শেষের ‘লড়াইগুলো’ উপভোগ করছেন মেসি
নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজার পর একটু অন্য রকম দৃশ্য দেখা গেল। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা বেশ আবেগতাড়িতভাবেই গ্যালারির সমর্থকদের সামনে সবাই মিলে জয় উদ্যাপন করলেন। এমন নয় যে কখনো তাঁরা এভাবে উদ্যাপন করেননি; কিন্তু ক্যামেরা লিওনেল মেসির মুখে ধরার পর কিংবদন্তির চোখেমুখে আবেগটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। আরেকটি ফাইনাল! এটাই কি শেষ?
প্রশ্নের উত্তর শুধু মেসিই জানেন। গত মাসেই ৩৭ বছর পূর্ণ করেছেন। চাইলে অবসর নিতে পারতেন ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের পরই। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিটা তাঁর ভালোবাসার সম্পদ। ভালোবাসাটুকু সব সময় বুকে ধরে রাখেন বলেই আর্জেন্টিনার জার্সিতে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়টুকু যতটা সম্ভব উপভোগের ইচ্ছাটা বিশ্বকাপ জয়ের পরই জানিয়েছিলেন মেসি। প্রশ্ন হলো, আজ আবার সেই প্রসঙ্গ উঠছে কেন? ভালোই তো দিন কাটছিল। মেসিকে মাঠে দেখার আনন্দে হুট করে কেন এই চোখরাঙানি?
কারণটা মেসি নিজেই। মেটলাইফ স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কানাডাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর মেসি নিজেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটা তাঁর (ক্যারিয়ারের) শেষ সময়। দেশের জার্সিতে এগুলো তাঁর ক্যারিয়ারের ‘শেষ লড়াইগুলো’র অংশ। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের তাতে মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। কিংবদন্তিকে একদিন থামতে হবেই—এই নির্মম সত্য কথাটা ইচ্ছা করেই বেমালুম ভুলে মাঠে তাঁকে খেলতে দেখার আনন্দে মজে ছিলেন সবাই। সবাই—কথাটা ইচ্ছা করেই বলা। কারণ, মেসিকে বল পায়ে দৌড়াতে দেখতে না চাওয়া মানুষ সম্ভবত পৃথিবীতে নেই!
আমজনতার মেসিকে আরও যত দিন সম্ভব দেখার সে ইচ্ছায় আজ ‘নোটিশ’ ঝুলিয়ে দিলেন কিংবদন্তি নিজেই। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসকে মেসি বলেছেন, ‘আবারও ফাইনালে ওঠা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়া সহজ নয়। গত বিশ্বকাপ এবং সর্বশেষ কোপায় যেভাবে কাটিয়েছি, আমি এই সময়টাও সেভাবেই কাটাচ্ছি...এগুলো শেষ লড়াই এবং আমি এসব সর্বোচ্চ উপভোগ করছি।’
বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসিকে যে উপভোগের মন্ত্র পেয়ে বসেছে, তা বলাই বাহুল্য। কাতার-কীর্তির পর থেকে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসিকে বেশির ভাগ সময় ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। যেন চাপহীন এক নির্ভার মানুষ। সেটার পেছনে যে আর্জেন্টিনা দল এবং দীর্ঘদিনের সতীর্থরা, তা–ও বুঝিয়ে দিলেন মেসি, ‘সত্যি হলো, এ দলের খেলোয়াড়েরা যা করেছে এবং আর্জেন্টিনা দল যা করছে, তা পাগলাটে।’
সেমিফাইনালে কানাডার বিপক্ষে গোল পেয়েছেন মেসি। এবার কোপায় এটাই তাঁর প্রথম গোল। সেই গোলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ইরানের আলী দাইয়িকে পেছনে ফেলে দুইয়ে উঠে এসেছেন মেসি (১০৯ গোল)। শুধু তা–ই নয়, ব্রাজিলের জিজিনিওর পর কোপা আমেরিকার ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ছয়টি আলাদা টুর্নামেন্টে গোলও করলেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে যুক্তরাষ্ট্রে আজ করলেন নিজের ১৯তম গোল। জাতীয় দলের হয়ে মেসি এ পর্যন্ত ২২টি দেশে গোল করেছেন। সর্বোচ্চ ৩২ গোল করেছেন জন্মভূমি আর্জেন্টিনায়, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় (১৯) ও তিনে ব্রাজিল (৯)।
চাইলে মেসির এমন আরও পরিসংখ্যান হয়তো বের করা যায়। কিন্তু তাঁতে মেসিকে দুচোখভরে দেখার সময়ও নষ্ট হয়। দেখার আনন্দ তো আর নির্জীব সংখ্যায় মেলে না! মেসিও বুঝিয়ে দিলেন, আর বেশি দেরি নেই সেই সময়ের, যেদিন আর্জেন্টিনার সমর্থক তো বটেই, তার বাইরেও অনেক ফুটবলপ্রেমীর পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগতে পারে! বললেন, ‘উপভোগও করছি, এর পাশাপাশি ফিদেও (দি মারিয়া), ওতার (নিকোলাস ওতামেন্দি) মতো আমিও মনে করছি, এগুলো (আমাদের) শেষ লড়াই।’
জাতীয় দলের জার্সিতে ‘লড়াই’ কবে শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে মেসি কিছুই বলেননি। সেসব বলার সময়ও এখন নয়। সময়টা আপাতত উপভোগের। তবে যে কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার বিনিময়ে এমন উপভোগের সময় মিলেছে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মেসি, ‘আমরা এ নিয়ে টানা চতুর্থ (ফিনালাসিমাসহ) ফাইনাল খেলব। কথাটা বলা সহজ হলেও পুরো অভিযাত্রা অনেক কঠিন ছিল। আসুন সময়টা উপভোগ করি, সামনে আরেকটি ফাইনাল। সৃষ্টিকর্তা চাইলে গতবারের (চ্যাম্পিয়ন) মতোই হবে।’