রাশফোর্ডকে নিয়ে হচ্ছেটা কী
খেলে তো আলোচনায় থাকেনই, না খেলেও প্রায়ই আলোচিত হয়ে ওঠেন, এমন খেলোয়াড়দের অন্যতম মার্কাস রাশফোর্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইংলিশ উইঙ্গার এবার আলোচনায় এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডের দলে না থেকে। কাল রাতে নিউপোর্টের বিপক্ষে ইউনাইটেডের ৪–২ ব্যবধানের জয়ের ম্যাচে ছিলেন না রাশফোর্ড। ছিলেন না শুক্রবার দলের অনুশীলনেও।
কেন ছিলেন না, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে অস্বাভাবিক কিছুর ইঙ্গিত। ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে রাশফোর্ডকে নিয়ে ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ শুধু ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলেই এড়িয়ে যেতে চাইলেন। জানালেন, ব্যাপারটা তিনি দেখবেন। কিন্তু কী এমন ঘটল, যে টেন হাগকে কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা করতে হলো?
নিউপোর্ট কাউন্টির বিপক্ষে ম্যাচের আগেই অবশ্য রাশফোর্ডের অনুপস্থিতির সম্ভাব্য একটা কারণ সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, বুধ ও বৃহস্পতিবার রাতে রাশফোর্ডকে বেলফাস্টের নৈশ ক্লাবে দেখা গেছে। এরপর শুক্রবার ইউনাইটেডের অনুশীলনে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
রোববার এফএ কাপের ম্যাচশেষে সাংবাদিকরা টেন হাগকে রাশফোর্ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সে অসুস্থ বলে জানানো হয়েছে। আর বাকিটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমি বিষয়টা দেখব।’ এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, একজন খেলোয়াড়ের অসুস্থতা কেন অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হবে? জবাবে টেন হাগ আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করে বলেন ‘এটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’ পাল্টা প্রশ্ন হয়, কোচের এ ধরনের জবাব উত্তরের চেয়ে প্রশ্নই বেশি জন্ম দিচ্ছে কি না? ইউনাইটেড কোচকে তখন কিছুটা বিরক্তই দেখা যায়, ‘আপনার জন্য, আমার জন্য নয়। এটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমাকে এটা নিয়ে কিছু করতে হবে। আমাদেরই করতে হবে।’
ইংল্যান্ডের সাবেক ফরোয়ার্ড অ্যালান শিয়ারার ইউনাইটেড কোচের এমন প্রতিক্রিয়ার মধ্যে লুকোচুরি আছে বলে মনে করছেন। সাবেক এই ফুটবলার বিবিসির সঙ্গে আলাপে রাশফোর্ডের শৃঙ্খলার প্রসঙ্গটি টানেন, ‘এটা যদি অভ্যন্তরণীণ ব্যাপার হয়, তাহলে ভেতরে কিছু একটা চলছে বলে মনে করাই যেতে পারে। রাশফোর্ড বেশ প্রতিভাবান। গত মৌসুমে ওর নিয়ম–শৃঙ্খলায় থাকার বিষয়টা আমরা দেখেছিলাম। দেরি করে মিটিংয়ে যাওয়ায় একটা ম্যাচে বাদও দেওয়া হয়েছিল। তবে (এবারও) নিশ্চিতভাবে কিছু একটা গণ্ডগোল আছে। হয়তো ওর বাড়িতে, নয়তো ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কের দিক থেকে।’
রাশফোর্ডকে ঘিরে কোনো একটা সমস্যা যে হয়েছে, সেটি ধারণা করছেন সাবেক ইংলিশ ডিফেন্ডার মিকাহ রিচার্ডসও, ‘মার্কাসের বোঝা দরকার সে পাবলিক ফিগার। যেখানে যাবে সেখানেই মানুষের মনোযোগে থাকবে। তাঁকে ছুটি দেওয়া হোক বা যা–ই হোক না কেন, ম্যাচের আগে সে সমস্যাই তৈরি করছে। (আজ) ইউনাইটেড মাঠে এসেছে খেলতে। সব মনোযোগ এখানেই। কিন্তু কোচকে জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে মাঠের বাইরে কী ঘটেছে।’
ক্লাব ক্যারিয়ারের শুরু (২০১৬) থেকে ইউনাইটেডে কাটানো রাশফোর্ড সর্বশেষ তিন মৌসুম ধরে উত্থান–পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ২০২১–২২ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩২ ম্যাচে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৫ গোল। কিন্তু ২০২২–২৩ মৌসুমে এমন ছন্দে ফেরেন যে, ৫৬ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে করেন ৩০ গোল, সতীর্থদের সহায়তা করেন আরও ১১ গোলে।
চলতি ২০২৩–২৪ মৌসুমে অবশ্য আবারও উল্টোযাত্রায়। এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৬ ম্যাচ খেলে গোল মাত্র ৪টি। এর মধ্যে জড়িয়েছেন নতুন সমস্যায়। এর আগে গত নভেম্বরে শৃঙখাভঙ্গের ঘটনায় লিগ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচও মিস করেছিলেন। সে বার ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ইউনাইটেডের ৩–০ ব্যবধানে হারের কয়েক ঘণ্টা পরই রাশফৈার্ডকে একটি বিলাসবহুল নাইটস্পটে জন্মদিন উদ্যাপন করতে দেখা গিয়েছিল।