সোহাগ-কাণ্ডে সালাউদ্দিন-সালামদের দায় দেখছেন সাবেকেরাও
গোলাম সারোয়ার টিপুর কাছে বেশ অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারটা।
একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটছে ফুটবলে, অথচ কেউই এর দায় নিতে চাচ্ছেন না। বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। এই যে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুর্নীতির দায়ে ফুটবল থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করল, তারপরেও বাফুফে কর্তারা বড় গলায় বলছেন, কোনো দুর্নীতি হয়নি। সাবেক ফুটবলার ও জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু এ নিয়ে নিজের ক্ষোভ আড়াল করেননি। প্রথম আলোকে আজ সারোয়ার বলেছেন, ‘বাফুফের সাধারণ সম্পাদককে ফিফা দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ করার পরও ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তাদের মুখে বড় বড় বুলি শুনতে পাচ্ছি। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অন্ধকারে রেখে বেতনভুক্ত কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি করে যেতে পারে না।’
কিছুদিন আগেই সাফজয়ী মেয়েদের দলকে ‘টাকার অভাবে’ অলিম্পিক বাছাইপর্বে খেলতে পাঠাতে পারেনি বাফুফে। এ নিয়ে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে এখনো ভীষণ ক্ষোভ। গোলাম সারোয়ার টিপু মনে করেন বাফুফের দায়িত্বহীনতার বলি হয়েছে নারী ফুটবলাররা, ‘মেয়েগুলোকে বাফুফে রীতিমতো বঞ্চিত করল। এটা বিরাট অন্যায়। পরেরবার এই দল থাকবে না, মেয়েদের ফর্মও কেমন থাকে বলা যায় না। আমি তো মনে করি, ওই ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। দেশের ফুটবলকে বাঁচাতে সালাম-সালাউদ্দিনের পদত্যাগ ছাড়া আমি আর কোনো বিকল্প দেখি না।’
আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের মালিক আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নুও ক্ষুব্ধ। প্রথম আলোকে তিনিও বলেছেন, ‘ফুটবলকে তাঁরা এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হবে। গত ১৫ বছর দেশের ফুটবলকে তাঁরা শুধু ঠকিয়েই গেছেন।’
আশরাফউদ্দিনও মনে করেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবু নাঈম সোহাগকে দুর্নীতির জন্য এককভাবে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই। এর দায় নিতে হবে বাফুফের অন্য শীর্ষ কর্তাদেরও, ‘কাজী সালাউদ্দিন ও সালাম মুর্শেদীদের পাশ কাটিয়ে সাধারণ সম্পাদক দুর্নীতি করবেন, আর তাঁরা কিছু জানবেন না—এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে ফিফা অনেক দিন ধরেই তদন্ত করছিল। এর মধ্যে সোহাগ জুরিখে গিয়ে শুনানিতেও অংশ নিয়েছেন। বাফুফে সভাপতিসহ শীর্ষ কর্তারা সবই জানতেন।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনির আশঙ্কা, সাধারণ সম্পাদককে ফিফা দুর্নীতিবাজ হিসেবে নিষিদ্ধ করায় দেশের ফুটবলের জন্য পৃষ্ঠপোষক পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে, ‘সালাউদ্দিন সাহেব অর্থসংকটের কথা বলেন, কিন্তু তাঁকে পৃষ্ঠপোষকেরা কেন টাকা দেবে! তিনি ফুটবলকে তো সর্বনাশের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। সোহাগের এই কাহিনির পর পৃষ্ঠপোষকেরা আরও হাত গুটিয়ে নেবে। ফুটবলকে এই জায়গায় নামানোর জন্য দেশবাসীর কাছে সালাউদ্দিন সাহেবদের জবাবদিহি করতেই হবে।’
বাফুফের অযোগ্যতার কারণেই গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বনাশ হয়েছে বলে মনে করেন ইমতিয়াজ, ‘ভাবতে কষ্ট হয়, বিগত ১৫ বছরে সালাউদ্দিন সাহেবদের ফেডারেশন দেশের ফুটবলকে কোথায় নামিয়েছে! এই যে মেয়েদের সাফ শিরোপাজয়ী দলটা অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে যেতে পারল না, ছেলেদের জাতীয় দলের অবস্থা খারাপ, ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে কারও কোনো আগ্রহ নেই—এসব বাফুফের অযোগ্যতার জন্যই।’
কিছুদিন আগেই বাফুফে নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক অধিনায়ক আরিফ হোসেন মুন। গত তিনটি মেয়াদে তিনি ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। বাফুফের অনেক কিছুই ভেতর থেকে দেখেছেন। দুর্নীতির দায়ে সাধারণ সম্পাদকের ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়াতে তিনি তাই আশ্চর্য হচ্ছেন না, ‘আমি তো মনে করি, এটা হওয়ারই ছিল। ভবিষ্যতে আরও খারাপ কিছুও হতে পারে। আমার প্রশ্ন, ফিফা যে এত দিন ধরে তদন্ত করল, তার মধ্যেও আবু নাঈম সোহাগকে কেন স্বপদে বহাল রাখা হলো? এ ঘটনায় বাফুফে দায় এড়াতে পারে না।’
নিজের বিবেকের তাড়না থেকেই বাফুফে থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, এমন দাবি আরিফের ‘একজন সাবেক ফুটবলার হিসেবে দেশের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু কিছুই করতে পারছিলাম না। সেই হতাশা থেকে গত মাসে বাফুফে থেকে সরে যাই। আমি দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেছি, একসময় জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলাম। কিন্তু ফুটবলার হিসেবে যে গর্বটা আমার ছিল, বাফুফেতে গিয়ে সেটি ভূলুণ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। এই বাফুফেতে কারও পক্ষেই ঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।’