চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫০ ছুঁয়ে রোনালদোকে কী ইঙ্গিত দিলেন এমবাপ্পে

রিয়ালকে গোল এনে দেওয়ার পর এমবাপ্পেএএফপি

আনন্দ ও শঙ্কা—দুটোই ছড়িয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।

মাঠে ছিলেন ৩৫ মিনিট। তারপর চোটের কারণে তাঁকে তুলে নিতে বাধ্য হন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি। না, কোনো খেলোয়াড়ের ট্যাকল কিংবা সংঘর্ষের শিকার হননি। ইএসপিএনকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বাঁ ঊরুতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন এমবাপ্পে। আজ তাঁকে পরীক্ষা করা হবে। জয়ের পর আনচেলত্তি বলেছেন, ‘(এমবাপ্পের) টান লেগেছে। দেখে মারাত্মক কিছু মনে হয়নি, তবে আমি বলতে পারব না। দেখা যাক, আগামীকাল (পরীক্ষায়) কী হয়। সে দৌড়াতে পারছিল না। অস্বস্তি বোধ করছিল। তাই বাধ্য হয়েই তাকে তুলে নিতে হয়েছে।’

আরও পড়ুন

এমবাপ্পেকে নিয়ে এটুকু যদি শঙ্কার হয়, তবে মাঠের ওই ৩৫ মিনিট রিয়াল সমর্থকদের জন্য আনন্দের, স্বস্তিরও। যেমন এমবাপ্পেকে তাঁরা দেখতে চান, তেমনই দেখলেন।

বেরগামোয় আতালান্তার বিপক্ষে রিয়ালের ৩-২ গোলের স্বস্তির এই জয়ে প্রথম গোলটি এমবাপ্পের। ১০ মিনিটে ব্রাহিম দিয়াজের পাস থেকে বক্সের ভেতরে গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে যেভাবে পাশ কাটালেন, সেটা দেখার মতো। বাঁ পায়ে বলটা রিসিভ করেছেন এমনভাবে, যেন ডিফেন্ডার কোনো সুযোগই না পান বাধা দেওয়ার। তারপর স্ট্রাইকারসুলভ শটে গোল। এর বাইরে আরও দুটি শট নিয়েছিলেন, সেগুলোও পোস্টে ছিল। তবে ওই গোল এমবাপ্পেকে পৌঁছে দিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক অভিজাত ক্লাবে।

বাঁ ঊরুতে অস্বস্তি বোধ করায় মাঠ ছাড়েন এমবাপ্পে
এএফপি

চ্যাম্পিয়নস লিগে এ নিয়ে ৭৯ ম্যাচে ৫০ গোল হয়ে গেল এমবাপ্পের। ইউরোপসেরার এই আসরে দ্রুততম ৫০ গোলের দৌড়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেললেন ফরাসি তারকা। রোনালদোর লেগেছিল ৯১ ম্যাচ। সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে দ্রুততম ৫০ গোলের তালিকায় এমবাপ্পে এখন চতুর্থ। এই তালিকায় প্রথম তিনজনের নাম যথাক্রমে—রুড ফন নিস্টলরয় (৬২), লিওনেল মেসি (৬৬) এবং রবার্ট লেভানডফস্কি (৭২)।

আরও পড়ুন

চ্যাম্পিয়নস লিগে মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিষিক্ত এমবাপ্পে নাম লিখিয়েছেন আরও একটি তালিকায়। কাল রাতে ৫০তম গোলটি করেছেন ২৫ বছর ১১ মাস ২০ দিন বয়সে। চ্যাম্পিয়নস লিগে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোলের ‘ফিফটি’ পেলেন এমবাপ্পে। সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ডটি মেসির—২৪ বছর ২৮৪ দিন বয়সে। প্রশ্ন হলো, কাকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হলেন এমবাপ্পে?

ঠিকই ধরেছেন। এখানেও সেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই! ২৮ বছর ২ মাস ৭ দিন বয়সে ৫০ গোল করে এত দিন দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠের জায়গাটা দখলে রেখেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো। এমবাপ্পে উঠে আসায় এখন তিনে নেমে গেলেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি।

এমবাপ্পে সম্ভবত সবকিছুই জানেন। সে জন্যই সম্ভবত নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলের স্টোরিতে রোনালদোর ছবি পোস্ট করেছেন। ম্যাচের চারটি ছবি পোস্টের পর পঞ্চমটিতে রোনালদোর দুই হাতের আঙুল দিয়ে কিছু একটা বোঝানোর ছবি পোস্ট করেন এমবাপ্পে। সেই ছবির নিচে ডান দিকে মুখ বন্ধ রাখার ইমোজি। কী কারণে এই ছবি পোস্ট করা—তা জানা যায়নি। তবে আন্দাজ করে নিতে তো দোষ নেই!

আরও পড়ুন

রোনালদো এমনিতেই এমবাপ্পের শৈশবের আদর্শ, সেটা সবারই জানা। এমবাপ্পে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যাওয়ার পর তাঁকে শুভকামনাও জানিয়েছিলেন রিয়াল কিংবদন্তি। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে রিও ফার্ডিনান্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমবাপ্পেকে নিয়ে রোনালদো বলেছিলেন, ‘দেখা যাক, সে চাপটা সামলাতে পারে কি না। কারণ, রিয়াল মাদ্রিদ পিএসজি নয়। এমবাপ্পে এখন সেখানে, জানতে ইচ্ছা হতেই পারে, তাকে নিয়ে রিয়াল কি আরও ভালো হবে? আমরা জানি না। অপেক্ষা করতে হবে।’

রোনালদোর এই ছবিটি নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে পোস্ট করেন এমবাপ্পে
এমবাপ্পের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

রোনালদোর এমন বলার কারণও ছিল। গত জুনে রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর এমবাপ্পে ঠিক প্রত্যাশা মেটাতে পারছিলেন না ক্লাবটির। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে ২২ ম্যাচে তাঁর ১২টি গোল হলেও লা লিগায় অ্যাথলেটিক বিলবাও ও চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেন। কাল রাতে গোল করে পেনাল্টি মিস নিয়ে সমালোচনা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে এমবাপ্পে রোনালদোকেও সম্ভবত ইশারা করেছেন মুখ বন্ধ রাখতে!