মারা গেছেন জার্মানির কিংবদন্তি ফুটবলার উয়ি সিলার
কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়নস লিগ) কিংবা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপও (ইউরো) জেতা হয়নি। তবু উয়ি সিলারকে জার্মানির ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মান ফুটবলের ‘আইকনিক’ এই খেলোয়াড় ৮৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। কাল তাঁর ক্লাব হামবুর্গ খবরটি নিশ্চিত করেছে।
১৯৬৬ বিশ্বকাপে জার্মানির অধিনায়কত্ব করা সিলার এক ক্লাবেই নিজের ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে হামবুর্গের হয়ে অভিষেকের পর ক্লাবটির হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলেন ১৯৭২ সালে। ৫৮০ ম্যাচে ৪৯০ গোল করা সাবেক এই স্ট্রাইকার ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা।
তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে হামবুর্গ মিউনিসিপ্যালিটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উয়ি সিলারের জন্য শোকাহত হামবুর্গ। বুন্দেসলিগায় তিনিই প্রথম সর্বোচ্চ গোলদাতা। প্রিয়জনদের রেখে তিনি মারা গেছেন।’
হার্মবুগের টুইটে বলা হয়, ‘উয়ি সিলারের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। হামবুর্গের ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড়টি ৮৫ বছর বয়সে মারা গেলেন। প্রিয় উয়ে, শান্তিতে ঘুমান।’ সাবেক পশ্চিম জার্মানির হয়ে ৭২ ম্যাচে ৪৩ গোল করা সিলার চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে অতিরিক্ত সময়ে ৪–২ গোলে হেরেছিল জার্মানি, সে ম্যাচে জার্মানির অধিনায়কত্ব করেন তিনি।
প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি বিশ্বকাপে গোলও করেছিলেন। ২০০৪ সালে এখনো জীবিত আছেন এমন খেলোয়াড়দের নিয়ে বানানো ফিফার সর্বকালের সেরা ১২৫ এর তালিকায় সিলারকে রেখেছিলেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে। মৃত্যুর সময় স্ত্রী ইলকা ও তিন কন্যা রেখে গেছেন সিলার। তাঁর নাতি লেভিন ওজটুনালি বুন্দেসলিগার দল ইউনিয়ন বার্লিনের মিডফিল্ডার।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ সিলারের মৃত্যুতে টুইট করেন, ‘তিনি ছিলেন অনেকের রোল মডেল। আমরা তাকে মিস করব।’ ১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া সিলার খেলা ছাড়ার পর হামবুর্গের সভাপতিও হয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনিয়ম নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ১৯৯৮ সালে পদটি ছেড়ে দেন।
যদিও সেই বিতর্কে তাঁর তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না বলে মনে করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান ফুটবলের জাগরণে সিলার ছিলেন অন্যতম স্তম্ভ। ১৯৫৮ বিশ্বকাপ চতুর্থ এবং ১৯৬২ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের পর ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের দেখা পান সিলার।
তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়া সেই ফাইনালে জিওফ হার্স্টের একটি গোল নিয়ে বিতর্ক হয় এখনো। হার্স্টের গোলেই ৩–২ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। গোলটা অবৈধ ছিল সে কথা সব সময়ই বলে এসেছেন সিলার। ২০১৬ সালেও বলেছেন, ‘আমি বক্সেই ছিলাম। নিজেই দেখেছি বল গোললাইন অতিক্রম করেনি।’
সে বিশ্বকাপ ফাইনালের ৫০ বছর পূর্তিতে সিলার জানান, ঘটনাটি তিনি এখন আর বিতর্কের চোখে দেখেন না, ‘এতদিনে সব খেলোয়াড়েরাই সম্ভবত তা হজম করতে পেরেছে। মুহূর্তটা অনেক কিছু ঠিক করে দিলেও খেলাধুলা তো এমনই। অনেক সময় মেনে নিতে হয়।’
সেই ফাইনালের পর মাঠেই ভেঙে পড়া সতীর্থদের এক এক করে তুলে দাঁড় করান সিলার। এরপর দর্শকদের সামনে ল্যাপ অব অনার দেন। মুহূর্তটা বিশ্বকাপের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা হয়ে আছে।
বায়ার্ন মিউনিখের প্রধান নির্বাহী অলিভার কান সিলারের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলেছেন, ‘জার্মান ফুটবল এবং সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে ভাবলে উয়ে সিলারের নাম আসবেই।’
উয়েফার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চারটি বিশ্বকাপে খেলা কিংবদন্তি। দেশের হয়ে ৭০ ম্যাচের বেশি খেলা এই ফুটবলার জার্মান ফুটবলের আধুনিকীকরণে সাহায্য করেছেন।’