‘ম্যারাডোনা ব্র্যান্ড’ নিয়ে ফুফুদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন তাঁর মেয়েরা

বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালতে হাজির হয়েছিলেন ম্যারাডোনার মেয়ে দালমা ম্যারাডোনাএএফপি

চার বছরের বেশি সময় হয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনা নেই! ফুটবল ছেড়ে, পৃথিবী ছেড়ে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর চলে গেছেন কিংবদন্তি ফুটবলার। তাঁর চলে যাওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখছেন বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালত।

ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোয় তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন আটজন চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলাজনিত অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা করেন ম্যারাডোনার দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ান্নিনা। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতেই চলছে বিচার কার্যক্রম। বাদীপক্ষের হয়ে আদালতে লড়ছেন আর্জেন্টাইন আইনজীবী ফের্নান্দো বার্লান্দো। গত মঙ্গলবার এক টিভি অনুষ্ঠানে এই আইনজীবী বলেছিলেন, ‘ম্যারাডোনাকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে।’

বার্লান্দোর এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতে ম্যারাডোনার পাঁচ বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ক্লদিয়া দাবি করেছেন, শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের কারণে ম্যারাডোনা কখনো কখনো চিকিৎসা নিতেও অনীহা প্রকাশ করতেন। বৃহস্পতিবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদীপক্ষের দুজন—ম্যারাডোনার দুই বোন ক্লদিয়া ও আনা। সেখানে ক্লদিয়া বলেছেন, ‘আমার ভাই মাঝেমধ্যেই চিকিৎসা নিতে অনীহা প্রকাশ করতেন। মূলত তাঁর শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের জন্যই এমনটা হতো।’ এর সঙ্গে আরেক বোন আনা আদালতকে জানান, ‘আসলে তিনি নিজে যেটা চাইতেন, সেটাই করতেন।’

নিজেদের আইনজীবীর সঙ্গে ম্যারাডোনার দুই বোন আনা (মাঝে) ও ক্লদিয়া (ডানে)
এএফপি

দুই বোন আরও বলেছেন, মামলার অন্যতম আসামি নিউরোসার্জন লিওপোল্ডো লুক ছিলেন ম্যারাডোনার বিশ্বস্ত একজন চিকিৎসক। এ ছাড়া কয়েকজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন, যে বাড়িতে ম্যারাডোনা মারা গিয়েছিলেন, সেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা উপযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, যেমন ডিফিব্রিলেটর (হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক করার বিশেষ যন্ত্র) ছিল না।

ম্যারাডোনার মৃত্যুর সপ্তাহখানেক আগে অলিভোসের একটি ক্লিনিকে তাঁকে দেখতে যান বোন আনা। তখন ম্যারাডোনার স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নেন তিনি। ঠিক সেদিনই বুকে ব্যথার কথা বোনকে জানিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার আরেক বোন রিতাও বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, ম্যারাডোনার স্বাস্থ্যের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত সাধারণত তাঁর মেয়েরাই (দালমা ও জিয়ান্নিনা) নিতেন।

যখন ম্যারাডোনা অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন নাকি ম্যারাডোনার দুই বোনকে দালমা আশ্বস্ত করেছিলেন, আর্জেন্টাইন মহানায়কের যত্নের ত্রুটি হবে না। তাঁরাই তাঁর বাবার স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন জানিয়ে ফুফুদের ম্যারাডোনার মেয়েরা বলেছিলেন, ‘এটা (ম্যারাডোনার অসুস্থতা) নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। আমাদের বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স হয়েছে। বাবার স্বাস্থ্যের যত্ন আমরাই নেব।’

আরও পড়ুন
প্রয়াত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা
এএফপি

ম্যারাডোনা ও তাঁর বোনদের মধ্যে চুক্তি নিয়ে সাক্ষীদের বাদীপক্ষের আইনজীবীর করা কিছু প্রশ্ন নিয়ে আপত্তি জানান ম্যারাডোনার বোনদের আইনজীবী পাবলো হুরাডো। এ বিষয়ে হুরাডোর যুক্তি ছিল এ রকম—এসব প্রশ্ন তাঁর মক্কেলদের অন্য একটি মামলায় প্রভাব ফেলতে পারে, যে মামলা ম্যারাডোনার মেয়েরা ‘ম্যারাডোনা ব্র্যান্ড’-এর অধিকার নিয়ে তাঁদের ফুফুদের বিরুদ্ধে করতে যাচ্ছেন।

হুরাডোর এমন বক্তব্য আদালত আমলে না নিলেও ম্যারাডোনার বোনেরা চুপ থাকতে পারেননি। ক্লদিয়া একটু উঁচু গলায়ই আদালতকে বলেছেন, ‘ব্র্যান্ডগুলো এমন কিছু, যা সে (ম্যারাডোনা) আমাদের পুরো পরিবারের জন্য রেখে গেছে।’

গত ১১ মার্চ শুরু হওয়া এই বিচারকাজ জুলাই পর্যন্ত চলতে পারে। যেখানে প্রায় ১২০ জনের সাক্ষ্য নেবেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের (সাত চিকিৎসকের) ৮ থেকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আগামী মঙ্গলবার ম্যারাডোনার কনিষ্ঠ সন্তানের মা ভেরোনিকা ওজেদাও সান ইসিদরো আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। মামলার অষ্টম আসামি একজন নার্সের বিচার হবে আলাদাভাবে।

আরও পড়ুন