়াদে সহসভাপতি পদে প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন। চার বছর পর ভবনে ফিরেছেন নতুন পরিচয়ে, বসেছেন ১৬ বছর বাফুফের সভাপতি পদে থাকা কাজী সালাহউদ্দিনের চেয়ারে।
বাফুফে ভবনে এসে তাঁর মনে হয়েছে নিজের বাসায় ফিরেছেন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘নতুন সভাপতি হওয়ার রোমাঞ্চটা এখনো আমার মাথায় খেলছে না। এখনো স্বপ্নের ভেতর আছি নাকি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, সেটা বুঝতে পারছি না। একদিন না একদিন সভাপতি হব—স্বপ্ন ছিল। কিন্তু কবে কোন তারিখে বা কোন দিনে ঘুমের ভেতরে চিন্তা করেছি যে সভাপতি হব নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। ২০১২ সালে প্রথমবার বাফুফের সহসভাপতি হয়ে চিন্তা ছিল একদিন সভাপতি পদে লড়ব। কিন্তু তা এত শিগগির বাস্তবায়ন হবে ভাবিনি। অবশ্যই গর্বিত।’
কাজী সালাহউদ্দিন অনেক সিদ্ধান্ত নিজ দায়িত্বে নিতেন। পরে নির্বাহী কমিটিতে পাস করাতেন। তবে তাবিথ তেমনটা করবেন না বলেই মনে হলো তাঁর কথায়, ‘আমরা একটা দল হয়ে কাজ করব। বিগত কমিটির কয়েকজন নতুনভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কয়েকজন নতুন। তৃতীয় গ্রুপ আছে আমার মতো বাইরে ছিলেন এক-দুই টার্ম। তাঁরা ফিরে এসেছেন। তিন ধরনের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে চাইছি।’
এরপরই তাঁর কণ্ঠে বিনয়, ‘এখানে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন। আমার চেয়ে অনেক যোগ্য সংগঠক আছেন, অনেক খ্যাতিমান খেলোয়াড় আছেন। যাঁরা ডেলিগেটের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আমি নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে করি। কারণ, তাঁরা আমাকে নেতৃত্বের জায়গাটা দিতে রাজি হয়েছেন। কমিটির বাকি ১৯ জনকে প্রশ্ন করা উচিত, তাঁরা আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট কি না। আমি তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য কি না।’
বাফুফেতে স্টাফ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, নির্বাহী কমিটিও গুরুত্বপূর্ণ। সভাপতি না থাকলে সিনিয়র সহসভাপতি থাকবেন। সিনিয়র সহসভাপতি না থাকলে সহসভাপতিরা থাকবেন। যেকোনো সদস্যকেও কোনো না কোনো সময় দায়িত্ব নিতে হবে সভাপতি পদে কিছু দায়িত্ব পালন করার জন্য। এভাবেই কমিটি চালাবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক এই ফুটবলার।
বাফুফেতে অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়েও এই ফাঁকে প্রশ্ন হয়েছে। তবে এসব নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি বাফুফের নতুন সভাপতি, ‘বিষয়গুলোর সত্যতা কতটুকু, কতটা আর্থিক বিষয় দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের আরেকটু খতিয়ে দেখতে হবে। ৯ তারিখে যখন সঠিক তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করতে পারব, তখন সিদ্ধান্তগুলো জানাতে পারব।’
এই কমিটি পেছনে তাকাবে না, আগামীর দিকে তাকিয়ে কাজ করবে। সভাপতি হিসেবে তাঁর দায়িত্ব কাজ করা, সমাধান করা, যেটা দেখে সবাই খুশি হয়। এমনটাই বলেছেন তাবিথ। আর চান নিজেদের বদলে দিতে, ‘সময়ের সঙ্গে সবকিছু বদলানো স্বাভাবিক। এবং আমরাও নিজেদের বদলে দেব।’