নেইমারের এই চোট কতটা মারাত্মক
ব্রাজিল এই বিশ্বকাপে যে দৃশ্যটা দেখতে চায়নি সেটাই দেখতে হলো প্রথম ম্যাচেই। নেইমার খোঁড়াচ্ছেন!
রিচার্লিসনের (৭৩ মিনিট) চোখ ধাঁধানো গোলে ব্রাজিলের সমর্থকেরা যদি আনন্দের শীর্ষবিন্দুতে উঠে যান, তাহলে ওই গোলের প্রায় ৭ মিনিট পর চোট পেয়ে নেইমারের মাঠ ছেড়ে যাওয়া দেখে তারা অবশ্যই মাটিতে নেমে এসেছেন। বেঞ্চে বসে কাঁদছিলেন নেইমার। ব্রাজিলের সমর্থকেরা ততক্ষণে যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। কাতার বিশ্বকাপে নেইমারকে আর দেখা যাবে তো!
ব্রাজিল দলের চিকিৎসক রদ্রিগো লাসমার কাল ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে বেঞ্চেই আমরা চিকিৎসা শুরু করেছি... ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হবে। আগামীকাল (আজ) আরেকবার চোট পরিস্থিতি দেখা হবে। আমরা অপেক্ষা করছি। আগেভাগে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
ব্রাজিল কোচ তিতে নেইমারের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারানোর পর তিতে বলেছেন, ‘নিশ্চিত থাকতে পারেন সে বিশ্বকাপে খেলবে।’ তবে ভয়ের কারণও আছে। সেই ভীতি কতটা—তা জানিয়েছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো।’
৬৭ মিনিটে সার্বিয়ান ফুলব্যাক মিলেনকোভিচের কড়া ট্যাকলে নেইমারের ডান পায়ের অ্যাঙ্কেল মচকে যায়। এর প্রায় ১৩ মিনিট ব্রাজিল ফরোয়ার্ডকে মাঠ থেকে তুলে নেন তিতে। তখন তাঁর মাঠ ছাড়া দেখে অনেকেরই ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল-কলম্বিয়া কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি মনে পড়েছে।
জুনিগার ট্যাকলে সে ম্যাচে মেরুদণ্ডে পাওয়া ভয়াবহ চোটে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল নেইমারের। এবারও কি তবে তেমন কিছু হবে! ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, নেইমার যে ধরনের চোট পেয়েছেন, তা সারিয়ে তুলতে সময় লাগে। চোট কতটা মারাত্মক তা নিশ্চিত হওয়ার পর সেরে ওঠার সময়টা নির্ধারণ করা যায়।
ব্রাজিলের অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি সোসাইটির (এসবিওটি) মতে, ‘পায়ের আড়াআড়ি মুভমেন্ট যখন সাধারনক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়’ তখন অ্যাঙ্কেল মচকানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। আঘাতেও এমন হতে পারে।
এসবিওটির নির্দেশনা অনুযায়ী এই চোটের তীব্রতাকে তিনটি ভাগে করা হয়েছে—লিগামেন্টে টান পড়লে সেটি গ্রেড ওয়ান ইনজুরি। লিগামেন্টে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্রেড টু ইনজুরি এবং লিগামেন্ট পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি গ্রেড থ্রি পর্যায়ের ইনজুরি। অন্তত ‘চার ধাপ হাঁটতে না পারলে’ এবং অ্যাঙ্কেলের যেখানে পায়ের হাড় সংযুক্ত হয়েছে সেখানে ব্যথা অনুভব করলে এক্স-রে ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। নেইমার ঠিক ওই জায়গাটাতেই ব্যথা পেয়েছেন।
চোট সাধারণমাত্রার হলে শুধু আইসপ্যাক ব্যবহার, কিছু ব্যায়াম আর বিশ্রামের মাধ্যমে তিন দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। ফিজিওথেরাপিও প্রয়োজন হয়। আর স্বাভাবিক কাজ-কর্মে ফিরতে হয় ধীরে ধীরে।
এদিকে লাসমার জানিয়েছেন, নেইমারের চোট কতটা গুরুতর তা প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর বোঝা যাবে। ২০১৯ সালে কাতারের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে ডান পায়ের এই অ্যাঙ্কেল মচকে নিয়েই কোপা আমেরিকায় খেলতে পারেননি নেইমার। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়েছিল, নেইমারের আঘাত পাওয়ার জায়গায় লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে।
সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নেইমার কিন্তু একই জায়গায় আঘাত পেয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠতে নেইমারকে তখন ক্রাচ ব্যবহার করতে হয়েছে। কারণ, পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো নিষেধ ছিল।
২০১৮ বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের ম্যাচেও ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন নেইমার। সে ম্যাচে বারবার ফাউলের শিকার হয়েছেন। সার্বিয়ার বিপক্ষেও ৯বার কড়া ফাউলের শিকার হয়েছেন ব্রাজিলের এই তারকা। কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যা সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার ফাউলের শিকার হওয়ার রেকর্ড। এখন প্রশ্ন হলো, নেইমারের মাঠে ফিরতে কত দিন লাগতে পারে?
এসওবিটির নির্দেশনা অনুযায়ী, আঘাত মাঝারি মাত্রার হলে মাঠে ফিরতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। সোমবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। ২ ডিসেম্বর ক্যামেরুনের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল।